দুদকের মামলা : অব্যাহতি পেতে হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের আবেদন

আগের সংবাদ

‘কাগুজে’ বিদেশি বিনিয়োগ : সাড়া মেলে নিবন্ধনের এক-তৃতীয়াংশের,হ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সুশাসনের অভাব

পরের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর ২৪ নির্দেশনা : জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে হবে ডিসিদের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের ২৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে যাওয়ায় দায়িত্ব বেড়ে গেছে। সরকারি সেবা নিতে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। অনুষ্ঠানের মূলপ্রান্ত ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন এবং জেলা প্রশাসকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান। অনুষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের মাধ্যমে সারাদেশে সরকারের সব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনগণের কল্যাণ ও কাজ নিশ্চিত করতে সেবা সম্পর্কিত একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নিজেকে জনগণের খাদেম হিসেবে অর্থাৎ সেবক হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমিও তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে জনগণের একজন সেবক মনে করি। ক্ষমতায় আসা, প্রধানমন্ত্রী হওয়া মানে জনগণের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পাওয়া এবং যেই লক্ষ্য স্থির করেছি সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন। সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকলে আপনাদের পক্ষে যথাযথ দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। দেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প নেয়ার সময় তা যথাযথভাবে এবং

প্রয়োজনীয়তার সাপেক্ষে নেয়া, সেগুলো বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কিনা বা কোনো দুর্নীতি হচ্ছে কিনা বা মানসম্মত হচ্ছে কিনা- তা নজরদারির ব্যবস্থা ডিসিদেরই করতে হবে। সেই সঙ্গে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ সব জায়গায় নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন। তাদের কিছু প্রতিশ্রæতি থাকে জনগণের কাছে। এই প্রতিশ্রæতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে আমি অবশ্যই এটা বলব, প্রতিশ্রæতিগুলো আসলে যথাযথ কিনা সেটা বিবেচনা করে সেই ধরনের পরিকল্পনা নেয়া দরকার।
এ সময় সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের ২৪ দফা নির্দেশনা দেন। সেগুলো হলো- ১. করোনা ভাইরাসজনিত সংকট মোকাবিলায় সরকারের জারি করা সব নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। ২. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহীত উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রমসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং এর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ৪. সরকারি অফিসগুলোতে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘেœ যথাযথ সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবাপ্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত। ৫. এসডিজির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে। ৬. গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থায় অনলাইনে বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। ৮. কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো যেন কার্যকর থাকে, প্রতিনিয়ত তার তত্ত্বাবধান করতে হবে এবং নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। ৯. শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তাদের জন্য প্রত্যেক এলাকায় সৃজনশীলতার চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। ১১. পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে। ১২. জনসাধারণের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব প্রভৃতি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে। ১৩. বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। ১৪. মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করতে হবে। ১৫. নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ রোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। ১৬. বাজারে পণ্যের সরবরাহ মসৃণ রাখতে, কৃত্রিম সংকট রোধ ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার তদারকি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ১৭. সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে; পরিকল্পিত নগরায়ন ও বনায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ১৮. পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। ১৯. জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার ও বিপণনে উদ্যোগী হতে হবে। ২০. জেলার সব সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম যথাযথভাবে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে ব্রতী হতে হবে। ২১. জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি অর্থাৎ সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা যারা পৌরসভার মেয়র এবং যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছে তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে যথাযথ পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে কিনা বা তার বাস্তবায়নও যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা সেগুলো সমন্বয় করতে হবে। কারণ উন্নয়ন প্রকল্প যত্রতত্র যেন না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। ২২. সমাজের অনগ্রসর শ্রেণি বেদে, জেলে, কৃষক, হিজড়া, হরিজন, পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ যারা একেবারে সমাজের অনগ্রসর শ্রেণি, তাদের সার্বিক উন্নয়ন, তাদের বাসস্থান এবং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে। ২৩. মুক্তিযুদ্ধে যেসব অঞ্চলে গণহত্যা হয়েছে, সেখানে সেই পরিবারদের বর্তমান অবস্থা জানা এবং তাদের যথাযথ সম্মানজনক জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ২৪. গণকবর সংরক্ষণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ইতিহাস জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়