দুদকের মামলা : অব্যাহতি পেতে হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের আবেদন

আগের সংবাদ

‘কাগুজে’ বিদেশি বিনিয়োগ : সাড়া মেলে নিবন্ধনের এক-তৃতীয়াংশের,হ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সুশাসনের অভাব

পরের সংবাদ

‘ডেল্টা’ না ‘ওমিক্রন’ : সংক্রমণের ধরন নিয়ে বিভ্রান্তি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ। পরিস্থিতি যে উদ্বেগের তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তবে সংক্রমণ বাড়ার পেছনে ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রন নাকি অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টার আধিক্য বেশি তা নিয়ে একেক সময় সামনে আসছে একেক তথ্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে শনাক্ত হওয়া ২০ শতাংশ রোগীই বর্তমানে ওমিক্রনে আক্রান্ত। আর বাকি ৮০ শতাংশ ডেল্টা বা অন্যান্য ধরনে সংক্রমিত। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং জিনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রকল্পের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গবেষণার এই তথ্য উপস্থাপন করেন। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে এ তথ্য পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। তবে গবেষকরা দেশে ওমিক্রন গাণিতিক হারে বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন।
আর ১৭ জানুয়ারি সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ঢাকায় যে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে সেগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে দেখা গেছে, এখন ওমিক্রনে সংক্রমিতের সংখ্যা ৬৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেটা আগে ১৩ শতাংশ ছিল। গত ১০ দিনের মধ্যেই এই তথ্য মিলেছে। ঢাকার বাইরেও একই হার হবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এর আগে ১২ জানুয়ারি মন্ত্রী বলেছিলেন, করোনা আক্রান্তদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। দেশে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) শুরু হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
১৭ জানুয়ারি ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম বলেছেন, আমাদের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ও জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে নিয়োজিত রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, এখন পর্যন্ত সংক্রমণ হওয়া ব্যক্তিদের ওপরে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ হারই বেশি। ওমিক্রনের সংক্রমণও বাড়ছে। তবে সেটি ডেল্টার মতো নয়। ঢাকায় ওমিক্রন কিছু বাড়ছে। কিন্তু আমাদের অন্যান্য শহরগুলোতে ডেল্টার প্রাদুর্ভাব বেশি।
১৬ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেন, অনেকেই ধারণা করছেন ওমিক্রনের কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ দিয়ে নিশ্চিত তথ্য নয়। ধরে নিতে হবে দেশে এখনো ডেল্টা ধরনই প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। নতুন করে ঘটছে ওমিক্রনের সংক্রমণ। সারা বিশ্বে যেমন ডেল্টাকে সরিয়ে ওমিক্রন জায়গা দখল করেছে, ধীরে ধীরে হয়তো বাংলাদেশেও এমনটি হবে। আর ১২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেক পরিচালক (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেছিলেন, দেশে ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেল্টা ভাইরাস-দুটোই কিন্তু অবস্থান করছে। সংক্রমণ হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে ধরে নিতে হবে নতুন যে ধরন তারই সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
জার্মানির গেøাবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জার (জিআইএসএআইডি) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করে দেশে এ পর্যন্ত (গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত) মোট ৫৫ জনের ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ঢাকার বাসাবো, বনানী, মহাখালী, চাঁনখারপুল ও উত্তরায় ওমিক্রনে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। ঢাকার বাইরে যশোরেও ওমিক্রনে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে।
আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ওমিক্রনে সংক্রমিতের সংখ্যা আরো বেশি। জিনোম সিকোয়েন্সিং করার সক্ষমতা আমাদের কম। আমরা ১০০ জনের মধ্যে ১০ জনের শনাক্ত করতে পারছি। সবার ক্ষেত্রে জিনোম সিকোয়েন্সিং হয় না বলে সঠিক সংখ্যাও বলা সম্ভব না। ইতোমধ্যে এই ধরনটি সামাজিক সংক্রমণের রূপ ধারণ করেছে বলেও মনে করছেন তারা।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে ওমিক্রন ছেয়ে গেছে আর ঢাকার বাইরে ডেল্টার আধিক্য বেশি। এটা ঠিক আছে। গত সপ্তাহ থেকেই ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আমরা গণসংক্রমণ পর্যায়ে ঢুকে গেছি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ২৪টি নমুনার মধ্যে ৬৭ শতাংশের সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টার এবং ৩০ শতাংশ নমুনায় ওমিক্রনের উপস্থিতি মিলেছে। হাসপাতালের এসব নমুনার সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে বিএসএমএমইউর জিনোম সিকোয়েন্সিং ল্যাবে। এ প্রসঙ্গে ঢামেক হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু সাংবাদিকদের জানান, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢামেক হাসপাতালের ৯৮ শতাংশ নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টার আধিক্য ছিল। সম্প্রতি নমুনার কার্ভগুলো ডেল্টার তুলনায় ভিন্ন। ওমিক্রনে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে।
বিএসএমএমইউর গবেষণায় দেখা গেছে, ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ওমিক্রনে আক্রান্তরা ২ ডোজ টিকা দেয়া ছিল। এমনকি গবেষণায় তৃতীয়বারের মতো করোনা সংক্রমিত হয়েছেন এমন রোগীও পাওয়া গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়