দুদকের মামলা : অব্যাহতি পেতে হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের আবেদন

আগের সংবাদ

‘কাগুজে’ বিদেশি বিনিয়োগ : সাড়া মেলে নিবন্ধনের এক-তৃতীয়াংশের,হ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সুশাসনের অভাব

পরের সংবাদ

উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকি করবেন ডিসিরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জেলা পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কমিটি ছাড়াই আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তদারকি চালিয়ে নিতে ডিসিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। দিনের প্রথম অধিবেশন বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পর জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বৈঠকে অংশ নেন তারা। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ডিসিরা চেয়েছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন জেলা পর্যায়ে কমিটি করা হয়। আমরা বলেছি, কমিটির প্রয়োজন নেই। এলাকার ভেতরে কাজ দেখার অধিকার জেলা প্রশাসকদের আছে। আমরা আপনাদের সঙ্গে ঘন ঘন যোগাযোগ করি, চিঠি দিই। সেগুলো অনুযায়ী আপনারা কাজ করবেন। আর কিছু প্রয়োজন হলে আমরা তো আছি। তারা দেখতে যাবেন, পর্যবেক্ষণ করবেন, সেটা আরো বেশি করে করার জন্য ডিসিদের অনুরোধ করেছি।
তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনেই জেলা প্রশাসকদের উন্নয়ন প্রকল্প দেখভালের দায়িত্ব দেয়া আছে। আমি বলেছি, বর্তমান বিধান অনুযায়ী, জেলা প্রশাসকরা তাদের এলাকায় যেসব প্রকল্প আছে সেগুলো দেখতে পারেন। দেখা মানে কিন্তু ইন্সপেকশন নয়, ইন্সপেকশন শব্দটা ভয়ংকর। পরিদর্শন অর্থে বলেছি। যাওয়া-আসা খোঁজ খবর নেয়া। সেটাকে আমরা আন্ডারলাইন করেছি।
সরকারি প্রকল্পগুলোর জন্য ভূমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসকদের

সহায়তা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ডিসিদের সহায়তা আইনগতভাবেই প্রয়োজন। সেটাকে আমরা হাইলাইট করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক দেরি হয়, তার বড় একটা কারণ ভূমি অধিগ্রহণ। কিছু আইনগত ব্যাপারও আছে। এটাকে আরো দ্রুত করতে তাদের সহায়তা চেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর আগের একটি নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ বা আইএমইডির কার্যালয় চালুর সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের জানানো হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে আইএমইডির কার্যালয় করার ব্যাপারে আমাদের সরকারপ্রধানের একটা নির্বাহী আদেশ আছে। আইএমইডির স্থাপনা যেন মাঠপর্যায়ে তৈরি করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে আমরা অফিস করব। সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিভাগীয় প্রধানের সহায়তা চেয়েছি। আইএমইডিকে ছড়িয়ে দেয়ার প্ল্যান আছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, আলোচনার সারমর্ম হচ্ছে যে, মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করে তাদের একটা গুরুত্ব আছে। তাদের পরামর্শগুলো যেন বিবেচনায় রাখা হয় এই বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। যেসব প্রকল্পে তাদের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন তা যেন থাকে। বড় প্রকল্পগুলো একাধিক জেলাব্যাপীও হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকদের নিয়ে কমিটি করে দেয়া কঠিন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র এবং কাট্টলী মৌজায় বিশেষ স্মৃতি স্তম্ভ করার পরিকল্পনার কথা ডিসিদের জানানো হয়েছে। তাদের বলেছি, কালুরঘাটে যেহেতু চার ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে, জেলা প্রশাসককে বলেছি, জায়গা পাওয়া গেলে স্থাপনা করব। আরেকটি স্থাপনা করা হবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাছে কাট্টলী মৌজায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে দুটি প্রস্তাব রেখেছি। একটি ভূমির সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন আছে, সেটার এলোকেশন অব বিজনেস পরিবর্তন করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনলে ভালো হয়। কারণ, সাব রেজিস্ট্রির কার্যক্রম ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এলে কাজে গতি আসবে। অপর প্রস্তাবটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে। সেটা হলো ছোট ও ক্ষুদ্র দোকানগুলোতে যেন এনবিআরের পক্ষ থেকে ভ্যাট মেশিন বা ইএফটি মেশিন দেয়া হয়। প্রয়োজনে ওইসব দোকান থেকে কিস্তিতে টাকা ফেরত নেয়া যায়। এই মেশিন যদি সব দোকানদারদের দেয়া হয়, তাহলে ক্রেতারা যে ভ্যাট দেন, সেটা সরকারের কোষাগারে জমা হবে। এতে সরকারের আয় বাড়বে।
এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডিসিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমেদ কায়কাউস। তিনি বলেন, ভূমিহীনদের জন্য সরকারের চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বহুতল ভবন নির্মাণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। তবে কেন তা করা হবে না, তা ব্যাখ্যা করে বোঝানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাঠামো নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। ডিসিদের পক্ষে একটি প্রস্তাব ছিল, বহুতল ভবন করা যায় কিনা। বহুতল ভবন করলে সেটি স্থায়ী হবে, আপনারা সবাই বুঝতে পারেন। কেন করি না সেটা হচ্ছে যে, একটা বহুতল ভবন করতে যে টাকা খরচ হবে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর যে প্রত্যাশা বা নির্দেশনা, বাংলাদেশে মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। সেক্ষেত্রে কিন্তু ওটাকে কাস্টমাইজ করার জন্য এই প্রস্তাবটা বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। বহুতল ভবন করা মানে হচ্ছে এখানে ৫০ বছর থাকা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্যসচিব বলেন, প্রকল্পে আট জায়গায় দুর্নীতি পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া কোথায় দুর্নীতির নজির নেই, এটা আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি। এক লাখ ৩০ হাজার বাড়ির ভেতরে ৩০টি বাড়িরই হয়েছে এবং আট জায়গায় কর্তব্যে অবহেলা পেয়েছি। পয়সা মারার জন্য দুর্নীতি করেছে তেমন কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। আমি খুব গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের সহকর্মীরা এটি আত্মার সঙ্গে এবং এটাতে আত্মস্থ হয়ে কাজটা করেছেন। সেজন্য আমার জুনিয়র যারা কর্মকর্তা আছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এটার জন্য আমি কিছুটা আবেগ আপ্লæত।
এদিকে ডিসিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশটা পরিচালিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। রাজনীতিতে নীতি তৈরি করা, আইন তৈরি করা, জনগণের দাবি আদায় করা, প্রশাসনিক কর্মকতাদের অধিকার আদায় করা, সবার জন্যই রাজনীতি প্রয়োজন। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে প্রশাসনের কোনো দ্ব›দ্ব নেই। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগতভাবে সমস্যা তৈরি হলে এটাকে অবশ্যই রাষ্ট্র হ্যান্ডেল করবে। এই ‘কমিটমেন্ট’ রাষ্ট্রের আছে এবং আমরাও অঙ্গীকারাবদ্ধ।
ইউএনওর সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্ব›েদ্বর বিষয়ে তিনি বলেন, সব জায়গায় একই রকম সমস্যা হয়- এটা বলা যাবে না। অনেক জায়গায় ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান একসঙ্গে অনেক ভালোভাবে কাজ করছেন। আবার কোথাও সমস্যা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে যেখানে যেখানে জটিলতা আছে, সেখানে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল। আর আমি নিজেও এটাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে। এখানে কোনো বিতর্ক করার সুযোগ নেই। জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পেশাজীবীরা, সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকরা অত্যন্ত আন্তরিক বলে পরিলক্ষিত হয়েছে।
তাজুল ইসলাম আরো বলেন, বৈঠকে জেলা প্রশাসকরা তাদের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরেছেন, কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভাকে শক্তিশালী করতে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সব জায়গায় সমভাবে আয় বর্ধনের ব্যবস্থা নেই। কিছু কিছু জায়গায় কম হয় সেখানে যাতে ‘সাবসিডি’ দেয়া যায়, সে প্রসঙ্গ এসেছে। এগুলো যৌক্তিকতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য বলা হয়েছে। মানুষের আয় বাড়লে তাতে সরকারের আয়ও বাড়বে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় ও সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আয় বাড়াতে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কথায় এসেছে তাদের কিছু এমপ্লয়ি লাগবে। ইউনিয়ন পরিষদে আরো লোকবল লাগবে, এটি করতে গেলে তাদের আয় বাড়াতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়