আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার : আরসাপ্রধানের ভাই শাহ আলী আটক

আগের সংবাদ

বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ৩ মাস ধরে বন্ধ ড্রেজার : নদী পুনরুদ্ধার কাজে বাধা

পরের সংবাদ

বিক্ষোভে উত্তাল শাবি : রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা > উপাচার্য অবাঞ্ছিত, সব ভবনে তালা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : চলমান আন্দোলনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) উপাচার্যের কার্যালয়, প্রশাসনিক ভবন ও প্রত্যেকটি একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে মিছিল নিয়ে এসে বেলা আড়াইটার দিকে ভিসির কার্যালয়সহ বিভিন্ন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপাচার্যের পদত্যাগে দাবিতে তাদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, যেহেতু আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রশাসনিক কার্যক্রমও চলতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে কোনো কার্যক্রম চলতে পারে না। তাই উপাচার্য ভবনসহ সব ভবনে আমরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। কেবল ভর্তি কার্যক্রম চলমান থাকায় রেজিস্ট্রার ভবনে তালা দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, যেই উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে সেই উপাচার্য আমরা চাই না। এই উপাচার্যকে আমরা ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যাতে নতুন শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগ দেন তিনি। গতকাল সকাল থেকে উপাচার্যসহ প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন চলছিল দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরো বেগবান হয়। দলে দলে এসে আন্দোলনে একাত্মতা জানান বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে পুলিশ থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বহিরাগতরা নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘রবিবার রাত থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা ঢুকে পড়েছে বলে আমার কাছে তথ্য আছে। তাদের

ইন্ধনে এখন আন্দোলন চলছে। বহিরাগতরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে। শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো। তারা প্রশাসনের প্রতি আস্থাশীল। আজকের আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তেমন সম্পৃক্ততা নেই।’ কারো ইন্ধনে বিভ্রান্ত না হয়ে শিক্ষার্থীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। তাদের দাবি মেনে হল প্রভোস্টও পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের আরো যে দাবিগুলো রয়েছে, সেগুলো আমি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।’
তবে ভিসির এমন দাবি নাকচ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ঘটনা ধামাচাপা দিতে মিথ্যাচার করছেন উপাচার্য। ক্যাম্পাসে পুলিশ ছাড়া বহিরাগত কেউ নেই। উপাচার্যের অভিযোগের বিষয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থী সৌরভ চাকমা বলেন, ‘রবিবারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে উপাচার্য এমন কথা বলছেন। তারা অভিযোগ করছে, বহিরাগতরা এসে গুলি চালিয়েছে। কিন্তু পুলিশ ছাড়া কেউ গুলি চালায়নি। পুলিশের গুলিতেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। এখানে পুলিশ ছাড়া কেউ বহিরাগত নেই। পুলিশকে ডেকে এনেছেন উপাচার্য।’
বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিনের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। রবিবার আন্দোলনের চতুর্থ দিনে এসে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। রবিবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে ধাওয়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে। এর জেরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। এতে রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস। রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেন উপাচার্য। সেই সঙ্গে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাশেদ তালুকদারকে।
আন্দোলনের মুখে গত রবিবার রাতেই পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানানো হয়, জাফরিন আহমেদ অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন এবং হলের নতুন প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়