আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার : আরসাপ্রধানের ভাই শাহ আলী আটক

আগের সংবাদ

বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ৩ মাস ধরে বন্ধ ড্রেজার : নদী পুনরুদ্ধার কাজে বাধা

পরের সংবাদ

নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ : সিআরবি এলাকা অবরুদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ও চিরসবুজে ঘেরা মনোমুগ্ধকর চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এলাকা অবরুদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। শতবর্ষী গাছ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের পাশাপাশি এখন সিআরবির তিনটি প্রবেশ পথে গেইট নির্মাণ করে যানবাহন ও সর্বসাধারণের চলাচল বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে নগরীর সিআরবি এলাকায় তিন দিকের প্রবেশপথের মূল সড়কে গেট নির্মাণ করছে রেল কর্তৃপক্ষ। কদমতলী পেট্রল পাম্পের সামনে দিয়ে সিআরবিতে প্রবেশপথে গত কয়েকদিন ধরে গেট নির্মাণের কাজ চলছে। সড়কের দুই পাশের ফুটপাত ঘেঁষে ইতোমধ্যে দুটি পিলার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। শ্রমিকরা পিলারের পাশে মাটি ভরাটের কাজ করছেন। তবে টাইগারপাস হয়ে সিআরবিতে প্রবেশপথ এবং স্টেডিয়ামের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে প্রবেশপথে এখনো নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। খুব শিগগিরই এই দুটি প্রবেশ পথে গেইট নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শতবর্ষী গাছ কেটে সিআরবি এলাকায় বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা বন্ধে নগরবাসী যখন প্রতিবাদেমুখর ঠিক তখনি অনেকটা লুকোচুরি করেই সিআরবি প্রবেশের সব পথে গেইট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। নগরবাসীর শ্বাস নেয়ার অন্যতম উন্মুক্ত স্থান হেরিটেজ ঘোষিত সিআরবি এলাকাটি অবরুদ্ধ করার এই প্রক্রিয়ায় নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সিআরবির মতো সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক উন্মুক্ত স্থানে সর্বসাধারণের প্রবেশপথে গেট নির্মাণের খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের সংস্কৃতিসেবী, পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের অনেকের মতে, চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি নগরবাসীর উন্মুক্ত বিনোদনের স্থান। এখানে উন্মুক্ত মঞ্চে পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে বছর জুড়ে কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম নগরবাসীর এমন একটি জনপ্রিয় উন্মুক্ত স্থানে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সংকুচিত করে দেয়া কোনো অবস্থাতেই সমীচীন হবে না।
সিআরবির প্রবেশপথে গেইট নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিদিন এ সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করে। সিআরবির সড়কটি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সিআরবি এলাকায় প্রবেশপথের তিন দিকে গেট নির্মাণ করছি। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হতেও পারে। গেট নির্মাণ করা হলেও এখনই যানবাহন কিংবা সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হচ্ছে না। ভবিষ্যতে যদি কখনো প্রয়োজন পড়ে তখন হয়তো সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত করার বিষয়টি ভাবা হতে পারে।
সিআরবির প্রবেশপথে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গেট নির্মাণ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সড়কও সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে। আর সিআরবি এলাকা কোনো ক্যান্টনমেন্টও নয়। নগরবাসীর সাংস্কৃতিক ও বিনোদনের এমন একটি স্থানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার কোনোভাবেই সীমিত করতে দেয়া হবে না।’
সিআরবি রক্ষার আন্দোলনের অন্যতম নেতা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামবাসী সবকিছুর বিনিময়ে হলেও সিআরবি এলাকায় এমন কর্মকাণ্ড রুখে দেবে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় সংস্কৃতি সংগঠক আবৃত্তিকার প্রণব চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, নগরবাসী শ্বাস নেয়ার অন্যতম উন্মক্ত স্থান, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান স্থান সিআরবিকে অবরুদ্ধ করার জন্যই এই অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতেই এই অপচেষ্টা। এই ধরনের কর্মকাণ্ড মৌলবাদী অপশক্তির। রেলওয়ের কাছ থেকে এই ধরনের কাজ আশা করা যায় না। সিআরবি ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধের নগরবাসীর গণআন্দোলনকে নস্যাৎ করতেই এই গেট নির্মাণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়