আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার : আরসাপ্রধানের ভাই শাহ আলী আটক

আগের সংবাদ

বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ৩ মাস ধরে বন্ধ ড্রেজার : নদী পুনরুদ্ধার কাজে বাধা

পরের সংবাদ

গোবিন্দগঞ্জের বড়দহ সেতুতে বাড়তি টোল আদায়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা থেকে : গাইবান্ধা-নাকাইহাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের বড়দহ সেতুতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেল টোলের আওতামুক্ত হলেও এসব ছোট যানবাহন থেকেও টাকা নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে টোল আদায়কারীদের সঙ্গে যানবাহন চালকদের প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। চালককে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।
গাইবান্ধার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, কোনো সেতুর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটারের বেশি হলে সেটি টোলের আওতায় পড়ে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বড়দহ সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৫৩ মিটার। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল আদায়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইজারা পান শহিদুল ইসলাম। তবে তার কাছ থেকে টোল আদায়ের দায়িত্ব নেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি ও নবনির্বাচিত নাকাই ইউপি চেয়ারম্যান সাজু খন্দকার।
সওজ সূত্র জানায়, নির্ধারিত টোল অনুযায়ী প্রতিবার পারাপারের জন্য বড় বাস ৪৫, মিনিবাস-কোস্টার ২৫, মাইক্রোবাস ২০, মিনি ট্যাক-ট্রলি ৪০, ট্রেইলার (ট্রলি) ১১৫, ভারী ট্রাক ১০০, মধ্যম ট্রাক ৫০, পাওয়ার টিলার-ট্রাক্টর ৩০, পিকআপ, কনভারশন করা জিপ, বেকার-ক্রেন ২০, সিডান কার ১৫ টাকা আদায় করার কথা। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ট্রেইলার (ট্রলি) থেকে ১৩০-১৪০, ভারী ট্রাক ১২০-১৫০, মধ্যম ট্রাক ৭০-৮০, বড় বাস ৭৫-৮০, মিনি ট্যাক-ট্রলি ৫০-৬০, পাওয়ার টিলার-ট্রাক্টর ৪০-৫০, মিনিবাস-কোস্টার ৩৫-৪৫, মাইক্রোবাস ৩০-৩৫, পিকআপ, কনভারশ করা জিপ, বেকার-ক্রেন ৩০-৪০, সিডান কার ২৫-৩০ টাকা।
গোবিন্দগঞ্জের নাকাই ও হরিরামপুর ইউনিয়নের সীমানায় বড়দহ সেতুতে সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর পূর্বপাশে দাঁড়ানো তিনজন টোল আদায়কারী। তারা যানবাহন আসামাত্র বাঁশ দিয়ে আটকে টোল আদায় করছেন। এ সময় কয়েকজন চালকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় করেন। সেতুতে টোলের তালিকা টানানো হয়নি। ফলে বহিরাগত চালকদের কাছ থেকে মনগড়া টোল নেয়া হচ্ছে। এমনকি টোলের আওতামুক্ত মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান থেকেও টাকা নেয়া হচ্ছে।
নাকাই ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আজাদুল ইসলাম বলেন, সকাল বেলা ভাড়া হয় না। সে সময় সেতু পারাপার হতেও টোল দিতে হচ্ছে। টাকা না দিলে আদায়কারীরা গালিগালাজ করেন।
একই গ্রামের অটোরিকশা চালক খাজা মিয়া বলেন, টোলের আওতামুক্ত হলেও প্রতিবার অটোরিকশা পারাপারের জন্য পাঁচ টাকা নেয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলার খোলাহাটি গ্রামের চাকরিজীবী শাহজাহান মিয়া বলেন, মোটরসাইকেল পারাপারে টোল নেয়ার কথা নয়। প্রতিদিন শত শত মোটরসাইকেল পারাপারে জোরপূর্বক পাঁচ টাকা নেয়া হচ্ছে।
গোবিন্দগঞ্জের হরিরামপুর গ্রামের ট্রাক্টর চালক মিল্লাত হোসাইন বলেন, ট্রাক্টর পারাপারের জন্য সরকার ৩০ টাকা টোল নির্ধারণ করেছে। অথচ নেয়া হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। প্রতিবাদ করলে আদায়কারীরা নিরীহ চালককে গালিগালাজ ও মারধর করেন।
বগুড়া জেলার ট্রাকচালক ওয়াহেদ মিয়া বলেন, বগুড়া থেকে নাকাইহাট হয়ে গাইবান্ধার দূরত্ব কম। তাই এই রুটে যাতায়াত করে থাকি। ১০০ টাকা টোল নির্ধারিত হলেও ১২০-১৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এদিকে এই সেতুতে টোল আদায় বন্ধে স্থানীয়ভাবে আন্দোলন গড়ে ওঠে। গঠিত হয় বড়দহ সেতু টোল মওকুফ বাস্তবায়ন কমিটি। কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, সভা-সমাবেশ হয়। তবু টোল আদায় বন্ধ হয়নি।
ওই কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১৯৯৭ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৪৮ মিটার। কিন্তু সওজের কাজের দীর্ঘসূত্রতার করণে নদী ভেঙে সেতুর দৈর্ঘ্য ২৫৩ মিটারে দাঁড়িয়েছে। ১৮ বছরে সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে দরিদ্র মানুষকে আইনের ফাঁকে পড়ে টোল দিতে হচ্ছে। তাও ইচ্ছামতো টোল নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই চালকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ এমনকি মারধর করা হচ্ছে। অথচ দরিদ্র এলাকার মানুষের কাছে টোল না নেয়ার শর্তে আন্দোলন শিথিল করে টোল আদায়ের সুযোগ দেয়া হয়। সেই শর্ত এখন মানা হচ্ছে না। সাজু খন্দকার প্রভাব খাটিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন।
বড়দহ সেতুর টোল আদায়কারী শফিকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার যেভাবে আদায় করতে বলেন, যা নির্দেশ দেন, আমরা তাই করে থাকি। তবে চালকদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এসব বিষয়ে দায়িত্ব নেয়া ঠিকাদার সাজু খন্দকার বলেন, চালকদের মারধরের অভিযোগ সঠিক নয়। সরকার নির্ধারিত হারেই টোল আদায় করা হচ্ছে। তার দাবি, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যানের টোল নেয়া হয় না। টোল আদায়ের দায়িত্ব না পাওয়া তার প্রতিপক্ষ এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
গাইবান্ধা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ আখতার বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়