আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার : আরসাপ্রধানের ভাই শাহ আলী আটক

আগের সংবাদ

বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ৩ মাস ধরে বন্ধ ড্রেজার : নদী পুনরুদ্ধার কাজে বাধা

পরের সংবাদ

এসবিএসি ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ : সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুই মামলা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (এসবিএসি) সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন ও পরিচালক এম মোয়াজ্জেম হোসেনসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রথম মামলায় রাফি মাহি করপোরেশন নামের কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৮ জন ও দ্বিতীয় মামলায় ৬ কোটি ৮ লাখ টাকা আত্মসাতের জন্য ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে দুই মামলায়ই আমজাদ হোসেনকে আসামি করা হয়।
গতকাল সোমবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দুদকের জনসংযোগ দপ্তর।
প্রথম মামলার আট আসামি হলেন- সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন, রাফি-মাহি করপোরেশনের মালিক এ কে এম আসিফ উদ্দিন, ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ শরফুদ্দিন, ফার্স্ট অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রুমন-উল-ইসলাম, এক্সিকিউটিভ অফিসার ইশতিয়াক আহমেদ, মো. তানজির উদ্দিন চৌধুরী ও সিনিয়র তাসরিমা নাহিদ।
দ্বিতীয় মামলার ছয় আসামি হলেন- সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ শরফুদ্দিন, ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. তানজির উদ্দিন চৌধুরী, সিনিয়র অফিসার মো. বুলবুল ইফতেখার আলী, আল-আমিন করপোরেশনের মালিক মো. মাসুদুর রহমান ও জামাল আহমেদ।
প্রথম মামলার এজাহারে সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের বিজয়নগর শাখা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে রাফি মাহি করপোরেশন নামের কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ঋণ অনুমোদনের আগেই এস এম আমজাদ হোসেনসহ অন্য আসামিরা ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ

করে। যা পরবর্তী সময়ে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে তা পাচার করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ভুয়া এসওডি-ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের নির্দেশে অনুমোদন না নিয়েই ৬ কোটি ৮ লাখ টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করে আসামিরা। এখানে আল-আমিন করপোরেশনের নামের কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ঋণগ্রহীতা হিসেবে সাজানো হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২), (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর আমজাদ হোসেনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। ওই মামলায় ভুয়া ভিজিট প্রতিবেদন ও ভুয়া স্টক লট প্রস্তুত করে খুলনা বিল্ডার্স লিমিটেড নামের কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ওই টাকা আত্মসাৎ করে আসামিরা। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ’ আত্মসাতের অভিযোগে এস এম আমজাদ হোসেনের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এর আগেও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ জমা হয় দুদকে।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই আমজাদ হোসেন, ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল ইসলাম ও সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। যদিও জিজ্ঞাসাবাদে অধিকাংশ অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
বিভিন্ন সময়ে দুদকে আসা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আমজাদ হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংকের খুলনা সদর ও কাটাখালী শাখা ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি ও ঋণের আড়ালে নানাবিধ দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতির মাধ্যমে আমানতকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
খুলনা অঞ্চলের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান লকপুর গ্রুপের মালিক এস এম আমজাদ হোসেন। তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- লকপুর ফিশ প্রসেস কোম্পানি লিমিটেড, বাগেরহাট সিফুড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, শম্পা আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, রূপসা ফিশ এন্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, মুন স্টার ফিশ লিমিটেড। এছাড়া খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, খুলনা এগ্রো এক্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্টার্ন পলিমার লিমিটেড, মেট্রো অটো ব্রিকস লিমিটেড, খুলনা বিল্ডার্স লিমিটেডসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ শিল্প গ্রুপে।
২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে আমজাদ হোসেনের নামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে চিঠি দেয় দুদক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এস এম আমজাদ হোসেন, স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ ও মেয়ে তাজরিরের বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়