অধ্যাপক সাইদা হত্যা : গ্রেপ্তার আনারুলের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

আগের সংবাদ

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ : নির্বাচন কমিশন গঠনে ৪ প্রস্তাব

পরের সংবাদ

জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ : জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা এবং ধর্মের নামে কোনো ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী যাতে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে না পারে, সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল রবিবার সংসদে দেয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২০২২ সালের প্রথম ও একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠদশ অধিবেশন শুরু হয়। সংবিধান অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সংসদে তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নীতির কারণে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। আসুন লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল মহান স্বাধীনতা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বের জন্য একটি অনন্য উদাহরণ। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব স¤প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব উৎসবমুখর পরিবেশ ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তথাপি ধর্মের নামে কোনো ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী যাতে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। এ লক্ষ্যে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে দল-মত, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে আপামর জনগণকে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। আবদুল হামিদ বলেন, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সব প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনস্বার্থকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। সরকারি দল ও বিরোধী দলের সব সংসদ সদস্যকে এ মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।

স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন প্রকার বিধিনিষেধ আরোপ ও প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ১৫৬টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এছাড়া করোনা পরীক্ষার জন্য ১৫১টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা খাতে গত অর্থবছরের তুলনায় বাজেট বাড়ানো হয়েছে ১৩ শতাংশ। রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করা গেলেও নতুন ধরন ওমিক্রন যাতে ?আমাদের দেশে ছড়াতে না পারে, সেজন্য সরকারকে সতর্কতা অবলম্বনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, গত দেড় দশকে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকারি ব্যয়ও বেড়ে গেছে। সরকারি অর্থের অপব্যবহার রোধ করে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি সরকারি সব কার্যক্রমে জনগণের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রকে অধিক কার্যকর করতে হবে।
যোগাযোগ খাতে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এমআরটি লাইন ছয়ের নির্মাণকাজ ৭৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং ১০ সেট মেট্রো ট্রেন বাংলাদেশে পৌঁছেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে প্রথম মেট্রোরেল চলাচল শুরু করবে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, যা ২০২২ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ জুন ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে। ১৬টি উড়োজাহাজ সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগাতে হলে আমাদের জনমিতির সুবিধা পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে। এজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানসহ বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানির প্রচেষ্টা আরো জোরদার করতে হবে। বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রশিক্ষণ কারিকুলাম তৈরি, বিদ্যমান কারিকুলাম যুগোপযোগীকরণ এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে সার্টিফায়েড দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা মহামারি শুরুর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা করোনাকালীন হ্রাস পায়। তবে সরকারের বিভিন্ন টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে নানামুখী আর্থসামাজিক ও বিনিয়োগধর্মী প্রকল্প, কর্মসূচি এবং কার্যক্রম নেয়ার ফলে এরই মধ্যে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জিডিপির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির তুলনায় সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা আশাব্যঞ্জক।
রপ্তানি আয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরেই রপ্তানি আয় ১৫ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। প্রবৃদ্ধির এ ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কোম্পানি নিবন্ধন প্রক্রিয়াসহ আমদানি ও রপ্তানি-সংক্রান্ত সব সেবা অটোমেশনের মাধ্যমে সহজীকরণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে ৪৫ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রাজস্ব আহরণ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য ২০২১ সালের একনেকে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৭ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১৩৩টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। আর্থিক খাতে পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করার জন্য সুদের হার একাধিকবার হ্রাস করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হারও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিনিয়োগ আকর্ষণে সময়োপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচি ও উদ্যোগের ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে নিট সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ ছিল ২ হাজার ৫০৭ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, ইপিজেডগুলোয় স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা জাতীয় রপ্তানির প্রায় ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত ইপিজেডের আওতাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৮ জন বাংলাদেশি নাগরিকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী।
তিনি বলেন, ২০২১ সাল ছিল বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের জন্য এক অবিস্মরণীয় বছর। এ বছরেই আমরা উদযাপন করেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। উৎসবের এমন মহামিলন, গণমানুষের এমন সম্মিলন ইতিহাসে কমই দেখা যায়। যদিও করোনা মহামারির কারণে উৎসব পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু শেষ প্রান্তে কোনো বাধাই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়