অধ্যাপক সাইদা হত্যা : গ্রেপ্তার আনারুলের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

আগের সংবাদ

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ : নির্বাচন কমিশন গঠনে ৪ প্রস্তাব

পরের সংবাদ

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং দেশের চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই বিপ্লব অর্থনীতি, সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মানুষের জীবনযাত্রা, আন্তর্জাতিক শ্রম প্রবাহসহ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোকে প্রভাবিত করে। বিশ্বের বড় বড় সম্মেলনগুলোর আলোচনার প্রধান বিষয় এখন ডিজিটাল বিপ্লব তথা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এই বিপ্লবকে তথ্য ও প্রযুক্তির বিপ্লবও বলা হয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধাগুলো কী? কম সময়ে বেশি উৎপাদন, বিপজ্জনক কাজে মানুষের ঝুঁকি নেয়া লাগে না, অর্থাৎ রোবটিক্সের মাধ্যমে সহজে খুব বিপজ্জনক কাজগুলো করে ফেলা যায়, কার্যকরী ও মানসম্মত কাজ নিশ্চিত করা যায়, তথ্য ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের অগ্রগতি ও গতিশীলতা নিশ্চিত করা, কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র উদ্ভাবন ইত্যাদি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করলেও বিশাল একটা অংশকে বেকারত্বের দিকে নিয়ে যাবে।
এই বিপ্লবে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কেমন? সাটেলাইট, আইটি পার্ক, ৫এ ইন্টারনেট, সাবমেরিন ক্যাবল, ডিজিটাল মার্কেটিং, আইসিটি স্টার্ট আপ উদ্যোক্তাদের পেছনে বিনিয়োগ, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রমে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার নিদর্শন। কিন্তু এই বিপ্লবে দক্ষ জনশক্তি ও ডিজিটাল সচেতনতা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রযুক্তি যেহেতু মানুষের হাতের কাজ কমিয়ে দিচ্ছে এবং এই শিল্পবিপ্লব আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং রোবটিক্সের ব্যবহার এত হবে যে, ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৮০০ মিলিয়ন মানুষ তাদের কর্ম হারাবে। কারণ একটাই- পর্যাপ্ত দক্ষতার অভাব ও অদক্ষতা। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই অদক্ষ জনশক্তি ও বেকারত্বের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। কারণ এমনিতেই বাংলাদেশে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বেকারত্বের অভিশাপে রয়েছে। বর্তমান সময়ে দেখা যায় বিভিন্ন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য বাইরে থেকে উচ্চ বেতনে লোক আনতে হয়। আমাদের দক্ষ জনশক্তি নেই। যার ফলে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। যা অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়।
বাংলাদেশের জাতীয় আয়ে রেমিট্যান্সের একটি বড় অবদান রয়েছে। শুধু ২০২১ সালে করোনা মহামারি থাকা সত্ত্বেও এই সেক্টরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের আয় ২২.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশের এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব যেহেতু বিশ্ব অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারেও পড়ছে সেহেতু অদক্ষতার বিচারে বাংলাদেশের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ অনেক। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকরণ, যে মানুষগুলো ভবিষ্যতে চাকরিচ্যুত হয়ে যাবে। বিকল্প কর্মসংস্থান, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনও একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে। গতানুগতিকতার বাইরে পর্যাপ্ত কারিগরি ও বাস্তবসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ একটি বিশাল অংশকে বেকারত্বের হাত থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ডিজিটাল সচেতনতা কেন বড় চ্যালেঞ্জ? উদাহরণ, কেউ যদি কোনো গন্তব্যে যেতে চায় তাহলে তার প্রধান দায়িত্ব হলো ওই গন্তব্য এবং গন্তব্যে যাওয়ার রাস্তা সমন্ধে পরিষ্কার ধারণা রাখা। নয়তো বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে পদে পদে বিপদ ঘটতে পারে। একটু অসাবধান পদচারণা বিশাল পরিমাণ ক্ষতির কারণ হতে পারে। ডিজিটালাইজেশন জীবনকে সহজ যেমন করেছে তেমনি জীবনযাত্রার প্রক্রিয়াকে করেছে জটিলতর। সাইবার বুলিং, হ্যাকিং, সাইবার ক্রাইমসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এই প্ল্যাটফর্মে। শুধু ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান নয়, রাষ্ট্রেরও হতে পারে বিশাল ক্ষতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি একটি বিশাল উদাহরণ। মানুষকে ডিজিটালাইজেশনের সঠিক ধারণা দেয়া এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা ঠেকাতে অনেক অপরাধ ও অনেক অর্থনৈতিক ক্ষতি। শিল্পবিপ্লবের ফলে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ইমার্জিং অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য এই চ্যালেঞ্জগুলো ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে কাজ করে যেতে হবে। বৈশ্বিক এই পরিবর্তন অস্বীকার করার সুযোগ নেই। উন্নয়নই চরম লক্ষ্য।

মো. মেহেদী হাসান : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়