গ্যালারি কায়া : বাংলাদেশ-ভারতের শিল্পীদের নিয়ে ‘এপিক ১৯৭১’

আগের সংবাদ

স্বস্তির ভোটে আইভীর হ্যাটট্রিক : সব শঙ্কা উড়িয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট, শামীম ওসমানের কেন্দ্রে হেরেছে নৌকা

পরের সংবাদ

কে এই ষাটোর্দ্ধ ফ্যাশন মডেল?

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আশরাফুল ইসলাম রানা
বয়সকে হার মানিয়ে হঠাৎ যেন সকলের নজর কেড়ে নিলেন। একটি নিছক ভুল ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতারাতি জনপ্রিয়ও হয়ে যান। বিভিন্ন মডেলিং সংস্থার কাছ থেকে একের পর এক ফোনও পেতে শুরু করেন। এরপরেই মডেলিং জগৎ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে তারকার সম্মান পেতে থাকেন। বহমান এই জীবনে নিরন্তর ঘোরা ভাগ্যের চাকায় ভাগ্যদেবীর সুপ্রসন্ন হাত এভাবেই পড়েছিল তার উপর! শুধুমাত্র সাংবাদিক ও ফ্যাশন আলোকচিত্রীদের কারণে পরিচয়ের ভুলে হয়ে গিয়েছিলেন অধ্যাপক থেকে ফ্যাশন মডেল! কিন্তু কে তিনি? ৬৮-তেও ছক ভাঙছেন। তিনি নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা লিন স্লেটার। নিউ ইয়র্কের ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজসেবা এবং আইনের অধ্যাপক লিন সমাজকর্মীও বটে। ফ্যাশন জগৎকে নিয়ে বহু প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে দিচ্ছেন ৬৮ বছরের এই মহিলা। লিনের ছকভাঙা দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিনিয়ত পাল্টে দিচ্ছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞাও।

ভাগ্যবতী লিন
শিশু নির্যাতন এবং পারিবারিক কলহ নিয়ে কাজ করে আসছিলেন লিন স্লেটার । ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন মা, হয়েছেন দাদীমাও। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সংসার। খুব একটা বেশি চাওয়া-পাওয়ারও কিছু ছিল না। তবে একটা ব্যাপারে খুব দুর্বলতা ছিল, আর তা হলো ফ্যাশন। নিজের পোশাক আর চলাফেরার ব্যাপারে খুব সচেতন তিনি। রাস্তায় আর চার-পাঁচজন বৃদ্ধা মহিলা থেকে বেশ আলাদা করেই চোখে পড়ে তাকে। আর এই গুণের জন্যই তার ষাটোর্দ্ধ বয়সটি বিশ্বের মাঝে ধরা পড়ে অন্যরূপে।
কে লিন স্লেটার? আমজনতার কাছে অচেনা ঠেকতে পারে। তবে, ইচ্ছে করে ফ্যাশন মডেলিংয়ের দুনিয়ায় পা রাখেননি লিন। মানুষের জীবনে নাটকীয় মোড় আসতে পারে যেকোনো সময় তার বাস্তব উদাহরণ এই লিন। আমেরিকায় অনুষ্ঠিত নিউইয়র্কের ফ্যাশন উইককে কেন্দ্র করেই বদলে যায় এই বৃদ্ধার যাপিতজীবনের ছক। মোড়ঘোরানো সে দিনটি স্পষ্ট মনে রয়েছে লিনের। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস। নিউ ইয়র্কের অভিজাত ম্যানহাটন এলাকায় এক বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। ফ্যাশন উইক-এর অংশ হিসেবে ম্যানহাটনের লিঙ্কন সেন্টারে একটি শো চলছিল। বন্ধুকে নিয়ে তা দেখতেই তার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন লিন। তবে ওই শো দেখতে আসা বিদেশি ফটোগ্রাফারেরা লিনকে দেখামাত্রই তার ফটো তুলতে শুরু করে দেন। কেতাদুরস্ত লিনকে দেখে তারা ভেবেছিলেন, নিশ্চয়ই তিনি ফ্যাশন জগতের কোনও বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। আসলে লিনের স্টাইল এবং আধুনিক রূপ দেখে ঐ ফটোগ্রাফাররা বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় লিনের বয়স ষাট পেরিয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরও বেশ কিছু ফোটোগ্রাফার এবং সাংবাদিক লিনের পাশে জড়ো হয়ে ছবি তুলতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকে আশেপাশের অনেক পর্যটক। তার প্রতি তখন সকলের চরম কৌতূহল। লিন কিছুটা অপ্রস্তুত হলেও বেশ উপভোগ করছিলেন চারপাশের ঘটনাগুলোকে। এই সুযোগে অনেক সাংবাদিক তার ছোটখাট সাক্ষাৎকার নিতেও ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। লিনও বেশ প্রতিষ্ঠিত মডেলের মতোই তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলেন। এভাবেই নিজেকে বিখ্যাত করার রসদ বিলিয়েছেন তিনি।

এই ছোট ঘটনাটি হয়তো তার জীবনে শুধুমাত্র একটি সুখস্মৃতি হয়েই রয়ে যেতে পারতো। কিন্তু ভাগ্য যেন তার জন্য অন্যকিছুই ভেবে রেখেছিল। পরদিনই সোশ্যাল মিডিয়ার সবচাইতে আলোচিত চরিত্র হয়ে উঠলেন এই ষাটোর্দ্ধ যুবতী। যুবতী বলছি কারণ চিরাচরিত রীতি মেনে নিয়ে বৃদ্ধা হতে তিনি নারাজ। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে তিনি উপভোগ করতে চান। তাই তো বয়সের সাথে সাথেই পরিবর্তন করে ফেলেছেন নিজের পোশাকের ঢং। এমন পোশাকগুলোই বেছে নেন যা তার চরিত্রের সাথে মানানসই।

অধ্যাপক লিন ফ্যাশন নিয়ে যা ভাবেন
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সে ঘটনার আগে থেকেই ফ্যাশন নিয়ে একটি ব্লগ লেখা শুরু করেছিলেন লিন। কাকতালীয় ভাবে তার নাম, ‘অ্যাক্সিডেন্টাল আইকন’। তবে ফ্যাশন জগতের পরিচিত মুখ হবার কোনও ইচ্ছেই ছিল না লিনের। বরং কর্মজীবন শেষে একটা বই লেখার ইচ্ছে ছিল। তবে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনা লিনের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। রাতারাতি লিনের ছবিতে ছবিতে সয়লাপ হয়ে উঠতে শুরু করে ফ্যাশন পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতা। ওই ঘটনার মাসখানেকের মধ্যে লিন জায়গা করে নেন জনপ্রিয় ‘ডাউনটাউন ম্যাগাজিন’-এ। স্বাভাবিক ভাবেই তাতে লিনের ব্লগের পাঠকসংখ্যাও বেড়ে গিয়েছিল। আচমকা শুরু হলেও এরপর নতুন পথে রওনা দেন লিন। ফ্যাশন মডেল হিসেবে তার ধ্যানধারণাও চমকে দেয়ার মতই ব্যতিক্রম। ফ্যাশন নিয়ে গৎ বাঁধা ধারণার বদলে তাতে স্বকীয় ভাবনার ছাপ রেখেছেন লিন। তার মতে, ফ্যাশনদুরস্ত পোশাকআশাক আদতে নিজেকে প্রকাশ করার একটি মাধ্যম মাত্র। ফ্যাশন মডেল বলতেই যে হাড় জিরজিরে স্বল্পবয়সি ‘সুন্দরী’র চেহারা ভেসে ওঠে, তাতেও হানা দিয়েছে লিনের বলিরেখা ভরা মুখ। পাকা চুলের এই বৃদ্ধার মুখে ঢাউস আকারের ভারী রোদচশমাও তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নিজের বয়সকে লুকিয়ে রাখতে চাননি লিন। রূপটানের পরত চাপিয়ে ‘সুন্দরী’ হওয়ার চেষ্টাও করেননি। বরং নিজের শরীর, তা সে যেমনই হোক না কেন, তাকে ফ্যাশন মডেল হিসেবে মেলে ধরেছেন। প্রতিটি দেহমনই যে সুন্দর তা বহুচর্চিত এ ধারণাকে নিজের মতো করে বলতে চেয়েছেন লিন।
ফ্যাশন মডেল মানেই যে কমবয়সি যুবক-যুবতী, সে ধারণাতেও আঘাত হেনেছেন লিন। তিনি বলেন, ‘ফ্যাশন জগতে বয়সের কোনও মাপকাঠি নেই। আমার কথা হল আমাকে বলবেন না যে এটা এই নিয়ম বা সেটা ওই নিয়মে চলে।’ ফ্যাশনদুরস্ত জামাকাপড় যে নিজ সত্তার পরিচয় বহন করে, তা-ও মনে করেন লিন।

নিময়হীন নিয়মে লিন
অনেক ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সাথে যুক্ত হলেও তাদের পছন্দমত পোশাক পড়তে নারাজ এই মডেল। তার পছন্দের ব্যাপারে এক চুল ছাড় দিতেও তিনি রাজি নন। নিজের পছন্দ, সীমাবদ্ধতা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা থেকে পোশাক বেছে নেন লিন। সময়ের হুজুগে না পড়ে নিজের সামর্থ্যকেই প্রাধান্য দিতে পছন্দ করেন এমনই জানিয়ে দিয়েছেন ফটোশ্যুটের আগে।

বাড়ছে অনুসারি সংখ্যা
খুব অস্বাভাবিকভাবে ২৫ থেকে ৩৫ বছরের ফলোয়ারের সংখ্যাই তার ব্লগে বেশি যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যে বয়সে অনেকেই অবসরের আনন্দ উপভোগ করেন, সে বয়সেই ফ্যাশন মডেলিংয়ের দুনিয়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন লিন। ইনস্টাগ্রামে এখনও পর্যন্ত তার ৭ লক্ষ ৬০ হাজারের বেশি ‘ফলোয়ার’-এর মধ্যে অনেকেই কমবয়সি। তাদের অনেকে আবার লিনের মতো ‘কুল’ হতে চান। লিনের কথায়, ‘কমবয়সিরা বার্ধক্যের ধারণাকে অস্বীকার করেন না। তারা এমন ভাবে বৃদ্ধ হতে চান না, যা যুগ যুগ ধরে তাদের মনে গেঁথে দেয়া হয়েছে।’
সূত্র : বাজ ফিড, ইনডিপেন্ডেট ইউকে, রোয়ার মিডিয়া ও দ্য ডেনভে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়