গ্যালারি কায়া : বাংলাদেশ-ভারতের শিল্পীদের নিয়ে ‘এপিক ১৯৭১’

আগের সংবাদ

স্বস্তির ভোটে আইভীর হ্যাটট্রিক : সব শঙ্কা উড়িয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট, শামীম ওসমানের কেন্দ্রে হেরেছে নৌকা

পরের সংবাদ

কী আছে জোকোভিচের ভাগ্যে!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অংশ নিতে গত ৬ জানুয়ারি দেশটিতে পা রাখে টেনিস বিশ্বের নাম্বার ওয়ান তারকা নোভাক জোকোভিচ। এরপর তার টিকা দেয়া না দেয়াকে কেন্দ্র করে একের পর এক নাটকের মঞ্চায়ন হয়। আদালতের শরণাপন্ন হয়ে প্রথম ধাপে পার পেয়ে গেলেও দ্বিতীয় ধাপে ফের ভিসা বাতিল করে তাকে আটক রাখা হয়। তবে আগামীকাল থেকে অনুষ্ঠিত বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামে তিনি অংশ নিতে পারবেন কিনা সেটা আজ আদালতের শুনানিতেই জানা যাবে।
বিশ্বের এক নম্বর পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় নোভাক জোকোভিচকে গত শুক্রবার আটক করে একটি গোপন স্থানে নেয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে ৯টায় আদালতে দ্বিতীয়বারের মতো তার অস্ট্রেলিয়ার ভিসা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি হওয়া পর্যন্ত তাকে আটক রাখা হবে। তিনি দেশটির বর্ডার ফোর্সের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে আছেন। এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে ফেডারেল সার্কিট এন্ড ফ্যামিলি কোর্টের বিচারক অ্যান্টনি কেলির সামনে শুনানিতে জোকোভিচের আইনজীবী নিক উড বলেন, ‘জোকোভিচকে নিয়ে একটি মিডিয়া সার্কাস তৈরি হয়েছে। এটি এড়াতে ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী এই তারকাকে গোপন স্থানে রাখার অনুরোধ করেছিলেন তিনি।’ শনিবার ও রবিবার অস্ট্রেলিয়ার আদালত বন্ধ থাকে। আর আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। তাই এই ছুটির দুই দিনের মধ্যেই জোকোভিচের ভিসা বিষয়ক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য বিশেষ বিবেচনায় ছুটির দুদিনও এই সার্বিয়ান তারকার আপিলের কার্যক্রম চলছে। শুক্রবার আদালতের শুনানিতে জোকোভিচের আইনজীবী উড বলেন, ‘পুরুষদের টেনিস বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড়ের জন্য এখন প্রতিটি মিনিট অত্যন্ত মূল্যবান।’ আজ সময়মতো বিষয়টি শেষ করতে কোনো সমস্যা হবে না বলেও এই আইনজীবী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল কোর্টে জোকোভিচের মামলার সংক্ষিপ্ত শুনানিতে তার আইনজীবীদের গতকাল দুপুরের মধ্যে নথিপত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। অস্ট্রেলিয়ান সরকার আদালতে সম্মত হয়েছে ভিসা বাতিল হলেও রায় না হওয়া পর্যন্ত জোকোভিচকে তার দেশ সার্বিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে না।
এই শুনানিই ঠিক করবে জোকোভিচ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে মেলবোর্নে থাকতে পারবেন কিনা। মহামারির মধ্যে টিকা না নেয়া এ সার্বিয়ানকে জনসাধারণের জন্য ‘হুমকি’ আখ্যায়িত করে অস্ট্রেলীয় সরকার দ্বিতীয় দফা তার ভিসা বাতিল করে দেয়ার পর বহিঃসমর্পণের মুখে পড়েন তিনি। জোকোভিচের আইনজীবীরা অস্ট্রেলিয়া সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে আপিল করে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সূচি অনুযায়ী আগামীকাল মেলবোর্নে জোকোভিচের খেলার কথা। তিনি যদি এবার দশমবারের মতো টুর্নামেন্টটি জেতেন, তাহলে পুরুষ টেনিসের ইতিহাসে ২১টি বড় শিরোপা জিতে খেলাটির সবচেয়ে সফল তারকায় পরিণত হবেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি খেলতে পারেন কিনা, তা নির্ধারিত হবে তার ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া শুনানির রায়ে। আপিলে হেরে গেলে র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার উপরে থাকা এ পুরুষ টেনিস খেলোয়াড়কে অস্ট্রেলিয়া ছাড়তে হবে। পাশাপাশি তিন বছর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাবেন না তিনি। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসনমন্ত্রী অ্যালেক্স হক জকোভিচের ভিসা বাতিলের পদক্ষেপ নেন। এ অস্ট্রেলীয় মন্ত্রীর ভাষ্য, টিকা না নেয়া এই টেনিস খেলোয়াড়ের উপস্থিতি কোভিড-১৯ টিকার বিরোধিতা উসকে দিতে পারে। জকোভিচ ও তার আইনজীবীদের লেখা চিঠিতে হক বলেন, ‘তার উপস্থিতি অস্ট্রেলীয় কমিউনিটির স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হতে পারে বলে মনে করছি।’
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি জোকোভিচ মেলবোর্নের টুলামারিন বিমানবন্দরে নামার পর তাকে আটকে দেয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, টিকার শর্ত শিথিলের কোনো প্রমাণ জোকোভিচ দেখাতে পারেননি। সুতরাং ভিসা বাতিল করে তাকে ফেরত পাঠানো হবে। পরে বিমানবন্দর থেকে জোকোভিচকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি হোটেলে রাখা হয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে। ফেরত পাঠানো এড়াতে অস্ট্রেলিয়ার হাইকোর্টে আবেদন করেন জোকোভিচ। অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত গত ১০ জানুয়ারি সেই আবেদনের শুনানি করে জোকোভিচকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেয়। ভিসা বাতিল করে তাকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে আটক রাখার ‘যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করারও অনুমতি দেন আদালত। আদালতে জয় পেলেও জোকোভিচের পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ ছিল না, কারণ অভিবাসনমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ফের তার ভিসা বাতিলের সুযোগ ছিল। গত শুক্রকার সে কাজটিই করেছেন অ্যালেক্স হক। দেশটির অভিবাসন আইন অনুযায়ী, ‘স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলার’ ক্ষেত্রে কাউকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন অভিবাসনমন্ত্রী। অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন পরে জানান, ‘সতর্ক বিবেচনার’ পরই জোকোভিচের ভিসা বাতিলের এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোকোভিচের খেলা নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তা স্কট মরিসন সরকারের ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব, যোগাযোগ ভেঙে পড়া, কোন নিয়ম কার বেলায় প্রযোজ্য হবে- এ বিষয়ে অস্বচ্ছতা এবং টিকা না নেয়া একজন বিখ্যাত খেলোয়াড়ের কোভিড নিয়ম ভঙ্গ করা- এসব কিছু মিলেই এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, রাজনীতিবিদরা এখন যা সহজ করার চেষ্টা করছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নিয়ম ছিল, টিকা না নিলেও স্বাধীন মেডিকেল প্যানেলের স্বাস্থ্যবিষয়ক ছাড়পত্র নিয়ে একজন খেলোয়াড় টুর্নামেন্টে খেলতে পারবেন। জোকোভিচ সেই সুযোগই নিয়েছেন। ছাড়পত্র নিয়েই অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে যথাযথ তথ্য সরবরাহ করতে হয়, সে জায়গায় জোকোভিচ কিছু তথ্য লুকিয়েছেন, যেটি ধরা পড়ে মেলবোর্ন বিমানবন্দরে।
গত ১৬ ডিসেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে তার ভিসার কাগজপত্রে জানান জোকোভিচ, কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ হওয়ার পর গত ১৭ ডিসেম্বর টেনিস বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। এরপর ১৮ ডিসেম্বর ফরাসি এক সাংবাদিককে মুখোমুখি সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন, যেখানে তিনি করোনা পজিটিভ হওয়ার কথা জানাননি। এর বাইরেও তথ্যে ফাঁক রেখেছেন জোকোভিচ। মন্টে কার্লোতে বসবাস করা জোকোভিচ যে অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার আগের ১৪ দিনে সার্বিয়া ও স্পেনে ভ্রমণ করেছেন, সেটিও তিনি উল্লেখ করেননি ভিসা ফর্মে। এদিকে গতকাল জোকোভিচের ভিসা বাতিল হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা শেন ওয়ার্ন টুইট করেন।
যেখানে তিনি লেখেন, ‘নোভাক টেনিসের একজন গ্রেট খেলোয়াড়, সর্বকালের সেরাদের একজন। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু সে অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার আবেদনপত্রে মিথ্যা বলেছে। তার যখন কোভিড ছিল বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি, তখন সে জনসমাগমে গেছে, এখন তাই আইনি লড়াইয়ে লড়তে হচ্ছে তাকে। টিকা না নেয়ার স্বাধীনতা তার আছে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ারও স্বাধীনতা আছে তাকে বের করে দেয়ার।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়