সিদ্ধান্ত পরিবর্তন : শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলবে গণপরিবহন

আগের সংবাদ

উৎসব-উৎকণ্ঠার ভোট আজ : সবার দৃষ্টি নারায়ণগঞ্জে > আইভী-তৈমূরের লড়াইয়ে বাড়তি মাত্রা শামীম ওসমান

পরের সংবাদ

মুহুরী সেচ প্রকল্পে ২৭ হাজার হেক্টর জমি চাষযোগ্য : সোনাগাজী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী : মুহুরী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে উপকৃত হচ্ছে ফেনীর সোনাগাজী, পরশুরাম, সদর, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলা। এর ফলে ২০ হাজার ১৯৪ হেক্টর জমির সেচ সুবিধা এবং ২৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমি সম্পূরক সেচ সুবিধার আওতায় আসে। এ অঞ্চলে বাড়তে থাকে ফসলের উৎপাদন। ১৯৮৫ সালে বাস্তবায়িত হয় সোনাগাজীর মুহুরী সেচ প্রকল্পটি। আর এ কাজে ব্যয় হয় প্রায় ১৫৬ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা আইডিএ, সিডা, ইইসি এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করেছিল। সংস্থাগুলোর সহায়তার পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ কোটি ৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা। ১৯৭৮ সালে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়ে ৬ বছরে বাস্তবায়িত হয়।
জানা গেছে, মুহুরী সেচ প্রকল্পের কারণে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় বেড়েছে বোরো আবাদ। এক সময় পানি সংকটের কারণে ওই উপজেলায় বোরো আবাদ হতো না। কিন্তু মুহুরী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বোরো আবাদ। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে সোনাগাজী উপজেলায় ৫০০ টন ধান বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সোনাগাজী উপজেলার দায়িত্বরত কর্মকর্তা আ ন ম আবদুল বাসেত। ফেনী নদী, মুহুরী নদী এবং কালিদাস পাহালিয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহকে আড়িবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট একটি বৃহদাকার পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো (রেগুলেটর) তৈরি করে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী এবং চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার কিয়দাংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল সোনাগাজীর মুহুরী সেচ প্রকল্প।
এর ফলে ২০ হাজার ১৯৪ হেক্টর জমি সেচ সুবিধা এবং ২৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমি সম্পূরক সেচ সুবিধার আওতায় আসে। কৃষকদের দাবি মুহুরী সেচ প্রকল্প থেকে সোনাগাজীর কৃষকেরা কোনো প্রকার সেচ সুবিধা পাচ্ছেন না। জানা যায়, তিনটি কারণে নির্মাণ করা হয় সেচ প্রকল্পটি। নদী ভাঙন, সাগরের লোনা পানি থেকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল রক্ষা ও অধিক ফসল উৎপাদন। দীর্ঘদিন পর নদী ভাঙন থেকে রক্ষা ও সাগরের লোনা পানি থেকে সোনাগাজীবাসী সুফল পেলেও অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারছে না কৃষক।
সূত্র জানায়, শুস্ক মৌসুম মুহুরী প্রকল্প থেকে সেচ সুবিধার মাধ্যমে বোরো ধান ও রবিশস্য উৎপাদন করার জন্য যে সেচ সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তা বাস্তবে হয়নি। সোনাগাজী কৃষি বিভাগ জানায়, সোনাগাজীতে ছোট বড় ৫৪টি খাল রয়েছে। গত অর্থবছরে শকুনিয়া খাল খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
অন্যান্য খাল, উদ্ধার ও খনন না করার কারণে প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে বর্ষাকালে পানিবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে খালগুলোতে পানি শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ওই অবস্থায় আউশ ও আমন ধান কিছুটা উৎপাদন হলেও বোরোধান উৎপাদন হচ্ছে না। বাদামতলি এলাকার কৃষক ফয়জুল হক সবুজ জানান, সোনাপুর, সফরপুর, চর ডোব্বা, চর ছান্দিয়াসহ কয়েকটি গ্রামে কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে বোরো আবাদ করছেন, কিন্তু মুহুরী সেচ প্রকল্প থেকে কোনো ধরনের সেচ সুবিধা পাচ্ছে না।
চর ছান্দিয়ার কৃষক ছালেহ আহম্মদ জানান, আমাদের গ্রামের দুই পাশে ২টি খাল থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কার ও খনন না করায় খালগুলোতে বাড়ি-ঘর, দোকান নির্মাণ করে রেখেছে। ফলে বর্ষাকালে পানিবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে পানি শূন্যতার সৃষ্টি হয়। যার কারণে সোনাগাজী কৃষকের বছরজুড়ে দুঃখ লেগেই থাকে। সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, মুহুরী সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে জেলার প্রতিটি উপজেলায় জমিতে রবিশস্য উৎপাদন ও বোরো আবাদ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন ভোরের কাগজকে বলেন, বোরো আবাদ বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে খালগুলোতে সংস্কার করা হবে। এসব খাল সংস্কার হলে মুহুরী সেচ প্রকল্পের পানি প্রবাহ ঠিক থাকবে। এর ফলে উপকৃত হবে এই অঞ্চলের কৃষক। পাশাপাশি বাড়বে ফসলের উৎপাদন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়