সিদ্ধান্ত পরিবর্তন : শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলবে গণপরিবহন

আগের সংবাদ

উৎসব-উৎকণ্ঠার ভোট আজ : সবার দৃষ্টি নারায়ণগঞ্জে > আইভী-তৈমূরের লড়াইয়ে বাড়তি মাত্রা শামীম ওসমান

পরের সংবাদ

প্রস্তুত ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : আশঙ্কার মধ্যেই উৎসবমুখর ভোটের অপেক্ষায় নগরবাসী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে : স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও নানা কারণে জাতীয়ভাবে আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে উৎসুক দেশের মানুষ। শঙ্কাও কম নয়। কোনো রকম অঘটন ছাড়াই গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। ভোট নেয়া হবে আগামীকাল রবিবার। ১৬ দিনের একটানা প্রচারণা শেষে এখন ভোটের অপেক্ষায় নগরবাসী। ভোট নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের নানা সমীকরণ। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক বা ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি

শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। কিছু কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ তথা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলেও পুরো এলাকায় থাকবে ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ দৃষ্টি।
গতকাল নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। প্রচারণার শেষ দিনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটান। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তারা নগরের অলিগলি চষে বেড়ান। তাদের পক্ষে নেতা-কর্মী-সমর্থকরাও প্রচারণা চালান। বিশেষ করে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার দিনব্যাপী গণসংযোগ করেন। ভোটাররা বলছেন, এবারের লড়াইটা হচ্ছে সেয়ানে সেয়ানে। এখন দেখার অপেক্ষা কে হাসে শেষ হাসি।
আইভী গতকাল সকালে তার দেওভোগ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করে বিকালে ২নং রেলগেট সংলগ্ন আওয়ামী লীগের জেলা অফিসের সামনে মূল সড়কে নির্বাচনী শেষ পথসভা করেন। সেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমাগম হয়। পথসভায় আইভী বলেন, ভোটের মাঠে আমরা নেগেটিভ কিছু করিনি। আমি সহিংসতার বিপক্ষে। সহিংসতা আমার তরফ থেকে হবে না। কারণ আমার সেরকম কোনো বাহিনী নেই। আমি কোনো দিন সহিংসতা করিনি। সহিংসতা হলে আমার ক্ষতি হবে। একটি পক্ষ চাচ্ছে আমার ভোটাররা যাতে ভোট দিতে না পারে। আমি প্রশাসনকে বলেছি, ভোটের দিন যেন উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে। আমার নারী ভোটাররা যাতে আসতে পারে। কারণ আমি জানি এ ভোটগুলো আমার। আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে যদি কেউ সহিংসতা করে তাহলে প্রশাসনকে বলব ব্যবস্থা নিতে। আমাকে পরাজিত করতে অনেকগুলো পক্ষ এক হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা ঘরেরও হতে পারে বাহিরেরও হতে পারে। সবাই একসঙ্গে মিলে গেছে, কীভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আমাকে পরাজিত করা যায়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।
একইভাবে সকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তৈমূরের প্রচারণা শুরু হয়। জুমার নামাজের পর তার নিজ এলাকা ১৩নং ওয়ার্ডের মাসদাইরে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। এরপর বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ গুদারাঘাট থেকে প্রচারণা শুরু করে কদমরসুল, মদনগঞ্জ, ধামগড়, সোনাকান্দা, ফরাজীকান্দা, লক্ষারচর, কাইতাখালী ও মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে নির্বাচনী গণসংযোগ করেন। এর আগে সকালে তৈমূর আলম খন্দকার তার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচন কমিশনকে আমরা অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে অনেকগুলো অভিযোগ করেছিলাম। সে অভিযোগের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, বরং সেসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক তার কিছু সঙ্গী নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলাপ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সরকারি দলের মেহমানরা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় ভোটার তথা নারায়ণগঞ্জের নাগরিক না হয়েও তিনি নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না। এটা একজন উচ্চ পর্যায়ের সম্মানিত নেতার কাছ থেকে আমরা আশা করি না। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জনগণ সন্দিহান হয়ে পড়েছে। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জে যদি নির্বিঘœ ও স্বচ্ছ ব্যালটের মাধ্যমে আশার প্রতিফলন ঘটে, এতে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় শতাধিকটিকেই ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলো- ১৯নং ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (মদনগঞ্জ কেন্দ্র-১), মদনগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (মদনগঞ্জ কেন্দ্র-২), কেরামতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (লক্ষার চর ভোটকেন্দ্র) ও শান্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০নং ওয়ার্ডের বেপারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (মহিলা ভোটকেন্দ্র), সোনাকান্দা উচ্চ বিদ্যালয় (পুরুষ ও মহিলা ভোটকেন্দ্র), সোনাকান্দা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ ও মহিলা ভোটকেন্দ্র), ফরাজিকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ ও মহিলা ভোটকেন্দ্র)। ২১নং ওয়ার্ডের সালেহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাকান্দা বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২২নং ওয়ার্ডের বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (এস.এস শাহ রোড কেন্দ্র নং-১ পুরুষ ভোটকেন্দ্র), বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (এস.এস শাহ রোড কেন্দ্র নং-১ মহিলা ভোটকেন্দ্র), বন্দর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ (১৮২নং এস.এস শাহ রোড কেন্দ্র নং-১ পুরুষ ভোটকেন্দ্র) বন্দর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ (১৮২ নং এস,এস শাহ রোড কেন্দ্র নং-২ মহিলা ভোটকেন্দ্র)। বন্দর শিশুবাগ বিদ্যালয় (এইচ এম সেন রোড পুরুষ ও মহিলা ভোটকেন্দ্র), বন্দর বালিকা জামাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (এইচ এম সেন রোড পুরুষ ও মহিলা ভোটকেন্দ্র), ২৩নং ওয়ার্ডের নবীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী সিরাজ উদ্দিন, একরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (বন্দর উইলসন রোড একরামপুর পুরুষ ভোটকেন্দ্র), (বন্দর উইলসন রোড একরামপুর মহিলা ভোটকেন্দ্র)। ২৪নং ওয়ার্ডের নবীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নোয়াদ্দা কাইতাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৫নং ওয়ার্ডের লক্ষন খোলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (পুরুষ ও মহিলা ভোটকেন্দ্র), দক্ষিণ লক্ষণখোলা সরকারি প্রাথমিক (পুরুষ ও মহিলা ভোটকেন্দ্র), উত্তর লক্ষণখোলা সরকারি প্রাথমিক (পুরুষ ও মহিলা ভোটকেন্দ্র)। ২৭নং ওয়ার্ডে ফুলহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুড়িপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, চাপাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, নির্বাচনের দিন পুরো সিটি করপোরেশনজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত চার হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ভোটের দুদিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের পরদিন পর্যন্ত প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং তিনজন পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৫ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুলিশ ও আনসারসহ ২০ জন দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি মোবাইল ফোর্স, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। প্রতি থানায় রিজার্ভ ফোর্স রাখা হবে। এছাড়া ২০ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। নগরে গতকাল রাত থেকে বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় চলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের টহল। ভোটারদের নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা। প্রতি কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকবে র‌্যাব সদস্যরাও। ভোটের পরিবেশ সুশৃঙ্খল রাখতে গতকাল থেকেই অভিযানে নেমেছে পুলিশ। বিভিন্ন সময়ে নাশকতার মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে জানিয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত থাকবে। একটি কেন্দ্রে কমপক্ষে ৪-৫টি টিম থাকবে। আর একটি টিমে কমপক্ষে ৪-৫টি পুলিশ সদস্য ও ২০-২২ জন আনসার থাকবে। তাহলে আপনারা বুঝতে পারছেন একটি প্রতিষ্ঠানে ২৫-৩০ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকবে। এটা তো শুধু ভোটকেন্দ্রের ভেতরে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে আমার তিনটি করে টিম ফোর্স থাকবে। একটি বিজিবির টিম থাকবে, একটি র‌্যাবের টিম থাকবে ও আরো একটি পুলিশের টিম থাকবে। ভোটের একসময় দেখবেন, কেন্দ্রে ভোটারের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশি দেখা যাবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইসি জানায়, আজ শনিবার রাত থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে নির্বাচনী সরঞ্জাম। নির্বাচন হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে)। এই যন্ত্রে কীভাবে ভোট দিতে হয় গতকাল শুক্রবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তা শেখানো হয়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হয়। ওই মক ভোটিং অনুষ্ঠানে সব প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার উপস্থিত থেকে মক ভোটিং সম্পন্ন করেন। মক ভোটিং শেষে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসার ইভিএমসমূহ উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে বুঝিয়ে দেন। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার জানান, সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের আহ্বান জানান।
শীতলক্ষ্যার কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৭৬ সালে। এর ১৩৫ বছর পর ২০১১ সালে পৌরসভাকে উন্নীত করা হয় সিটি করপোরেশনে। এবার তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সিটির নির্বাচন। এবার নারায়ণগঞ্জ নগরীতে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন ও নারী ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৯৩টি ও ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৩৩টি। নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছে পাঁচটি রাজনৈতিক দল ও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৭ জন প্রার্থী। সংরক্ষিত ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৩২ জন এবং ২৭টি সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৪৮ প্রার্থী। এর আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়