নির্বাচনী আইন প্রণয়নসহ ৫ দফা প্রস্তাব এনপিপির

আগের সংবাদ

বদলে গেছে ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’

পরের সংবাদ

সোনাদিয়ায় চলছে জলদস্যু একরাম মিয়ার রাজত্ব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার থেকে : কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়ার রাজা এখন একরাম মিয়া। তার একক রাজত্ব চলছে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এই সোনাদিয়া দ্বীপে। জলদস্যুতা, প্যারাবন নিধনসহ সব অপকর্ম চলছে একরামের নিয়ন্ত্রণে। সে ইতোমধ্যে নতুনভাবে গড়ে তুলেছে জলদস্যু বাহিনী। জলদস্যুদের লুট করা মালামাল ও দখলবাজি করে প্রতি মাসে তার অবৈধ আয় প্রায় কোটি টাকা। যার ফলে একরাম আতঙ্কে অনেকেই জেলে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। মাছ ধরার ট্রলার কক্সবাজার আসতে না পেরে এখন চট্টগ্রামমুখী হয়ে পড়েছে।
মহেশখালীর সোনাদিয়াসহ বঙ্গোপসাগরের মোহনার একচ্ছত্র অধিপতি এখন একরাম। তার বাইরে কেউ কিছু করলে তাকে এলাকা ত্যাগ করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে সোনাদিয়ার মোহনায় প্রায় ৩০টি ট্রলার লুট হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের সময় থেকেই বীরদর্পে নানা অপকর্ম চালাচ্ছে এই প্রভাবশালী একরাম। প্যারাবন নিধনের অভিযোগে সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদের সঙ্গে বন মামলার আসামি হলেও এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই একরাম। এই বন মামলায় সাবেক সাংসদসহ অন্য আসামিরা দীর্ঘদিন জেলহাজতে থেকে জামিনে মুক্তি পেলেও একরাম রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সোনাদিয়ার বাসিন্দা ফরিদুল আলম জানান, একরাম এখন সোনাদিয়ার আতঙ্ক।

সোনাদিয়া দ্বীপ এখন পর্যটকদের একটি আকর্ষণীয় স্থান। সম্প্রতি পর্যটকদের জন্য আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্রামাগার তৈরি থেকে পর্যটকদের সুবিধার্থে অনেক কার্যক্রম শুরু করেছেন। এতে এখন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এই একরাম। নাগু মেম্বারের মৃত্যুর পর তিনি অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই। প্রতিদিন সাগর থেকে জলদস্যুরা জাল, মাছ ও ট্রলারের বিভিন্ন জিনিস সোনাদিয়ায় নিয়ে আসে। এসব মালামাল তাদের একরামের কাছে পানির দরে বিক্রি করতে হয়। পরবর্তী সময়ে ট্রলারের মালিকের কাছে এসব মালামাল চড়া দামে বিক্রি করে একরাম।
এছাড়া একরামের নিয়ন্ত্রণে সোনাদিয়ায় খালাস হয় বড় ধরনের ইয়াবার চালান। তা নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে একরাম আদায় করে মোটা অঙ্কের কমিশন। এসব বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার কেউ নেই। যারা অভিযোগ করবে তারা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। যার ফলে কেউ অভিযোগ করতে সাহস করে না।
এছাড়া তার দখলে রয়েছে প্রায় ১ হাজার একরের চিংড়িঘের। এসব চিংড়িঘের প্যারাবন কেটে করা হয়েছে বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়ে। প্রতি বছর এসব চিংড়িঘের থেকে কয়েক কোটি টাকা আয় করেন এই একরাম। তার কথা না শুনলে তাদের জলদস্যু হিসেবে চিহ্নিত করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়া হয়। অনেক ব্যবসায়ী একরামের রোষানলে পড়ে এখন জেলহাজতে রয়েছেন।
ঘটিভাঙ্গা ওয়ার্ডের একজন সাবেক মেম্বার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা অসহায় দিনযাপন করছি। অভিযোগ করব কোথায়? একরামই এখন সব। তার কথা না মানলে সব ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে অনেক জেলে তাদের পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। একরামের চাহিদা মেটাতে না পেরে ট্রলার বিক্রি করে দিয়েছেন অনেক জেলে। যারা কক্সবাজারে মাছ বিক্রি করেন তাদের অনেকেই এখন চট্টগ্রাম গিয়ে মাছ বিক্রি করছেন। সোনাদিয়ার মোহনা দিয়ে কক্সবাজার প্রবেশ করতে চাইলে একরামের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়। তাই অতিষ্ঠ হয়ে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসছে না অনেক মৎস্য ব্যবসায়ীর ট্রলার।
এ ব্যাপারে একরাম জানান, সোনাদিয়ায় জলদস্যুতার বিষয়টি আজকে নতুন নয়। আমার জন্মের আগে থেকেই চলছে। এতে শুধু আমাকে দোষারোপ করা ঠিক হচ্ছে না। জলদস্যুদের মালামাল ক্রয় করার বিয়য়টিও সত্য নয়। এক হাজার একর নয়, ৩০০ একর প্রজেক্ট দখলে আছে জানিয়ে একরাম বলেন, এই প্রজেক্ট আমাদের পারিবারিক। আমরা সবাই ভাগ করে ভোগ করি। বিগত ১/১১-এর সময় সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদের সঙ্গে বন মামলার আসামি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
মহেশখালী থানার ওসি আবদুল হাই জানান, অনেকেই মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়