নির্বাচনী আইন প্রণয়নসহ ৫ দফা প্রস্তাব এনপিপির

আগের সংবাদ

বদলে গেছে ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’

পরের সংবাদ

সুকুক চালুর দিন পুঁজিবাজারে লেনদেনে ভাটা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি বন্ডের লেনদেন শুরু হয় ১১০ টাকায়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে থাকে। দিন শেষে ১০১ টাকায় শেষ হয় এটি। লেনদেন হয়েছে মোট ৩৩ কোটি টাকা। এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমেছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি। বেক্সিমকো লিমিটেডের বহুল আলোচিত ৩ হাজার কোটি টাকার গ্রিন সুকুকের লেনদেন শুরুর দিন পুঁজিবাজারে সূচক কিছুটা বাড়লেও লেনদেন কমে গেছে। সুকুকেও খুব একটা লেনদেন হয়েছে এমন নয়, দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ৩৩ কোটি টাকার বন্ড।
নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে পাঁচ কর্মদিবসই পুঁজিবাজারে সূচক বাড়লেও দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রথম দিন বড় পতন, তার পরদিন বড় উত্থান, এরপর আবার বড় পতন, শেষ দিনে অর্থাৎ গতকাল বৃহস্পতিবার আবার সূচক বেড়েছে। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ওঠানামা করতে করতে সূচকে যোগ হয়েছে ২১ পয়েন্ট। তবে লেনদেন কমে গেছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি। এদিন লেনদেনে প্রধান আকর্ষণ ছিল সুকুক বন্ড। এক বছর ধরেই এ বন্ড নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। বন্ডটি যে লভ্যাংশের নিশ্চয়তা দিয়েছে, তা যে কোনো বিবেচনায় আকর্ষণীয়। তারপরও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এটি খুব একটা আকৃষ্ট করতে পেরেছে এমন নয়। পরে মূলত ব্যাংকগুলো এ বন্ডের ইউনিট কিনেছে। বন্ডটি প্রতি বছর ন্যূনতম ৯ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে, যার পুরোটাই করমুক্ত। আবার বেক্সিমকো লিমিটেডের লভ্যাংশ ১০ শতাংশের বেশি যতটুকু হবে, তার ১০ শতাংশ সুকুকের লভ্যাংশে যোগ হবে। প্রতি বছর সুকুকের ২০ শতাংশ টাকা তুলে নেয়া যাবে। অথবা এ টাকার বিনিময়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নেয়া যাবে। সেই শেয়ার দেয়া হবে বাজারদরের ২৫ শতাংশ কম দামে। ফলে সেখানে ৩৩ শতাংশ বেশি মুনাফা হবে। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বছরে মুনাফা ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ হবে নিশ্চিতভাবেই। এর চেয়ে বেশিও হতে পারে।
গতকাল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বেড়েছে ১৫৬টির কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ১৭১টির। অপরিবর্তিত ছিল ৫৫টির। বছরের প্রথম কর্মদিবস ২ জানুয়ারি লেনদেন ছিল ৮৯৪ কোটি ১৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। সেটি বাড়তে বাড়তে ১১ জানুয়ারি হয় ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। তবে এর পরের দুই দিনে কমতে কমতে সপ্তাহের শেষ দিন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪২ কোটি ৮৪ লাখ ১১ হাজার টাকা। দিনটিতে সূচক এক দিনের ব্যবধানে আবার ৭ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বরের পর প্রথমবারের মতো তা এ ধাপ অতিক্রম করে ১১ জানুয়ারি। পরদিন আবার তা নিচে নেমে আসে। তার পরদিন তা ২১ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৭ পয়েন্টে।
দিনভর টানাপড়েনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পাওয়ার গ্রিডের। আগের দিন দর হারানো কোম্পানিটির দর এদিন বেড়েছে ৬.৮ শতাংশ। কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে ৪.৯৭ পয়েন্ট। টেলিকম খাতের গ্রামীণফোনের শেয়ারদর বেড়েছে পরপর দুই দিন। ০.৬২ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে ৪.৩১ পয়েন্ট। আগের দিন দর হারানো সরকারি কোম্পানি তিতাস গ্যাসের দর এদিন বেড়েছে ৩.৭৭ পয়েন্ট, কোম্পানিটি সূচক বাড়িয়েছে ২.৫৯ পয়েন্ট। আগের দিন দর হারানোর সর্বোচ্চ সীমায় লেনদেন হওয়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ারদর এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন হয়েছে দিনের সর্বোচ্চ সীমায়। ৯.৯৫ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচকে যোগ হয়েছে ২.৫২ পয়েন্ট। এছাড়া বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি ২.০৬ পয়েন্ট, স্কয়ার ফার্মা ১.৬৭ পয়েন্ট, ব্র্যাক ব্যাংক ১.৬২ পয়েন্ট, লাফার্জ হোলসিম ১.৩৫ পয়েন্ট, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ০.৯৭ পয়েন্ট ও লিনডে বিডি ০.৯৫ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এই ২০টি কোম্পানিই সূচক বাড়িয়েছে ২৩.০১ পয়েন্ট।
অন্যদিকে সূচক সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে রবির দরপতনের কারণে। আগের দিন সূচকে ৪৩ পয়েন্ট যোগ করা কোম্পানিটি পরদিন সূচক কমিয়েছে ৩.০৪ পয়েন্ট। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, এক্সিম ব্যাংক, আইসিবি, বিএসআরএম, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, পদ্মা অয়েল, ব্যাংক এশিয়া ও প্রাইম ব্যাংকও সূচক কিছুটা কমিয়েছে। সব মিলিয়ে এ ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক কমেছে ৯.১৭ পয়েন্ট।
ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের মুনাফা বেড়েছে : প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এরই মধ্যে লেনদেনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের। লেনদেনের দুদিন আগেই কোম্পানিটি তাদের ৯ মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ’২১) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৪৮ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস হয়েছিল ০.৯৩ টাকা। এ হিসেবে কোম্পানিটির মুনাফা ০.৫৫ টাকা বা ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের ৩ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৩৯ টাকা।
আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস হয়েছিল ০.৩২ টাকা। এ হিসেবে কোম্পানিটির মুনাফা ০.০৭ টাকা বা ২২ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৮.৮৭ টাকায়। আগামী রবিবার কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হবে। ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ডিএসইতে কোম্পানি কোড ২৫৭৫৩। কোম্পানিটির আইপিওতে আবেদনকারীদের বিও হিসাবে বরাদ্দ পাওয়া শেয়ার সোমবার পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর কোম্পানিটির আইপিওতে আবেদন গ্রহণ করা হয়। কোম্পানিটি ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৪০ টাকা উত্তোলনের জন্য প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ৯০৪টি শেয়ার ইস্যু করে। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি ফিক্সড ডিপোজিট, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, ফ্লোর ক্রয় ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে।
কোম্পানিটি ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অনুযায়ী নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১৬.০২ টাকা (সম্পদ পুনর্মূল্যায়নসহ) এবং শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে (ইপিএস) ০.৯৩ টাকা। আইপিওতে কোম্পানিটি ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। গত ২৩ জুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়