নির্বাচনী আইন প্রণয়নসহ ৫ দফা প্রস্তাব এনপিপির

আগের সংবাদ

বদলে গেছে ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’

পরের সংবাদ

তিন হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড চালু : ব্যাংকের মুনাফায় ছয় সুকুকে নয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : লেনদেন শুরু হয়েছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গ্রিন সুকুক আল ইস্তিসনা বন্ডের। প্রথম দিন লেনদেন ১১০ টাকায় শুরু হয়েছে। তিন হাজার কোটি টাকার এ সুকুক লেনদেন শুরু উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান বলেছেন, ব্যাংক থেকে টাকা রাখলে বছর শেষে ছয় শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়, আর সুকুক দিচ্ছে নয় শতাংশ। শুধু নয় শতাংশ নয়, এটি বাড়তেও পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত বেক্সিমকো গ্রীন সুকুক বন্ডের লেনদেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত শুরু হওয়া এ বন্ডের ডিএসইতে ট্রেডিং কোড হচ্ছে : ‘বেক্সজিসুকুক’ এবং কোম্পানি কোড হচ্ছে : ২৬০০৮।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, সুকুকের যখন চিন্তা করা হচ্ছিল তখন আমাদের ধারণা ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এতে ব্যাপক সাড়া দেবে। কিন্তু বাস্তবে পুঁজিবাজারে এ ধরনের বন্ড নতুন হওয়ায় তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ দেখিয়েছে। যখন চিন্তা করা হচ্ছিল ব্যাংকের সুদের হার নয়-ছয় করা হবে- এ খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আশঙ্কা করেছিল, এটি ব্যবসার ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এটি বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে নয় ও ছয় সুদের হারেও ব্যাংক ভালো ব্যবসা করছে। সালমান এফ রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে এখনো দুটি বিষয়ে ঘাটতি আছে। একটি বন্ড মার্কেট না থাকা অপরটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে সক্রিয় না হওয়া। বিষয় দুটির ব্যাখ্যায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্বের সবক’টি স্টক মার্কেট ইক্যুইটি মার্কেটের তুলনায় বন্ড মার্কেট শক্তিশালী। ইক্যুইটর তুলনায় বন্ড মার্কেট বড় অথবা সমান সমান। কিন্তু আমাদের এখানে উল্টো। এখন নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে। পুঁজিবাজারে বৈচিত্র্য আছে।
শুধু বেক্সিমকো সুকুক নয়, এরই মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরশনের পক্ষ থেকে বন্ড ইস্যুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তিনটি আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুটি বন্ড ইস্যুর বিষয়ে কার্যক্রম চলছে।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান দ্বিতীয় বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, একটি স্থিতিশীল মার্কেটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদান থাকে সবচেয়ে বেশি। রিটেল ইনভেস্টরদের অংশগ্রহণ থাকে কম। কিন্তু আমাদের এখানে উল্টো। এখানে রিটেল ইনভেস্টরদের বিনিয়োগ বেশি, আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কম। ফলে পুঁজিবাজার গুজবভিত্তিক হয়ে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকরীদের উচিত রিটেল ইনভেস্টরদের পোর্টফোলিও ম্যানেজ করা। যারা নতুন বিনিয়োগ করতে আসে তাদের পোর্টফোলিও ম্যানেজ করলে পুঁজিবাজারে উত্থান পতনের জটিলতা কম হবে। পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সে আস্থা তৈরি করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, সুকুক বন্ডের ট্রেড শুরু হলো। যত বাধাবিপত্তিই থাকুক, সামনে আরো নতুন নতুন কাজ করব। আমাদের সামনে ব্লæ বন্ড, গ্রিন বন্ড অনেকগুলো চলে আসছে। আমরা ডেরিভেটিভস নিয়ে কিছু কাজ করছি, সেটা চলে আসবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের অর্থনীতি নিয়ে যে স্বপ্ন আমরা এগিয়ে নিচ্ছি, সেটা আস্তে আস্তে বাস্তবায়িত হবে। আমাদের সরকার, মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ী, যারা এখন খুব সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের জনগণ, জনসাধারণ এবং সবার কাছে একটাই চাওয়া, এখন আমাদের একটা স্ট্যাবিলিটি দরকার, বাকিটা পাবলিক-প্রাইভেট সেক্টরই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
প্রসঙ্গত, সুকুক বন্ড হলো সুদবিহীন বন্ড। এটি শরিয়াহ ভিত্তিক ট্রাস্টির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে মূলত বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। এসব প্রকল্পের মালিকানার অংশীদার হন সুকুক বন্ডের বিনিয়োগকারীরা, অন্য বন্ডে এ সুযোগ নেই। সুকুক বন্ডের বিনিয়োগ ব্যর্থ হলে ওই প্রকল্পের সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিএসইসির অনুমোদন ক্রমে প্রতিষ্ঠানটি বাজার বন্ড ইস্যু করে ৩ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে টাকা উত্তোলনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বেক্সিমকো। সুদবিহীন সুকুক বন্ডের এই ৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দা ও লাঠশালার চরে এক হাজার একর জমির ওপর ২০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আরও ৩০ মেগাওয়াটের করতোয়া সোলার লিমিটেড বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে বেক্সিমকো লিমিটেড।
সুকুকের ৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২৬টি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী দিয়েছে ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। বাকি টাকার মধ্যে আন্ডাররাইটার দিয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দিয়েছেন ৪২৩ কোটি টাকা। এছাড়া ৩৩৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা দিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠান। সুকুকটির ট্রাস্টি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং ইস্যু ম্যানেজার সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস ও অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়