নির্বাচনী আইন প্রণয়নসহ ৫ দফা প্রস্তাব এনপিপির

আগের সংবাদ

বদলে গেছে ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’

পরের সংবাদ

করোনা মোকাবিলা : কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রভাব ছিল স্থানীয় ক্ষমতাশীনদের > চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ১০ দফা সুপারিশ টিআইবির

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যকর অংশ নেয়া এবং বিভিন্ন কর্মসূচি ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের জন্য গবেষণার সার্বিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অংশীজন হিসেবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তহবিল ও চলমান প্রকল্পের তহবিল ছাড়াও সাধারণ তহবিল থেকে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা, নগদ অর্থ বিতরণ, সচেতনতামূলক কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান, লাশ দাফন ও সৎকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দিয়েছে।
সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে প্রান্তিক ও নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো তুলনামূলক বেশি কার্যকর ছিল। নিয়মিত আয়ের উৎস না থাকা, দাতা সংস্থা কর্তৃক তহবিল হ্রাস এবং ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ায় করোনা সংকট মোকাবিলায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংস্থাগুলোর তহবিল সংকট ছিল মূল চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, করোনা অতিমারির সময়েও ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে উপকারভোগীর তালিকা প্রণয়নে স্থানীয় ক্ষমতাশীনদের নেতিবাচক প্রভাব ছিল।
‘করোনা সংকট মোকাবিলায় সাড়াদানকারী বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সভাপতিত্বে সম্মেলনে আব্দুল হান্নান সাখিদার গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণাটি তত্ত্বাবধান করেছেন একই বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ এন্ড কমিউনিকেশন বিভাগের কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি সংস্থার করোনা কর্মসূচিসংক্রান্ত তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ে তেমন কোনো অনিয়ম চিহ্নিত না হলেও স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশের ঘাটতি ছিল। করোনা চলা সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও বেশ কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে কিস্তি আদায়ে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ পাওয়া যায়। করোনা চলা সময়ে প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়হীনতা দেখা গেলেও পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসেবা, ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সমন্বয়ের উন্নয়ন ঘটলেও বেসরকারি সংস্থা ও তদারকি সংস্থার অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থায় ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যকর অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের জন্য ১০টি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো- করোনা চলা সময়ে তৃণমূল পর্যায়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর বিভিন্ন কার্যক্রমের (সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা, নগদ অর্থ সহায়তা এবং ত্রাণ তৎপরতা) ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সমন্বয় সাধন করতে হবে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক করোনা চলা সময়ে গৃহীত কর্মসূচির ধরন, আওতা, ব্যয়, উপকারভোগীর তথ্য ইত্যাদি স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ ও নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করতে হবে।
করোনাকালে মাঠপর্যায়ে বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত কার্যক্রম বিশেষত উপকারভোগীদের ত্রাণসংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে তদারকি সংস্থা কর্তৃক মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা নিরসনে তদারকি সংস্থা কর্তৃক উপকারভোগীদের তথ্য সংবলিত একটি সমন্বিত ডাটাবেজ ও ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করতে হবে।
যে কোনো দুর্যোগ পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলায় সরকারকে শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব এনজিও নেটওয়ার্ক/প্ল্যাটফর্মকে সঙ্গে নিয়ে একটি যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। করোনা সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নেয়ার মাধ্যমে সরকার ও দাতা সংস্থাগুলোর কর্মপরিকল্পনায় স্থানীয় পর্যায়ের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে এবং কর্মসূচিতে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য জীবিকায়ন ও সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন দুর্যোগে বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক সাড়াপ্রদান কার্যক্রম পরিচালনের জন্য সরকার কর্তৃক এবং দাতা সংস্থা কর্তৃক দুটি ভিন্ন তহবিল গঠন করতে হবে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বিবেচনায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিশেষ করে, টিকা নিবন্ধন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। আর্থিক ঝুঁকিতে পড়া স্থানীয় পর্যায়ের সংস্থাগুলোকে টিকে থাকার জন্য সরকার ও দাতা সংস্থা কর্তৃক নীতি সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে করোনা চলা সময়ে সংকট মোকাবিলায় সহজ শর্তে, স্বল্প সময়ে, কম সুদে ঋণ প্রাপ্তির ধারাবাহিকতার পাশাপাশি ঋণগ্রহীতা সদস্যদের উৎপাদিত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বাজারজাতকরণের সুবিধা দিতে হবে।
কোভিড-১৯ অতিমারি বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং সার্বিক আর্থসামাজিক অবস্থাকে এক অভূতপূর্ব সংকটে ফেলেছে।
করোনার বিস্তার মোকাবিলার জন্য আরোপিত সাধারণ ছুটি ও লকডাউন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মকাণ্ড, সাধারণ কর্মজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থানসহ সার্বিকভাবে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থাকে স্থবির ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। এই অতিমারির সময়ে দেশের প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে, বিশেষ করে ঝুঁকিগ্রস্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর করোনার নেতিবাচক প্রভাব ছিল বেশি। এই সংকট মোকাবিলায় ও মানবিক সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তবে অতিমারির প্রাথমিক পর্যায়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সরকারি নীতিকৌশল ও কর্মপন্থার সঙ্গে কার্যকরভাবে যুক্ত করা হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়