চট্টগ্রামে সৈকতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও : বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন > ঢিলেঢালা অভিযানে ১১ জনকে জরিমানা

পরের সংবাদ

হুকোর বেড়াজাল কাটিয়ে চীনের ‘অলৌকিক উত্থান’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : গত চল্লিশ বছরে বিশ্বের মেগা কারখানা হিসেবে উঠে এসেছে চীন। দেশটির এ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ‘অলৌকিক অর্থনীতি’ বলা হচ্ছে, যার মূল চালিকাশক্তি বিশাল এক অভিবাসী কর্মীবাহিনী। এরা হচ্ছে দেশটির গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে কাজ করতে যাওয়া কোটি মানুষের জনবল।
সাংহাই পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তনশীল শহরগুলোর একটি। কিন্তু যারা এই আকাশচুম্বী অট্টালিকাগুলো তৈরি করছেন, তারা চীনের গ্রাম ছেড়ে শহরে কাজ করতে যাওয়া মানুষের ঢল। বহু বছরের অর্থনৈতিক স্থবিরতা আর দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে সময় পার করার পর একদলীয় কম্যুনিস্ট এই রাষ্ট্রটি ১৯৭০ এর শেষ দিক থেকে অর্থনীতি উন্মুক্ত করতে ও সংস্কারের পথে হাঁটতে শুরু করে। এর আগে পর্যন্ত চীনের মানুষ ছিল হুকো পদ্ধতিতে বন্দি। এর আওতায় মানুষের স্বাধীনভাবে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাওয়ার অধিকার ছিল না। এ বিষয়ে চীনা লেখিকা লিয়াং হং বিবিসিকে জানান, এই হুকো হলো মানুষকে এলাকাভিত্তিতে নথিভুক্ত করার সুপ্রাচীন পদ্ধতি। ১৯৫০ থেকে ৭০ এর শেষ পর্যন্ত চীনের ভেতরে মানুষের চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু ৮০ দশক থেকে এই বিধিনিষেধ উঠে যেতে শুরু করে। ফলে দেশের ভেতরে যেখানে ভালো কাজের সুযোগ-সুবিধা আছে সেখানে মানুষের স্বাধীনভাবে যাওয়ার পথ খুলে যায়। চীনের গ্রামগুলোতে বড় পরিবারের ভরণপোষণ ছিল কঠিন। লিয়াং বলেন, শহরে অভিবাসী কর্মীদের কাজ করার অনুমতি যখন ছিল না, তখন গ্রামে তার মতো পরিবারের বাপমায়েরা সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। এরপর হঠাৎ অর্থনীতিতে একটা জোয়ার এলো। গ্রামের মানুষের জন্য শহরের কারখানায় গিয়ে কাজ করার সুযোগ তৈরি হলো। তাদের আয়-রোজগারের পথ খুলে গেল। তারা গ্রামে উপার্জনের অর্থ পাঠাতে শুরু করল। পরিবারের জীবনের মান উন্নত হতে শুরু করল।
লিয়াং যে উপকূলীয় এলাকার কথা বলছিলেন, সেটি দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশে এবং পরিচিত পার্ল নদীর বদ্বীপ এলাকা নামে। এটি বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহর এলাকা। কারখানায় ঠাসা। সেখানকার অসংখ্য কারখানায় তৈরি পোশাক-আশাক ও অন্যান্য পণ্য সামগ্রী চালান যায় সারা বিশ্বের নানা দেশে। কিন্তু সেখানকার লাখ লাখ বাসিন্দা এসেছেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে, যাদের বসতি হুকো ব্যবস্থায় নথিভুক্ত গ্রামে। এরাই চীনের ভাসমান কর্মশক্তি -অভ্যন্তরীণ অভিবাসী। ধারণা করা হয় চীনে ২৫ কোটির বেশি মানুষ কাজের জন্য নানা শহরে গিয়ে বসতি গড়েন। এরা দেশটির মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ। লিয়াং জানান, দাদা বা নানারা তাদের দেখাশোনা করলেও, বাবামা সগে না থাকার ফলে এসব কর্মীর ছেলেমেয়েদের জন্য নানাধরনের সামাজিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। গ্রামভিত্তিক এই সংসারগুলোয় পারিবারিক বন্ধন তৈরি হচ্ছে না। এসব ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শেষ করে হয়তো বাবার পদাঙ্কই অনুসরণ করবে- নিজেও শহরে কাজের খোঁজে ছুটবে। কিন্তু বেড়ে ওঠার বছরগুলোতে তারা একা। একটা গোটা প্রজন্ম একাকীত্বের শিকার। গ্রাম যদি টিকে থাকার উপযুক্ত না হয়, এবং সে কারণে যদি গ্রামীণ জনপদের মৃত্যু ঘটে, আমি সেটা মেনে নেব। কিন্তু মানুষের আরো সৃজনশীল হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তার মতে, গ্রামের আশপাশের শহরগুলোতে কাজের সুযোগ তৈরি হলে মানুষ ঘনঘন গ্রামে ফেরত যেতে পারবে। সন্তানদেরও অনেক বেশি সান্নিধ্য দিতে পারবে। গ্রামের অর্থনীতি একদিকে সমৃদ্ধ হবে, অন্যদিকে, গ্রামের জীবনের সঙ্গে তাদের একটা যোগসূত্রও তৈরি হবে। এতে গ্রামও বাঁচবে, পরিবারও বাঁচবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়