চট্টগ্রামে সৈকতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও : বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন > ঢিলেঢালা অভিযানে ১১ জনকে জরিমানা

পরের সংবাদ

সাক্ষাৎকার : এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার > নিরাপদ ও আধুনিক নগর গড়াই লক্ষ্য

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : একটি নিরাপদ ও আধুনিক মহানগর গড়ার আকাক্সক্ষা নিয়ে আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন বিএনপি থেকে পদচ্যুত এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। এজন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াও আগামী ১০০ বছরকে সামনে রেখে একটি দীর্ঘমেয়াদি ‘গ্রান্ড মাস্টার প্লানে’র খসড়া প্রণয়ন করেছেন তিনি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাসযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত পরিবেশবান্ধব একটি নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। গত সোমবার ভোরের কাগজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নারায়ণগঞ্জ শহরকে নিয়ে এসব পরিকল্পনার কথা জানান এই স্বতন্ত্র প্রার্থী। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আপনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন, নির্বাচনের পরিবেশ কেমন? জবাবে সরকারদলীয় প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তৈমূর বলেন, সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর (আইভী) পক্ষে রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে। তিনি শুরু থেকেই সেই সুবিধা নিয়ে আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। পদত্যাগী হওয়া সত্ত্বেও দেহরক্ষী, পিএসসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। আমরা কয়েকটি সুস্পষ্ট অভিযোগ দেয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে তার দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বুলি আওড়াচ্ছেন, অন্যদিকে আমার গণজোয়ার ঠেকাতে কর্মী-সমর্থকদের পরোক্ষভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমার লোকজনদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব কারণে পরিবেশটা জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। সামনের দিনের কথা বলতে পারছি না।
নগরীর প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন কিনা, নির্বাচিত হলে সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করবেন? জবাবে তৈমূর বলেন, আমি দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়সহ শিক্ষা, সামাজিক, প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট দুর্যোগসহ কৃত্রিম সংকটে সর্বক্ষেত্রে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করেছি। এজন্য মিছিলে গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ বহুবার কারাবরণ এবং রাজপথে পুলিশ দ্বারা নিগৃহীত হয়েছি, কিন্তু থেমে যাইনি। বিগত দিনে আমার গণবিরোধী কোনো ভূমিকা নেই। এখন আমি নগরবাসীর সেবা করার উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে হাতি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছি। আল্লাহর মেহেরবানিতে আমি নির্বাচিত হলে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে পরামর্শক্রমে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াও আগামী ১০০ বছরকে সামনে রেখে একটি দীর্ঘমেয়াদি গ্রান্ড মাস্টার প্লানের খসড়া প্রণয়ন করেছি। সর্বস্তরের জনগণের মতামতের ভিত্তিতে, গৃহীত চূড়ান্ত প্লান অনুযায়ী শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাসযোগ্য, বিজ্ঞানসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক একটি নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার বীজ বপন করব। অধিকন্তু নারায়ণগঞ্জ হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। প্রশাসনিকভাবে সিটি করপোরেশনকে গণমুখী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ঠিকাদারির কোনো প্রকার সিন্ডিকেটকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হবে না। নাগরিক সুবিধা জনগণের দ্বারে পৌঁছে দেয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা আমার থাকবে। এ সময় নৌকা মার্কার প্রার্থী আইভীর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ১৮ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের মেয়র পদে দায়িত্বে আছেন। কিন্তু এত দীর্ঘ সময় নারায়ণগঞ্জের মানুষকে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি?। নারায়ণগঞ্জকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা ও মশা-মাছির উপদ্রবে বর্তমানে নগরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ। উল্টো জনগণের অধিকারকে সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি করেছেন।
নগরবাসী জলাবদ্ধতা, যানজট, দূষণমুক্ত শহর চায়- জানিয়ে তৈমূর আলম বলেন, আমি নির্বাচিত হলে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করব। এছাড়া জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি অডিটোরিয়াম, ব্যয়ামাগার, খেলার মাঠ, বিনোদন সেন্টার, মহিলাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা, সিনিয়র সিটিজেনদের বিনোদন কেন্দ্রসহ যানজট নিরসনে একটি কমিউনিটি ফোর্স গঠন করব। এখানে গ্যাসের সমস্যা রয়েছে, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে, এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সর্বোপরি আমি আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নারায়ণগঞ্জকে পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন একটি শহর বানাব। নগর ভবন ঠিকাদার সিন্ডিকেটমুক্ত করে প্রকৃতপক্ষে নাগরিকদের সেবার ভবন, সেবকের ভবন রূপে প্রতিষ্ঠা করব।
নির্বাচনে অংশ নেয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির সব পর্যায়ের পদ থেকে আপনাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে- এক্ষেত্রে আপনার ভোটে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন কিনা, এছাড়া বিএনপির জেলা নেতাদেরও প্রচারণায় আপনার পাশে দেখা যাচ্ছে না। জবাবে তিনি বলেন, দল থেকে অব্যাহতিতে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না। কারণ বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সর্বস্তরের মানুষ আমার সঙ্গে আছে। আমি আজকেও আমার দলের মহানগরের সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি তার ছেলের নির্বাচনী প্রচারণায়ও নামতে পারছেন না। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এছাড়া একটা রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল থাকে। নানা সময়ে নানা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, দলগতভাবে বিএনপি নির্বাচন করবে না। তবে কেউ নির্বাচন করলে তাতে দলের আপত্তি নেই। দল আমাকে বহিষ্কার করেছে, জিতলে আবার টেনে নেবে। এটাই নিয়ম।
২০১১ সালে আপনি বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু নির্বাচনের মাত্র সাত ঘণ্টা আগে আকস্মিকভাবে বসে গিয়েছিলেন, এ বিষয়ে নির্বাচনী মাঠে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে?। জবাবে তিনি বলেন, অনেকে বলে আমি নির্বাচন থেকে সরে এসেছি, যেখানে যাই মানুষ আমাকে একই প্রশ্ন করে এবং বলে আপনি কিন্তু এবার বসবেন না। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি। আমি তো বসে যাইনি, দল (বিএনপি) বসে গেছে। যেহেতু আমি বিএনপির নমিনেশনপ্রাপ্ত ছিলাম। ফলে আমার কিছু করার ছিল না। আমি কথা অমান্য করিনি। সে সময় অপমান বোধ করায় পরবর্তীতে ২০১৬ সালে আমাকে যথেষ্ট অফার করার পরও আমি নির্বাচন করিনি। কিন্তু ২০২১ সালে এসে দেখলাম, নারায়ণগঞ্জ শহরে সে (আইভী) সিন্ডিকেট করে ফেলেছে। ঠিকাদাররা সিটি চালায়, এটা ওপেন সিক্রেট, সবাই জানে। এছাড়া সমস্যার অন্ত নেই। এসব পরিস্থিতিতে জনগণের চাপে নির্বাচনের মাঠে নামতে হয়েছে।
নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন কিনা? জবাবে তিনি বলেন, আইভী নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবে বলে সরকারি দলের মুখপাত্ররা ঘোষণা দিচ্ছে, যা নির্বাচন কমিশন ও জনগণকে প্রভাবিত করার শামিল। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে নির্বাচনকে কলুষিত করা হলে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। এখন সরকারপ্রধান যদি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, তার প্রার্থীকে পাস করাতেই হবে, সেক্ষেত্রে তিনি কী ভূমিকা রাখেন এটা দেখার বিষয়। আমি মনে করি সরকারপ্রধান তার ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন। আমি আশাবাদী। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে, জনগণ অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে ইনশাআল্লাহ আমি নির্বাচিত হব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়