চট্টগ্রামে সৈকতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও : বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন > ঢিলেঢালা অভিযানে ১১ জনকে জরিমানা

পরের সংবাদ

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে সামাজিক বনায়ন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবী নামের গ্রহটির চারপাশে ঘিরে রাখা বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে ক্রমে পৃথিবী মনুষ্যবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে অচিরেই পৃথিবীর মানুষসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। বর্তমান সময়ে পরিবেশগত সমস্যার মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন একটি প্রধান সমস্যা। বিশেষ করে সমুদ্র-তীরবর্তী দেশগুলোর জন্য এটি একটি মারাত্মক সমস্যা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশ একটি সমুদ্র-তীরবর্তী দেশ হওয়া সত্ত্বেও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। পৃথিবীর চলমান যান্ত্রিক সভ্যতা কলকারখানানির্ভর। আর এ কলকারখানা চালানোর জন্য যে জ্বালানি তেল বা কয়লা পোড়ানো হয় তা থেকেই এ মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ ঘটে। এই মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করতে হবে। পৃথিবীজুড়ে তেল কয়লার পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। কার্বন-ডাই অক্সাইড (ঈঙ২) ও মিথেনের মতো বিষাক্ত গ্রিন হাউস গ্যাস, বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে পড়ে। আর এই আটকে পড়া তাপই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। তবে নাইট্রাস অক্সাইডের (ঘ২ঙ) মতো অনেক গ্রিন হাউস গ্যাস প্রাকৃতিকভাবে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলেও, অন্যান্য গ্যাস নির্গমনের জন্য মানুষের ক্রিয়াকলাপ দায়ী। তাপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বনাঞ্চল উজার, পরিবহন ও কলকারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি মনবসৃষ্ট কারণে প্রকৃতিতে মিশে যাচ্ছে লাখ লাখ টন বিষাক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড। প্রতি বছর বিশ্বের মোট কার্বন নির্গমনের ৭০ শতাংশের বেশি নির্গমন হয় কেবল শক্তি উৎপাদনে। বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার অন্যতম কারণ বৃক্ষ নিধন। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রভাব ফেলছে পানি চক্র ও মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমে। কিন্তু বৃক্ষ কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে বাতাসকে করে বিষমুক্ত, পরিবেশকে রাখে শীতল ও স্নিগ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায়ও বৃক্ষের ভূমিকা রয়েছে। ২০০৭ সালের সিডর ও কিছুদিন আগের শতাব্দীর সুপার সাইক্লোন আম্ফান প্রতিরোধে সুন্দরবনের গাছপালার ভূমিকা ছিল মুখ্য। কিন্তু বনভূমি ধ্বংসের ফলে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে এরই সঙ্গে বাড়ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা।
এছাড়াও বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ ধারা ৬, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া সৃষ্টিকারী যানবাহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও দীর্ঘ ২৫ বছর পরও কোনো কার্যকারিতা পায়নি। বর্তমানে ঢাকা শহরে হাজার হাজার ক্ষতিকর ধোঁয়া সৃষ্টিকারী যানবাহন চালু রয়েছে। অথচ এসব যানবাহন থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর ধোয়া বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সর্বোপরি বলা যায় যে আমরা কার্বন নিঃসরণ রোধ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। অন্যদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে সামাজিক বনায়নেরও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছি না বরং বন উজাড় করে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নসহ ঘরবাড়ি নির্মাণ করছি। সামাজিক বনায়ন কথাটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’ স্লোগানটি আর শোনা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে কয়েকশ বছর পর আমাদের দেশ থেকে উপকূলবর্তী ২৩টি জেলা হারিয়ে যাবে। ওহঃবৎমড়াবৎহসবহঃধষ চধহবষ ড়হ পষরসধঃব পযধহমব বা ওচঈঈ এর রিপোর্ট অনুসারে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং তার সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০ সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব কেবলমাত্র বায়ুমণ্ডলীয় উষ্ণতা ও সমুদ্রতলের উচ্চতার পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত নয়, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আজ আবহাওয়ার গতি প্রকৃতির আগাম পূর্বাভাস দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে এবং জলবায়ুগত দুর্যোগ যেমন খরা, বন্যা ও ঝড় প্রভৃতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলো সমুদ্রের গভীরে হারিয়ে যাবে, খরা, বন্যা ঝড়, জলোচ্ছ¡াসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘনঘন দেখা দেবে। সুতরাং আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমাদের পরিবেশ-বিষয়ক আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগ করা উচিত। প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন গ্যাস, কয়লা, তেল ইত্যাদির ব্যবহার যথাযথভাবে নিশ্চিত করা উচিত। তাছাড়া এসব প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। বনায়ন বৈশ্বিক উষ্ণতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের সামাজিক বনায়নের ওপর আরো বেশি বেশি জোর দেয়া উচিত। এর জন্য আমাদের দেশের বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। অসচেতনতাও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ। পরিবেশ রক্ষা ও উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে বৃক্ষরোপণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও তাপমাত্রা স্বভাবিক রাখতে বৃক্ষ রোপণ বৃদ্ধিতে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বনদস্যুদের হাত থেকে বনাঞ্চল রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। অপরিকল্পিত বনাঞ্চল নিধনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ইউনুস আলী রিজু : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়