চট্টগ্রামে সৈকতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও : বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন > ঢিলেঢালা অভিযানে ১১ জনকে জরিমানা

পরের সংবাদ

প্রকল্প সংশোধন : বছরে বাড়তি ব্যয় ৩৭ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০২১ সালে ১৩৩টি প্রকল্পের মধ্যে নতুন প্রকল্পের ব্যয় ও সংশোধিত প্রকল্পে বাড়তি অর্থায়নে মোট ব্যয় ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংশোধিত প্রকল্পগুলোতে বাড়তি ব্যয় কমপক্ষে ৩৭ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। ‘চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১৪ সালের মধ্যে এ বাইপাস সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। ইতোমধ্যে তিন দফায় বেড়েছে ব্যয় ও সময়। গত বছরের শুরুতে সংশোধনীর মাধ্যমে ৮৫৬ কোটি টাকার মূল প্রকল্পটির ব্যয় ছাড়িয়েছে ২ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। সবশেষ মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে ডিসেম্বরে।
গত বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড’ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। ওই সভায় পাস হওয়া ছয় প্রকল্পের তিনটিই ছিল সংশোধিত প্রকল্প। সব মিলে বছরের প্রথম এ সভায় অনুমোদিত নতুন প্রকল্প এবং সংশোধিত প্রকল্পে বাড়তি অর্থায়নের মোট ব্যয় ছিল ৯ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংশোধনীতে ব্যয় ছিল ৬ হাজার ৩২ কোটি টাকার বেশি। শুধু বছরের প্রথম একনেক বৈঠকই নয়, বছরজুড়েই নতুন প্রকল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ছিল সংশোধিত প্রকল্প। করোনাসহ নানা কারণে গত অর্থবছরে মাত্র ১৩টি একনেক সভা হয়। এসব সভায় মোট ১৩৩টি প্রকল্প অনুমোদন হয়, যার মধ্যে ৩৭টিই ছিল সংশোধিত প্রকল্প। অর্থাৎ গত বছর অনুমোদন পাওয়া সাড়ে তিনটি প্রকল্পের মধ্যে একটিতে সময় ও ব্যয় বেড়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ১৩৩টি প্রকল্পের মধ্যে নতুন প্রকল্পের ব্যয় ও সংশোধিত প্রকল্পে বাড়তি অর্থায়নের মোট ব্যয় ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংশোধিত প্রকল্পগুলোতে বাড়তি ব্যয় কমপক্ষে ৩৭ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্প একবার শুরু হলে নানা কারণে তা আর শেষ হতে চায় না। বছরের পর বছর ঝুলে থাকে এসব প্রকল্প। কোনোটিতে জমি অধিগ্রহণে সমস্যা, কোনোটিতে বারবার প্রকল্প পরিচালক বদল, কোথাওবা টেন্ডার জটিলতা থাকে। আবার প্রাথমিক প্রস্তুতি ছাড়া প্রকল্প শুরু করেও তা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলতে থাকে। চলতি বছরেও শুরুতেই একনেকে উঠেছে প্রকল্প সংশোধন। ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বছরের প্রথম একনেকে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর মধ্যে সাতটিই ছিল সংশোধিত। নতুন ও পুরনো প্রকল্পের বাড়তি অংশ মিলে অনুমোদিত প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ১১ হাজার ২২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংশোধিত প্রকল্পগুলোর বাড়তি ব্যয় ৭ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। তবে অনেক সময় সংগত কারণেও প্রকল্প সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে। যেমন- কিছু প্রকল্পে করোনার কারণে বিলম্ব হয়েছে। তবে সংশোধিত প্রকল্পের অনেকই বেশ আগে শুরু হওয়া, যা করোনার আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল।
‘কুষ্টিয়ায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন’ শিরোনামে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১৪ সালে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাঁচবার সময় এবং ব্যয় বাড়ানো হলেও শেষ হয়নি কাজ। ষষ্ঠ দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পটির সংশোধনী একনেকে অনুমোদন হয় গত অক্টোবরে। এভাবে বারবার সংশোধনীতে ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প ৬৮২ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আর সময় বেড়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। এতে তিন বছরের প্রকল্প গড়াচ্ছে ১২ বছরে। চলতি মেয়াদে ক্ষমতায় এসে যথাসময়ে প্রকল্প শেষ করতে বারবার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাধিকবার এ নিয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
২০২০ সালের একনেকে বিরক্তি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প সংশোধন করে সময় ও খরচ বাড়ানো বন্ধ করতে হবে। বারবার সংশোধন, বারবার টাকা বাড়ানো এ ধরনের ধারা বন্ধ করুন। প্রকল্প যে সময়ে নেবেন, সেই সময়ে শেষ হওয়া উচিত। সময় বাড়িয়ে নিয়ে আসেন, ব্যয়ও আরো বাড়িয়ে নিয়ে আসেন; এটা হতে পারে না। তবে ২০২১ সালের প্রথম একনেকে ‘কুষ্টিয়ায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন’ প্রকল্পের মেয়াদ ষষ্ঠ দফায় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলে প্রধানমন্ত্রী সেটি ফেরত পাঠান। প্রকল্পের অনিয়ম খতিয়ে দেখারও নির্দেশ দেন তিনি।
চলতি বছরেও শুরুতেই একনেকে উঠেছে প্রকল্প সংশোধন। ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বছরের প্রথম একনেকে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর মধ্যে সাতটিই ছিল সংশোধিত। নতুন ও পুরনো প্রকল্পের বাড়তি অংশ মিলে অনুমোদিত প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ১১ হাজার ২২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংশোধিত প্রকল্পগুলোর বাড়তি ব্যয় ৭ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রথমে প্রকল্পের শুধু সময় বাড়ানো হয় এবং এরপর ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প সংশোধন করা হয়। বিশেষত শিডিউল রেট, ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন আইটেম অন্তর্ভুক্তকরণ বা কর্মপরিধি বৃদ্ধির নামে কৌশলে প্রকল্পগুলো সংশোধন করা হয়।
চলতি বছরের প্রথম একনেকেও প্রকল্পের বারবার সংশোধনী নিয়ে কথা ওঠে। একনেক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বারবার প্রকল্প সংশোধন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তবুও নানা সময় প্রকল্পে বারবার সংশোধন হয়। তবে বিশেষ বিবেচনায় এটা হতে পারে। চলমান কোনো কাজের পরের পর্যায় শুরু করতে দেরি হলে এবং এতে সাধারণ মানুষ উপকারবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সে ক্ষেত্রে প্রকল্প সংশোধন করে সময় ও কাজ চালিয়ে নেয়া যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে অদক্ষতা এবং বাস্তবায়ন কাজে ধীরগতির কারণে প্রতি বছরই শতাধিক প্রকল্প মাঝপথে সংশোধন করতে হচ্ছে। এতে একদিকে সময়মতো প্রকল্পের সুফল পাওয়া যায় না; অন্যদিকে দীর্ঘ সময় ধরে প্রকল্পের কাজ চলায় ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আবার বেশি প্রকল্প হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়নেও সমস্যা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়