চট্টগ্রামে সৈকতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও : বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন > ঢিলেঢালা অভিযানে ১১ জনকে জরিমানা

পরের সংবাদ

কিছুটা সুস্থতাবোধ করছেন : হাসপাতালে দুই মাস পার খালেদা জিয়ার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : লিভার সিরোসিসের কারণে থেমে থেমে ক্ষুদ্রান্তে রক্তক্ষরণ, রক্তবমি, হিমোগেøাবিন ওঠানামাসহ নানা তীব্র জটিলতায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে দুই মাস পার করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার ক্ষুদ্রান্তের নিচে রক্তক্ষরণের উৎস বন্ধ করতে ‘ব্যান্ড লাইগেশন’ করা হয়েছে। পালাক্রমে দেয়া হয়েছে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন। গত ৯ জানুয়ারি সিসিইউ থেকে কেবিনে নেয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে আগের চেয়ে একটু সুস্থ আছেন বিএনপি প্রধান।
পরিস্থিতি একটু ভালো হলেও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ায় যে কোনো সময় নতুন উৎস দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে এমন আশঙ্কাও করেছেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বোর্ডের সদস্যরা। জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, সিসিইউ থেকে কিবিনে নেয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে (খালেদা জিয়াকে) পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। মেডিকেল বোর্ড সার্বক্ষণিক চিন্তিত। যে কোনো সময় তার অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠালে তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব হতো।
হাসপাতালে ভর্তির দুই দিন আগে গত ১১ নভেম্বর বোনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার। এই আবেদন আইনি মতামতের জন্য পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দেখা করেন আইনমন্ত্রীর সঙ্গে।
এরপর থেকেই মন্ত্রী বলেছেন আইন এবং নজির খুঁজছেন তিনি। ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে ‘আইনি উপায়’ খোঁজার কথা বলেছিলেন আইনমন্ত্রী। অবশেষে ২৮ ডিসেম্বর তিনি আইনি মতামত পাঠান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ওই দিন বিকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বরাত দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার একটি চিঠি দিয়েছেন আমরা দেখেছি এবং আইনমন্ত্রী একটি মতামত দিয়েছেন সেটা আমরা পর্যালোচনা করছি। আইনগত কোনো সুযোগ নেই।
খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আইনি মতামত পাওয়ার পর থেকেই সরকার খালেদা জিয়ার জীবন নাশের ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের পতনের হুমকিও দিচ্ছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। কেন সরকার তাকে বিদেশে যেতে দিতে চায় না? তারা আইনের কথা বলে। কিন্তু আইনের মধ্যেই বলা আছে সরকার চাইলেই তাকে এ মুহূর্তে বিদেশে পাঠাতে পারে। বাধা আইন নয়। বাধা হচ্ছে এই সরকার। সরকার খালেদা জিয়াকে স্তব্ধ করে দিতে চায়।
১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে অন্ত্রে কয়েক দফা রক্তক্ষরণে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন খালেদা জিয়া। রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখলেই ইনজেকশন আর ওষুধপত্র দিয়ে তাৎক্ষণিক তা বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন চিকিৎসকরা। তবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে ২৪ নভেম্বর চিকিৎসকরা তার এন্ডোস্কপি ও কলোনস্কোপি করেন। ২৮ নভেম্বর রাতে সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ড জানায়, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। ২৭ ডিসেম্বর ক্যাপসুল এন্ডোস্কপি পরীক্ষায় তার ক্ষুদ্রান্তের নিচে রক্তক্ষরণের এই উৎসটি দেখতে পান চিকিৎসকরা। পরে ক্ষুদ্রান্তের নিচে রক্তক্ষরণের উৎস বন্ধ করতে ‘ব্যান্ড লাইগেশন’ করা হয়। ফলে সাময়িকভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় খালেদার।
মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানান, স্বাস্থ্যের প্যারামিটারগুলো এখানো ওঠানামা করছে এবং হিমোগেøাবিন কমে যাচ্ছে। আবারো রক্ত সরবরাহ করে তা ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব কারণে খালেদা জিয়ার শরীরে খনিজে অসমতা দেখা দিচ্ছে। ফলে কথাবার্তায় অসংলগ্নতা দেখা দিচ্ছে। এভাবে স্বাস্থ্যের প্যারামিটারগুলো নিচে নামা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাবে।
হাসপাতালে যেভাবে কাটছে দিন : হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, অনেকটা নিরিবিলি সময় কাটছে খালেদা জিয়ার। ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে তেমন একটা কথা বলেন না তিনি। দিনে দুবার খাবার নিয়ে শাশুড়িকে দেখতে আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। এ সময় সিঁথি শাশুড়িকে উঠিয়ে বসান। নিজ হাতে খাবার খাওয়ান। টুকিটাকি কথাবার্তা বলেন। এর বাইরে বেশির ভাগ সময়ই চোখ বুজে থাকেন খালেদা জিয়া। সিসিইউতে তরল খাবার ছাড়া মুখে কিছুই খেতে না পারলেও এখন নরম খিচুড়ি, ডিম ও রুটি খেতে পারছেন খালেদা জিয়া। তবে শরীর অত্যন্ত দুর্বল।
হাসপাতালে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক, পরিবারের সদস্য এবং শুধু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাসপাতালে ঢোকার অনুমতি রয়েছে। দলের সিনিয়র নেতারা এখনো হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতি পাননি। সেখানে সার্বক্ষণিক থাকেন ডা. এ জেড এম জাহিদ। ছোট ছেলের স্ত্রী সিঁথি ছাড়া খালেদা জিয়ার পরিবারের অন্য কোনো সদস্য এখানো তাকে হাসপাতালে দেখতে যাননি। কেবিনের সামনে তার নিরাপত্তার জন্য পোশাকধারী তিনজন পুলিশ থাকে। হাসপাতালে খালেদা জিয়ার কেবিনের পাশে আরেকটি কেবিন বুকিং রয়েছে। কেবিনের সামনে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর (সিএসএফ) বেশ কয়েকজন সদস্য সব সময় দায়িত্ব পালন করছে। খালেদা জিয়ার গাড়িচালকও নিয়মিত হাসপাতালে আসা-যাওয়া করছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জামার্নি এই ৩টি দেশের যে কোনো একটিতে নেয়ার পারমর্শ দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। বোর্ড প্রধান প্রফেসর ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য এ মুহূর্তে যে প্রযুক্তি দরকার তা ভারতীয় উপমহাদেশে নেই। এসব উন্নত চিকিৎসা একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতেই সম্ভব। এখনই দেশের বাইরে না নেয়া হলে আবার রক্তক্ষরণ হলে বন্ধের চিকিৎসা দেশে নেই বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়