হাতিরঝিলের সড়ক বন্ধে রাজধানীতে তীব্র যানজট

আগের সংবাদ

বিশাল লক্ষ্যমাত্রার বাজেট প্রস্তুতি : সম্ভাব্য আকার ৬,৭৫,১৩৯ কোটি টাকা, আয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা

পরের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রী চেঙ্গী সেতুর উদ্বোধন করবেন আজ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নন্দন দেবনাথ, রাঙ্গামাটি থেকে : দীর্ঘ ৬০ বছর পর রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার তিন লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আজ বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলার চেঙ্গী সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতীক্ষিত এ সেতু উদ্বোধনের ফলে রাঙ্গামাটির তিনটি উপজেলার যোগাযোগ সুবিধা নিশ্চিত হলো। বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় সড়কপথে যাওয়ার জন্য রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হতো। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণ হওয়ায় তিন উপজেলার মানুষ সহজেই জেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। একটি সেতুতেই দুর্গমতা ঘুচছে তিন উপজেলার। পাশাপাশি খুব সহজেই সাজেকে চলে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে নানিয়ারচর থেকে লংগদু ১৮ কিলোমিটারের সড়কটি এখনো নির্মাণ না হওয়ায় লংগদু ও বাঘাইছড়িবাসী সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে এর সুবিধা পাবেন না। তবে সড়কটির প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।
নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিউলি রহমান তিন্নি সাংবাদিকদের জানান, বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু উদ্বোধন করা হচ্ছে। বুধবার নানিয়ারচরে সাপ্তাহিক বাজারের দিন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাপ্তাহিক বাজার বন্ধ রাখা হয়েছে। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি। নানিয়ারচর উপজলা কনফারেন্স রুমে রাঙ্গামাটির সাংসদ সাবেক পার্বত্যমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন বলে ইউএনও মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যবসায়ীরা জানান, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির দীর্ঘ ৬০ বছর পর নানিয়ারচরে দীর্ঘদিনের স্বপ্নের সেতু বাস্তবায়নে রাঙ্গামাটি জেলার দুর্গম তিন উপজেলার মানুষ অত্যন্ত আনন্দিত। চেঙ্গী নদীর উপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু দিয়ে শুধু নানিয়ারচর উপজেলা দিয়ে সহজেই যাওয়া যাবে লংগদু ও বাঘাইছড়ি এবং সাজেকে। একসময় নানিয়ারচর উপজেলা সদরে যাওয়ার মতো সরাসরি কোনো সড়ক ছিল না। নৌপথে যেতে ২ ঘণ্টা সময় লাগত, এখন ১ ঘণ্টারও কম সময়ে নানিয়ারচর সদরে সড়কপথে যাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে, রাঙ্গামাটি থেকে বর্তমানে বাঘাইছড়িতে সড়কপথে যেতে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ। সময় লাগে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা। তাছাড়া সরাসরি বাস সার্ভিস চালু না থাকায় এ সময় আরো বেশি লাগে। তাই কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর নৌপথেই উপজেলাবাসীকে জেলায় যাতায়াত করতে হতো। তাতেও সময় লাগত প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা। একইভাবে রাঙ্গামাটি থেকে সড়কপথে লংগদু যেতেও প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সময়টাও লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। এ উপজেলার সঙ্গেও রাঙ্গামাটি সদরের কোনো বাস সার্ভিস চালু নেই। নৌপথেই একমাত্র ভরসা। কিন্তু নানিয়ারচরের চেঙ্গী সেতুর মাধ্যমে সেই দুর্গমতা অনেকাংশে ঘুচিয়ে যাচ্ছে।
রাঙ্গামাটি থেকে নানিয়ারচরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। নানিয়ারচর থেকে লংগদু সদরের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার এবং বাঘাইছড়ির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটারের মতো। এতে ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি লংগদু বা বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব হবে।
নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, এক সেতুর মাধ্যমে আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমরা এখন খুব সহজেই জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারব। তাছাড়া এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্যের পরিবহন ও বাজারজাত সহজ হবে। একই সঙ্গে বাকি দুই উপজেলা লংগদু, বাঘাইছড়ি হয়ে আমরা সাজেকেও চলে যেতে পারব।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরাসরি রাঙ্গামাটি-নানিয়ারচর- লংগদু-বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৩ সালে নানিয়ারচর অংশে চেঙ্গী নদীর উপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। অবশেষে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নানিয়ারচরের চেঙ্গী নদীর উপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। ঘোষণার দুই বছর পর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। এটি বাস্তবায়নে কাজ করেছে সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)।
উল্লেখ্য, সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণে প্রায় ১২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এবং দুই কিলোমিটার সংযোগ সড়কের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।
রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন বলেন, নানিয়ারচর-লংগদু সড়ক নির্মাণে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। অতি সহসাই সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়