রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের আগুন, পুড়ল সহ¯্রাধিক ঘর

আগের সংবাদ

তিন জট থেকে মুক্তির প্রত্যাশা > নাসিক নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মতামত : জলজট, যানজট ও আবর্জনা জট নারায়ণগঞ্জবাসীর গলার কাঁটা

পরের সংবাদ

স্টল বরাদ্দ ও হস্তান্তরে অনিয়ম : বছরে ৬ কোটি টাকার রাজস্ব হারায় বরিশাল জেলা পরিষদ!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশাল জেলা পরিষদের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নজরদারির অভাবে বছরে প্রায় ৬ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জেলা পরিষদের স্টল ব্যবহার করে যা ভোগ করছে লিজগ্রহীতারা। এতো বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারালেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বরিশাল জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া পরিষদের স্টল বরাদ্দ নিয়ে বিক্রি বা অন্যত্র হস্তান্তরের (শর্তসাপেক্ষে) কোনো বিধান না থাকলেও অধিকাংশ লিজগ্রহীতা হস্তান্তরের নাম করে মূলত স্টলগুলো অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এতে সহযোগিতা করছেন খোদ জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী ও সার্ভেয়াররা। তবে খুব শিগগিরই দৃশ্যমান অভিযানের কথা জানিয়ে বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন অভিযোগের সত্যতা পেলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে।
সূত্রমতে, বরিশাল জেলা পরিষদের নিজস্ব মালিকানাধীন ১৭টি মার্কেটে ৩৭৯টি স্টল রয়েছে। যা দরপত্রের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে লিজ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি স্টলের ভাড়া নিচতলা প্রতি স্কয়ার ফুট সাড়ে ১২ টাকা আর দোতলা প্রতি স্কয়ার ফুট সোয়া ৬ টাকা। সে হিসেবে গড়ে প্রত্যেকটি স্টলের ভাড়া দাঁড়ায় ১ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন হিসাব। লিজগ্রহীতারা প্রত্যেকটি স্টলের ভাড়া সর্বনিম্ন ৫ হাজার এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা দিচ্ছেন।
হিসাব মতে, বরিশাল জেলা পরিষদের অর্থাৎ সরকারি জমি/স্টল ব্যবহার করে মধ্যস্বত্বভোগী/লিজগ্রহীতারা বছরে প্রায় ৭ কোটি টাকা আয় করলেও সরকারি খাতে (ভাড়া হিসেবে) জমা দিচ্ছেন মাত্র ৬৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। বিশাল অঙ্কের এ শুভংকরের ফাঁকি দিয়েও মুনাফাভোগীরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। আর বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন খোদ জেলা পরিষদের দায়িত্বরতরা। অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর এমনটি চলতে থাকলেও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নিশ্চুপ রয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ উচ্চমান সহকারীরা।
এদিকে বরিশাল জেলা পরিষদের কত মার্কেট বা স্টল রয়েছে তারও সঠিক হিসাব দিতে অনীহা সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে জানতে জেলা পরিষদে গিয়ে যোগাযোগ করা হয় উচ্চমান সহকারী মো. ছরোয়ার হোসেনের সঙ্গে। কিন্তু তিনি সঠিক হিসাব দিতে না পেরে অপর উচ্চমান সহকারী মোজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। অফিস চলাকালীন দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তার দেখা পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, দুপুরে খাবার পরে তিনি হয়তো মসজিদে গিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
পরদিন উচ্চমান সহকারী মো. মোজাহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, সম্ভবত ১৪টি মার্কেট আছে। তবে কতটি স্টল আছে তা তিনি জানাতে পারেননি। এক প্রশ্নের জবাবে তার যুক্তি, ১০ বছর আগে যত টাকা দিয়ে লিজগ্রহীতা স্টল বরাদ্দ নিয়েছেন ১০ বছরে সেই টাকার মান অনুযায়ী বেশি টাকা নিয়ে যে কেউ স্টল হস্তান্তর যে কোনো লোকের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন। তবে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন স্টল বরাদ্দ নিয়ে নিজে না চালাতে চাইলে পরিষদের নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নিজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্টলটি হস্তান্তর করতে পারেন।
এদিকে জেলা পরিষদের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, অধিকাংশ দোকানই ভাড়ায় চলছে। কোনো লিজগ্রহীতাই নিজে স্টল চালাচ্ছেন না। আরো জানা গেছে, একেকটি স্টল সর্বনি¤œ ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নিয়ে মাসিক ৪ হাজার থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছেন স্টল বরাদ্দগ্রহীতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চকবাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, ৫ লাখ টাকা অগ্রিম ও মাসিক ভাড়া ২৫ হাজার টাকা দিয়ে তিনি স্টলটি ভাড়া নিয়েছেন। বটতলা এলাকার এক ভাড়াটিয়া জানান, ৩ লাখ অগ্রিম ও মাসিক ভাড়া ৮ হাজার হিসেবে তিনি স্টলটি ভাড়া নিয়েছেন। তারা আরো জানান, প্রতি বছর অগ্রিম ও ভাড়া বাড়াচ্ছেন স্টল মালিক। করোনা পরিস্থিতিতেও কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছেন না তারা।
বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব ভোরের কাগজকে জানান, স্টল বরাদ্দ নিয়ে বিক্রির কোনো বিধান নেই, এটা সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে সত্যতা যাচাই করে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়