রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের আগুন, পুড়ল সহ¯্রাধিক ঘর

আগের সংবাদ

তিন জট থেকে মুক্তির প্রত্যাশা > নাসিক নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মতামত : জলজট, যানজট ও আবর্জনা জট নারায়ণগঞ্জবাসীর গলার কাঁটা

পরের সংবাদ

‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ > দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই লক্ষ্য : শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি। রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) শহীদ মনিরুল আলম মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী স্বাগত ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার বাবাকে লিয়ে লেখা ‘বাবা’ এবং মা’কে নিয়ে লেখা ‘রেনু আমার মা’ কবিতা দুটি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করে শোনান বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।
ছোট ছেলেমেয়েদের অংশগ্রহণে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপরই এতে মুজিববর্ষের থিম সং- ‘তুমি বাংলার ধ্রæবতারা, হৃদয়ের বাতিঘর’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতার স্বদেশে ফিরে আসার ওপর একটি ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন পরিবেশিত হয়। জাতির পিতার ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্সের ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেয়া ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশও অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়।
ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত করে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা। আজকের দিনে সেই প্রত্যয়ই ব্যক্ত করছি। ইনশাআল্লাহ যতটুকু পারি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্যটা পরিবর্তন করে দিয়ে যাব। দেশবাসীকে আমি আহ্বানই জানাই- আজকে যে অগ্রগতি হয়েছে এটা ধরে রেখেই যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই যে আদর্শের জন্য আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছিলেন, জেল-জুলুম অত্যাচার বারবার সহ্য করেছেন, নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন যে মানুষগুলোর জন্য; সেই মানুষগুলোর ভাগ্য গড়া। পরপর তিনবার ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দেয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, তারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, বারবার আমি ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
জনগণের প্রতি ভালোবাসার কারণেই বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেই সোজা জনগণের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কারো কথা না ভেবে তিনি চলে গেলেন, সোজা তার প্রিয় জনগণের কাছে। যে জনগণের জন্য তিনি তার জীবনটা উৎসর্গ করেছেন। দেশে ফিরেই জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই ভাষণটা ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা। রাষ্ট্রের কাঠামো কী রকম হবে, কীভাবে চলবে, কোন আদর্শে চলবে- সবই তিনি ওই ভাষণে তুলে ধরেছেন। জাতির পিতা কখনোই মৃত্যুকে ভয় পেতেন না। তিনি তার ভাষণে এটাও বলেছিলেন, যখন তাকে ফাঁসি দেয়ার নির্দেশ হয় তখন একটি দাবি তিনি শুধু করেছিলেন যে- আমাকে তোমরা মেরে ফেলতে পারো। কিন্তু আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে পৌঁছে দিও। আমার বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও। তিনি সেই ভাষণে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন যে, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে, বারবার মরে না।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আঘাতটা শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা না। এই আঘাতটা ছিল একটা স্বাধীন দেশের আদর্শকে হত্যা করা, চেতনাকে হত্যা করা।
প্রসঙ্গত; ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস ১৪ দিন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিজীবন শেষে ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির পিতা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। গ্রেপ্তারের পর বঙ্গবন্ধুকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৫ মার্চ রাতেই নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বর হামলা চালায় হানাদার বাহিনী। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। বিজয়ের পর বিশ্ব জনমতের চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তির পর বঙ্গবন্ধু লন্ডন যান। সেখান থেকে ১০ জানুয়ারি দিল্লি হয়ে সদ্য স্বাধীন দেশের রাজধানীর ঢাকায় আসেন। দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে যান। সেখানে তিনি রক্তাক্ত যুদ্ধে বিজয়ী স্বাধীন জাতির উদ্দেশে প্রায় কুড়ি মিনিটের আবেগঘন ভাষণ দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়