রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের আগুন, পুড়ল সহ¯্রাধিক ঘর

আগের সংবাদ

তিন জট থেকে মুক্তির প্রত্যাশা > নাসিক নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মতামত : জলজট, যানজট ও আবর্জনা জট নারায়ণগঞ্জবাসীর গলার কাঁটা

পরের সংবাদ

বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরের মহাকর্মযজ্ঞ : বদলে যাচ্ছে মহেশখালীর চিত্র

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম বশির উল্লাহ, মহেশখালী (কক্সবাজার) থেকে : যতদূর চোখ যায়, দেখা যায় মহাকর্মযজ্ঞ। প্রথম দেখায় ঠিক বোঝার উপায় নেই এটি কোন জায়গা। মনে হবে উন্নত বিশ্বের প্রথম সারির কোনো সমুদ্রবন্দর। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ী-ধলঘাটার চিত্র এটি। এখানে নির্মাণ হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। কাজ শেষ হলে এটি হবে ট্রানজিট পোর্ট তথা বিশ্ববাণিজ্যের আঞ্চলিক বন্দর, যার সুবিধা পাবে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত অঙ্গরাজ্য, নেপাল, ভুটানসহ প্রতিবেশী দেশগুলো। ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত দুটি জেটির কাজ শেষ করে এ বন্দরে জাহাজ ভেড়ানোর টার্গেট নিয়ে নির্মাণ কাজ এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দরসহ একগুচ্ছ মেগা প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে এ দ্বীপ উপজেলার চিত্র। এরই মধ্যে মাথা তুলছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, প্রস্তুত হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দরের জেটিও। বছর চারেক আগেও মাতারবাড়ী-ধলঘাটার দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে চোখে পড়ত শুধুই লবণ চাষ ও চিংড়ি মাছের ঘের। এখন সেখানে টারবাইন, চিমনি মাথা তুলে উঁকি দিচ্ছে। নির্মাণযজ্ঞে অবয়ব পেতে শুরু করেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। গভীর সমুদ্রে একটি বন্দর স্থাপনের পরিকল্পনাও বাস্তব রূপ পেতে শুরু করেছে। তীরে জেটি তৈরির কাজও ইতোমধ্যে এগিয়েছে অনেকটা, ভিড়েছে প্রকল্পের জন্য আনা মালবাহী জাহাজও। মাতারবাড়ী ও ধলঘাটার এসব নির্মাণ কাজকে কেন্দ্র করে দিন-রাতের নিবিড় কর্মযজ্ঞে আমূল পাল্টে গেছে সমুদ্র তীরবর্তী এই অঞ্চলের যুগ যুগ ধরে দেখে আসা সেই দৃশ্যপট।
সরকারের অগ্রাধিকার এই প্রকল্পে ক্রেন আর নানা ধরনের ভারি যন্ত্রপাতি দিয়ে বিশাল এক নির্মাণযজ্ঞের কাজ করে চলেছেন দেশি-বিদেশি হাজারো কর্মী। বিদ্যুৎ বিভাগ প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নিয়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে সেখানে। সঙ্গে কয়লা আমদানির জন্য একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজও চলছে। প্রাথমিকভাবে বন্দরটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য হলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী এটিই হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম গভীরসমুদ্র বন্দর। পাশাপাশি মাতারবাড়ীকে গড়ে তোলা হবে বিদ্যুৎ ও শিল্পোৎপাদন এবং জ্বালানি আমদানির হাব হিসেবে। কয়েকটি মন্ত্রণালয় মিলে ধাপে ধাপে সেখানে বাস্তবায়ন করবে ৬৮টি প্রকল্প।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্যাস আমদানির জন্য টার্মিনাল ছাড়াও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ পুরো প্রকল্প এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে হাজার হাজার বিঘা জমি বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক মিটার উঁচু করা হয়েছে।
জাপানি সহায়তা সংস্থা জাইকার সহযোগিতায় মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমিতে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। শুরু হয় ২০১৮ সালে। বন্দর নির্মাণের কাজ শেষ হলে ৫৯ ফুট গভীর চ্যানেল দিয়ে এই বন্দরে ৮০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। জাপানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে মাতারবাড়ীর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হবে, সেটি হবে জাপানের কাশিমা বন্দরের মতো। গভীর সমুদ্রবন্দরটি স্থানীয়দের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুনজর পড়ায় মহেশখালীতে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে, সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে গেলে এই এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মতো জোয়ার নির্ভর হবে না মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর। এখানে থাকবে ২৪ ঘণ্টার নেভিগেশন সুবিধা।
মাতারবাড়ী প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের দুটি জেটি ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। একটা কয়লার জন্য, আরেকটটা তেলের। চ্যানেল প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রথমে ৬টি জেটি এবং পরে আরো জেটি নির্মাণ করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়