রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের আগুন, পুড়ল সহ¯্রাধিক ঘর

আগের সংবাদ

তিন জট থেকে মুক্তির প্রত্যাশা > নাসিক নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মতামত : জলজট, যানজট ও আবর্জনা জট নারায়ণগঞ্জবাসীর গলার কাঁটা

পরের সংবাদ

বাঁধ অপসারণ করে নদী খননের দাবি স্থানীয়দের : তাহিরপুরের দুঃখ পাটলাই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : নদী শুকিয়ে যাওয়ায় (পাটলাই নদী) ৩০ বছর ধরে কষ্টে আছেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের প্রায় দেড় লাখ মানুষ। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন বড়ছড়ার প্রায় ৪০০ আমদানিকারকের দুঃখ হয়ে আছে এই নদী। আমদানিকারকরা ভারতের মেঘালয় থেকে কয়লা-পাথর আমদানি করে প্রায় ৫ গুণ পরিবহন খরচ দিয়ে একেক সময় একেকভাবে কয়লা-পাথর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দিচ্ছেন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের বড়ছড়া শুল্ক স্টেশন চালু হয় ১৯৯১ সালে। সেই থেকেই ভারতের মেঘালয় থেকে শুষ্ক মৌসুমে কয়লা-পাথর আমদানি হয়ে আসছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়লা-পাথর সরবরাহ হয় শুষ্ক সময়েই বেশি। সম্ভাবনাময় এই শুল্ক স্টেশনের আমদানিকারকদের কষ্ট এখন পাটলাই নদী। পাহাড়ি এই নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হেমন্তে কয়লা বোঝাই নৌকা চলাচল করতে পারে না।
প্রবীণ আমদানিকারকরা জানালেন, শুল্ক স্টেশন চালু হওয়ার শুরুর দিকে পাটলাই নদীর ডাম্পেরবাজার নতুনবাজার এলাকায় বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা হতো। তখন এই ৫ কিলোমিটার ছোট ছোট নৌকা দিয়ে ৪-৫ টন করে কয়লা ডাম্পেরবাজার পর্যন্ত নেয়া হতো। পরে বাঁধের কাছে নদীর পাড়ে কয়লা আনলোড করে আবার বড় বাল্কহেড বা ট্রলারে তুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়লা পাথর পৌঁছে দিতেন আমদানিকারকরা।
বছর বছর নদীর বুকে বাঁধ দেয়ায় এই দুঃখ আরো বেড়েছে। পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসা পলি ও বালিতে নদী ভরাট হয়েছে বছর বছর। গত প্রায় ৬ বছর হয় ডাম্পের বাজারে বাঁধ দিলেও বড়ছড়া থেকে ডাম্পের বাজার পর্যন্ত শুকনো মৌসুমে নৌকা চালানো যায় না। ভাটির দিকে শ্রীপুর পর্যন্ত নদী ভরাট হয়েছে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সদস্য সচিব রাজেশ তালুকদার বলেন, ১৯৯১ সালে বড়ছড়া শুল্ক স্টেশন চালু হওয়ার পর নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখে শুকনো মৌসুমের কয়েক মাস বড়ছড়া থেকে ডাম্পেরবাজার বাঁধ পর্যন্ত ছোট নৌকা দিয়ে কয়লা পরিবহন করা হয়েছে। বাঁধের পাশে নদীর পাড়ে কয়লা নামিয়ে শেষে আরেক ট্রলারে বা বাল্কহেডে তুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো।
এখন নদী আরো বেশি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি আটকানো হয় না। বাঁধের একটি অংশ দিয়ে পানি ছেড়ে দেয়া হয়।
ছোট ছোট ট্রলি দিয়ে টেকেরঘাট হয়ে ডাম্পেরবাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার অংশ মাটির সড়ক দিয়ে কয়লা পরিবহন করা হয়। নদীর বুকে দেয়া বাঁধ দিয়ে ওপারে কয়লা পরিবহনের পর আবার ছোট নৌকা দিয়ে শ্রীপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে নেয়া হয় কয়লা। শেষে বাল্কহেড বা ট্রলারে কয়লা বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়।
রাজেশ জানালেন, নদী খননের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে বাঁধ অপসারণ করে নদী খনন করতে হবে।
পাটলাই নদীর পাড়ের গ্রাম দুধের আউটার বাসিন্দা মো. মমরুল ইসলাম বলেন, নদীর বুকে বাঁধ দেয়ায় পাহাড়ি ঢলের পানি ভাটির দিকে নামতে বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারণে নদী বেশি ভরাট হয়েছে। পাহাড়ি ঢল এখন বাড়িঘরের ক্ষতি করছে।
বালিয়াঘাটের বাসিন্দা মোশাহিদ খাঁন স্বপন বলেন, নদীতে বাঁধের কারণে নদীর স্বাভাবিক গতি নষ্ট হয়েছে। এ কারণে পাটনাইয়ে নাব্যতা সংকট বেড়েছে।
সুনামগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের (সুপা) সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মলয় চক্রবর্ত্তী রাজু বলেন, বাংলাদেশের নদ নদীর সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে নদী একটি জীবন্ত সত্ত্বা। নদীর দখল, অবকাঠামো নির্মাণ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে কাজ করা আইনবিরোধী। পাটলাই নদীতে বাঁধ দেয়া পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণ হচ্ছে। শুকিয়ে যাওয়া নদী এখন মরুভূমিতে রূপ নিয়েছে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বললেন, পাটলাই নদী খনন করে নৌ চলাচল স্বাভাবিক হলে এখন যে কয়লা প্রতিদিন এই পথ দিয়ে ট্রলি দিয়ে বহন করা হয়, এর ৪-৫ গুণ বেশি কয়লা বহন করা সম্ভব হবে। আশপাশের এলাকার মাটিয়ান হাওরসহ ছোট বড় হাওরের ফসলি জমি অকাল বন্যা থেকে রক্ষা পাবে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আলকাছ উদ্দিন খন্দকার বলেন, আগে নদীতে বাঁধ দেয়া হতো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আসায় বাঁধ ভেঙে দেয়া হয়। এরপর প্রায় ৬ বছর কয়লা আমদানি রপ্তানি বন্ধ ছিল। এখন নদীতে পানি নেই, বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে নদীর বুকে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এই বাঁধের উপর দিয়ে ট্রলি দিয়ে কয়লা বহন করা হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, পাটলাই নদী খনন জরুরি, আমদানিকারকরা বহু বছর ধরে কষ্টে আছেন, নদী খননের বরাদ্দ হলেই শুধু চলবে না, খনন কাজে আমদানিকারক সমিতিকে যুক্ত করতে হবে। তাছাড়া শুধু টাকার অপচয় হবে। কাজের কাজ হবে না কিছুই।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বললেন, তাহিরপুরের সীমান্ত নদী পাটলাই ও বৌলাই নদী খননের সমন্বিত একটি প্রজেক্ট প্রফর্মা (ডিপিপি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়