সোনারগাঁওয়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা নিয়ে বিভ্রান্তি

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সুদৃঢ় হয়েছিল : আমির হোসেন আমু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৫০ বছর পূর্তির দিন আজ।
৫০ বছর আগে তিনি স্বাধীন দেশের মাটিতে ফিরে এসেছিলেন। তার ত্যাগ-তিতিক্ষার রাজনীতির একটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে তিনি সাড়ে ১৩ বছর পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন। দুইবার ফাঁসির আসামি হয়েও বাংলার মানুষের জয়গান গেয়েছেন। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনা মেনেই বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে দেশটি স্বাধীন হয়। কিন্তু সেই দিন ছিল বাঙালির বিষাদময় দিন। কারণ তাদের প্রিয় নেতা ছিলেন অনুপস্থিত। মুক্তিযুদ্ধে ভারতে শরণার্থী শিবিরে যখন রেডক্রিসেন্টসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজন জিজ্ঞেস করত, দেশ স্বাধীন হলে তোমরা কি দেশে ফিরে যাবে কিনা? তখন তারা বলতেন, বঙ্গবন্ধু ফিরলেই আমরা দেশে ফিরব। স্বাধীনতার পূর্ণতা বঙ্গবন্ধু ছাড়া কল্পনা করা যেত না। বঙ্গবন্ধুবিহীন স্বাধীনতা ছিল অর্থহীন। বঙ্গবন্ধুবিহীন স্বাধীনতা ছিল বাঙালি জাতির জন্য বিষাদময় স্বাধীনতা।
১৯৭২-এর ৮ জানুয়ারি আমি ঢাকাতেই ছিলাম। যখন শোনলাম, পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু অজানার পথে পাড়ি জমিয়েছেন, তখন আনন্দ হলেও দুশ্চিন্তা ছিল। অজানার পথে কেন? তারপর জানতে পারলাম, তিনি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন। সেখানে তাকে রাজকীয়ভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেছিল, আপনার দেশ তো শ্মশানে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বললেন, আমার দেশের মাটি যদি থাকে, মানুষ যদি থাকে, একদিন তাদের নিয়েই সোনার দেশে পরিণত করতে পারব। দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা আমি তৈরি করতে পারব। এরপর তিনি লন্ডন থেকে দেশে আসার পথে দিল্লি বিমানবন্দরে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে রাজকীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যার অবদান আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অকল্পনীয়, তারা বঙ্গবন্ধুকে রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়ে সাদরে বরণ করেন। ওই দিন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মতবিনিময়েই ভারতের সৈন্যদের এদেশ থেকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করেছিলেন।
দেশে ফেরার সময় যখন তার বিমানের শব্দ শোনা গেল, তখন থেকেই ঢাকা শহর প্রকম্পিত হলো বঙ্গবন্ধুর নামে স্লোগানে। বঙ্গবন্ধুর বিমানটি যখন অবতরণ করল, তখন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ সদস্যরা তাকে মাল্য ভূষিত করে নামিয়ে আনেন। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সবার সঙ্গে করমর্দন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওনা হন। এই চার মাইল পথ যেতে আড়াই ঘণ্টা লেগেছিল। পুরো রাস্তা সুসজ্জিত ছিল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের পতাকাশোভিত তোরণে। লাখ লাখ মানুষের গগণবিদারী স্লোগান জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে তাদের অত্যন্ত প্রিয় নেতাকে বরণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এর মধ্য দিয়েই উদ্যানে গিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য কারো কাছ থেকে ভিক্ষা নেবেন না, দেশকে বন্ধক রাখবেন না এই ওয়াদা দিয়ে আবার ওয়াদা নিয়েছিলেন, তিনি তিন বছর কাউকে কিছু দিতে পারবেন না।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি নতুন প্রেরণা লাভ করেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল অত্যন্ত অপরিহার্য। বঙ্গবন্ধু লন্ডনে থাকতেই বলেছিলেন, বাংলাদেশ আজ চির সত্য। জাতিসংঘসহ সবাইকে তাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর কারণেই অতি অল্প সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ ১২৯টি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছিল। তিনি অল্প সময়েই সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুদৃঢ় হয়েছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়