সোনারগাঁওয়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা নিয়ে বিভ্রান্তি

পরের সংবাদ

পর্যটনের নতুন হাতছানি মাওয়া : পদ্মাতীরে আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন কেন্দ্র চান পর্যটকরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র (মাওয়া থেকে ফিরে) : মাওয়া চৌরাস্তা থেকে ডান দিকে মাছ বাজারের পাশ দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই প্রমত্তা পদ্মা নদী। এবড়োখেবড়ো নদীর চর। চলছে নদী শাসনের কাজ। ৪/৫টি এসকেভেটর তীরের মাটি কেটে পরিকল্পনা মাফিক ফেলছে। এরপর কংক্রিটের ব্লক ও বোল্ডার পাথর ফেলা হবে। এসবের মধ্যেই স্বপ্নের সেতু সামনে থেকে একনজর দেখতে এবং পেছেনে রেখে ছবি তোলার জন্য শত শত মানুষ প্রতিদিন সেখানে ভিড় করছে। পদ্মায় শেষ বিকালে সূর্যাস্ত উপভোগের সৌন্দর্য তো আছেই। কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা না থাকার পরও এই স্থানটি ইতোমধ্যেই একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সবার দাবি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার পর এখানে যেন আন্তর্জাতিকমানের পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।
পদ্মা নদী কাছ থেকে দেখা আর তাজা ইলিশ মাছের জন্যই বিখ্যাত ছিল ঢাকা থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরত্বের মাওয়া ঘাট। কিন্তু এখন এ দুটির সঙ্গে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু এবং পদ্মার দীর্ঘ তীরে ঘুরে বেড়ানো। আগে পথের কষ্ট নিয়ে যেতে হলেও এখন তা একেবারেই মসৃণ। ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ মিনিটেই মাওয়া পৌঁছা যায় নজরকাড়া আন্তর্জাতিকমানের ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক হয়ে। তাই ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাওয়ায় পর্যটকদের ঢল নামে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজকে কেন্দ্র করে মাওয়া এখন নতুন রূপে সাজতে শুরু করেছে। অসংখ্য ছোট বড় রেস্টুরেন্টের সারি, ইলিশের আকর্ষণ জানিয়ে কর্মচারীদের হাঁকডাক চলছেই।
গত শুক্রবার সরজমিন মাওয়ায় গিয়ে দেখা গেছে, মাওয়া চৌরাস্তা থেকে পুরাতন ফেরিঘাটের রাস্তা হয়ে মাছ বাজারের সরু গলির নদীতীর পর্যন্ত রাস্তাটিতে প্রচণ্ড ভিড়। গাড়ি আর মানুষের ¯্রােত নদীতীরের দিকে। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা বাস, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনে করে আসছেন। মাছ বাজারের পাশের ছোট্ট গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়; একেবারে পূর্ণ অবয়বে চোখের সামনে দৃশ্যমান। নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি সেতুটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসছেন। তারা তীরে নেমে সেতু পেছনে রেখে ক্যামেরাবন্দি করছেন। অন্য কারো সঙ্গে কথা বলারও ফুরসত নেই। ১৫ জন বন্ধ নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে বেড়াতে আসা কামরুল ইসলাম জানান, সাপ্তাহিক ছুটি

থাকায় বন্ধুরা মিলে পদ্মাতীরে বেড়াতে এসেছেন। আগেও কয়েকবার এসেছেন। এখানে এলেই অন্যরকম এক ভালোলাগায় মন ভরে যায়। একদিকে পদ্মা সেতু দেখা যায়, অন্যদিকে নদীতীরে ঘুরে ফিরে ছবি তুলে ভালো সময় কাটানো যায়। উপরন্তু তাজা ইলিশের স্বাদ নেয়ার সুযোগ তো আছেই। তিনি বলেন, এখানে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিনোদন পার্ক গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।
১২ সদস্যের পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ইলিয়াস হোসেন বলেন, ঢাকার কাছে বিনোদনের জন্য এই জায়গাটি চমৎকার। একদিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতু দেখা যায়, আবার অন্যদিকে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানো যায়। এই সুযোগ অন্য কোথাও নেই। সেতুর কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে এলাকাটি আরো দর্শনীয় হবে।
পদ্মার তীরে ঘোরাফেরার পাশাপাশি অনেকে আবার স্পিডবোট এবং ট্রলার ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া করে মূল পদ্মা নদীতে নেমে পড়েন। জনপ্রতি স্পিডবোটে ২০০ এবং ট্রলারে ১০০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তারা ট্রলারে চেপে মাওয়া থেকে জাজিরা, মাঝিরঘাট পর্যন্ত গিয়ে পুরো সেতু কাছ থেকে দেখে মনে আনন্দ নিয়ে ফিরে আসছেন। নদী থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে আসা সাবিহা জামান বলেন, একেবারে কাছ থেকে পদ্ম সেতু দেখলাম। অনেক বড় স্থাপনা। পিলারের কাছে গিয়েছিলাম। খুব ভালো লাগলো। এই সেতু করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই। এখানে একটা নিরাপদ পার্ক করা হলে আরো বেশি সুন্দর লাগবে।
ঢাকার উত্তরা থেকে আসা তরিকুল ইসলাম বলেন, নদীতীরে ঘোরাফেরার পর ট্রলারে মাঝিরঘাট পর্যন্ত গেলাম। কাছ থেকে সেতুর পিলার, স্প্যান দেখে অন্যরকম অনুভূতি হয়েছে, যা বলে বোঝানো যাবে না। এখানে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা খুবই প্রয়োজন। সন্ধ্যার পর ইলিশ ভাজা খেয়ে ঢাকায় ফিরব।
স্ট্যামফোর্ড ইউনির্ভারসিটির শিক্ষার্থী, ওরিয়ন গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা অনেক সরকারি-বেসকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকেও ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। তাদেরও দাবি- পদ্মাতীরে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হোক। নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক।
পদ্মা সেতু ঘিরে মাওয়া, লৌহজংয়ের পদ্মা রিসোর্ট, হোটেল-মোটেল, মাওয়া রিসোর্টসহ আশপাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই আরো বেসরকারি পর্যায়ের বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এলাকার অনেকে পেশা বদল করেছে। শিমুলিয়া বাস টার্মিনালের আগে ২০টিরও বেশি আধুনিক মানসম্পন্ন রেস্টুরেন্ট প্রায় ২৪ ঘণ্টাই পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে খাবারের দাম বেশি হলেও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ‘ইলিশ’ নামের রেস্টুরেন্টটি সবার নজর কাড়ে। কেজি হিসাবে ইলিশ কিনে সরিষার তেলে কড়া ভাজা, বেগুনভাজা, ইলিশের লেজ ভর্তা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে অন্যসব রেস্টুরেন্টে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে চটপটি-ফুচকাসহ নানা ধরনের ফাস্টফুডের দোকানও রয়েছে। এছাড়া বেসনে ডুবিয়ে চিংড়ির মাথা ভাজাসহ নানা ধরনের স্ট্রিট ফুড তো আছেই।
স্থানীয় ইজিবাইকচালক সোহরাব হোসেন জানান, পদ্মা ব্রিজ দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে আসে। ঢাকা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসে। ঈদের মতো মনে হচ্ছে।
পদ্মা সেতু ঘিরে পর্যটকের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ইজিবাইকচালক গেন্দু এখন ট্রলারে পর্যটকদের নদীতে ঘুরতে নিয়ে যান। তিনি বলেন, জনপ্রতি ১০০ টাকায় ১৩ নম্বর থেকে ২৪ নম্বর পিলার পর্যন্ত ঘুরিয়ে দেখান। দিন দিন পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। শীতকালে পদ্মা শান্ত থাকায় মাঝ নদীতে ঘুরিয়ে দেখানোর সুযোগ পাওয়া যায়। বর্ষাকালে এভাবে ঘুরিয়ে দেখানো সম্ভব হয় না। এখন ভালোই আয় হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়