সোনারগাঁওয়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা নিয়ে বিভ্রান্তি

পরের সংবাদ

এক মাসে দুই শিরোপা আবাহনীর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ফেডারেশন কাপের ফাইনালে গতকাল কমলাপুর স্টেডিয়ামে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস এন্ড সোসাইটিকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিল ঢাকা আবাহনী। ঘরোয়া লিগে চলতি মৌসুমে এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় শিরোপাজয়ীরা ফেডারেশন কাপে এ নিয়ে ১২ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল। আবাহনীর হয়ে একটি করে গোল করেন ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস ও রাকিব হোসেন। ম্যাচসেরা ফিলিপ আজহা রহমতগঞ্জের হয়ে একটি গোল শোধ করেন। টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন কোস্টারিকান তারকা কলিন্দ্রেস।
এর আগে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচে শুরুর দিকে ঢাকা আবাহনীকে চেপে ধরে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটি। কিন্তু ফেডারেশন কাপের রেকর্ড শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ আকাশি-নীলরা গুছিয়ে উঠল একটু একটু করে। মাঝপথে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও পেয়ে যায় তারা। ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া রহমতগঞ্জের বিপক্ষে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে প্রায় তিন বছর পর মুকুট পুনরুদ্ধার করল মারিও লেমোসের দল। এর আগে ২০১৯-২০ মৌসুমে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ১-০ গোলের ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছিল আকাশি-নীলরা। কমলাপুরের স্টেডিয়ামে গতকাল ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে আবাহনী। ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস সোলেরার গোলে তারা এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান বাড়ান রাকিব হোসেন। রহমতগঞ্জের একমাত্র গোলটি করেন ফিলিপ আজহা। ১১টি শিরোপা নিয়ে আগে থেকেই প্রতিযোগিতাটির রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। রেকর্ডটাকে আরেকটু উঁচুতে তুলল লেমোসের দল। এ নিয়ে মৌসুমে টানা দুটি শিরোপা জিতল আবাহনী। বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর স্বাধীনতা কাপ জিতে মৌসুম শুরু করেছিল তারা।
এর আগে কমলাপুরে চোটের কারণে দুই ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল অগাস্তো সান্তোস দি সিলভা ও ডোরিয়েলটন গোমেজ রদ্রিগেসের অনুপস্থিতি প্রথম দিনে বেশ ভোগাল আবাহনীকে। শুরু থেকে উজ্জীবিত ফুটবলের পসরা মেলল রহমতগঞ্জ। দ্বাদশ মিনিটে প্রথম ভালো আক্রমণে ওঠে রহমতগঞ্জ। খন্দকার আশরাফুল ইসলামের বাড়ানো পাস নিয়ন্ত্রণে নেয়া সানডে চিজোবাকে আটকাতে গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। একটু তাড়াহুড়ো করে নেয়া নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ডের শট যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। ২ মিনিট পর আবারো সুযোগ আসে ২০১৯-২০ মৌসুমের রানার্সআপদের সামনে। নিজেদের অর্ধ থেকে সানডের রক্ষণচেরা পাস অফসাইড ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ফিলিপ আজহা। ঘানার এ ফরোয়ার্ডের কোনাকুনি শট পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আটকান সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে আবাহনীর জয়ের নায়ক শহিদুল। আবাহনী প্রথম ভালো আক্রমণ শানায় ২৮তম মিনিটে। বক্সের ভেতর থেকে জুয়েল রানার হেড পাস খুঁজে নেয় ছোট ডি-বক্সের ডান দিকে অরক্ষিত নাবিব নেওয়াজ জীবনকে। কিন্তু গোলরক্ষক রাকিবুল হাসান তুষারকে একা পেয়েও জীবন ক্রসবার উড়িয়ে মারেন। সুবর্ণ সুযোগ নষ্টের হতাশায় দলের বাকিদেরও টার্ফে মাথা ঠুকতে দেখা যায়। ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে রহমতগঞ্জ অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান কিরণের কর্নারে এনামুল ইসলাম গাজীর ব্যাক হেড দূরের পোস্টের খানিকটা ওপর দিয়ে চলে যায়। এরপর ৪৫ মিনিটে আরেকটি ভালো সুযোগ নষ্ট করেন চিজোবা। দুই ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে বক্সের সামনে থেকে তার জোরালো শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আবাহনী এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মাতে কলিন্দ্রেসের গোলে। ম্যাচের দৃশ্যপটও বদলাতে থাকে এরপর থেকে। রাকিব হোসেনের পাস ধরে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের প্লেসিং শটে কাছের পোস্টে লক্ষ্যভেদ করেন কোস্টারিকার এ ফরোয়ার্ড। ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি গোলরক্ষক। দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনীর খেলায় গতি বাড়ে। ৪৯তম মিনিটে বক্সের কোনা থেকে কলিনদ্রেসের কোনাকুনি ভলি দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে যায়। ২ মিনিট পর এই ফরোয়ার্ডের আরেকটি শট অল্পের জন্য উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। এরপর ৬৪তম মিনিটে পায়ের কারিকুরিতে এক ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে দূরপাল্লার শট নেন নুরুল নাইম ফয়সাল। তুষার ফিস্ট করে ফেরানোর পর বল বক্সেই পেয়ে যান রাকিব। দুই টোকায় একটু এগিয়ে নিখুঁত শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এই ফরোয়ার্ড। ৬ মিনিট পর ঘুরে দাঁড়ায় রহমতগঞ্জ। শাহরিয়ার বাপ্পীর দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে বাড়ানো থ্রæ পাস ধরে ডিফেন্ডার মামুন মিয়াকে কাটানোর পর ঝাঁপিয়ে পড়া গোলরক্ষক শহিদুলের বাধা পেরিয়ে কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন আজহা। বাকি সময়ে আবাহনী বল পায়ে রাখার দিকে মনোযোগী ছিল বেশি। রহমতগঞ্জও পায়নি মরিয়া হয়ে ওঠার সুযোগ। তাতে দলটির একটি শিরোপার আপেক্ষা বাড়ল আরো। এদিকে ম্যাচ শেষে সমর্থকদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে কাঁটাতারের উপরে উঠে দাঁড়ান আবাহনীর কোচ মারিও লেমোস। তার পেছনে দলের ফুটবলাররা দাঁড়িয়ে দর্শকদের সঙ্গে আনন্দ উদযাপনে মেতে ওঠেন।
ঘরোয়া লিগে চলতি মৌসুমটা দুর্দান্ত কাটছে ঢাকা আবাহনীর। নতুন মৌসুমের শুরুতে তারা স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয়। যেটি তাদের আসরটিতে দ্বিতীয় শিরোপা জয়। স্বাধীনতা কাপে সর্বোচ্চ তিনবার শিরোপার স্বাদ পেয়েছে ঢাকা মোহামেডান। তবে ফেডারেশন কাপ জয়ের ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে ঢাকা আবাহনী। আকাশি-নীলরা প্রথমবার ফেডারেশন কাপের শিরোপা জেতে ১৯৮২ সালে। তবে সেটি একক নয়, মোহামেডানের সঙ্গে শিরোপা ভাগাভাগি করে নিতে হয় তাদের। আসরটিতে আবাহনী একক শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় ১৯৮৫ সালে। ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালে চারবার ফেডারেশন কাপের শিরোপা জেতে। এরপর ২০০০ ও ২০১০ সালে তারা দুবার ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়। মাঝে পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে ২০১৬ থেকে ২০১৮ টানা তিন বছর তারা ফেডারেশন কাপে আধিপত্য চালিয়ে শিরোপা জিতে নেয়। আর গতকাল কমলাপুরের মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে রহমতগঞ্জকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ফেডারেশন কাপে ডজন শিরোপা জয়ের গৌরব অর্জন করে দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। এর মাধ্যমে দেশের ঘরোয়া ফুটবলে নতুন মৌসুমের দুটিই শিরোপাই জিতে নিল ঢাকা আবাহনী। বাকি রইল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি। সেটিও জিতলে ট্রেবল জয়ের রেকর্ড গড়বে আকাশি-নীলরা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলেও সর্বোচ্চ সাফল্যধারী ক্লাব ঢাকা আবাহনী। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন তারা। তবে ২০১৭-১৮ মৌসুমের পর আসরটির শিরোপা আর তাদের হাতে ওঠেনি।
এদিকে ঘরোয়া ফুটবলের কোনো আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারেনি রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস এন্ড সোসাইটি। এর আগে ২০১৯-২০ মৌসুমেও তারা ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলেছিল। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে সেবার ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে শিরোপা খুইয়েছিল। একই ব্যবধানে গতকাল হেরে দ্বিতীয়বার আক্ষেপে পুড়ল পুরান ঢাকার ক্লাবটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়