সোনারগাঁওয়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা নিয়ে বিভ্রান্তি

পরের সংবাদ

উৎসবমুখর নারায়ণগঞ্জ : দ্বারে দ্বারে ছুটছেন তৈমূর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে : পুরোদমে জমে উঠেছে আলোচনায় থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রতিদ্ব›দ্বী মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা ঘুরে বেড়াচ্ছেন এলাকার পাড়া-মহল্লা। ভোটারদের মন জোগাতে দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী, সদ্য সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে রয়েছেন। তবে দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় প্রকাশ্যে দলের নেতাকর্মীদের বেশিরভাগকেই তার সঙ্গে দেখা যায়নি।
বিএনপির বহিষ্কৃত এই নেতার পক্ষে নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল। তবে তৈমূরের পক্ষে বিএনপির উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। এ টি এম কামালের নেতৃত্বে একটি টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে নারায়ণগঞ্জে। তারাও যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
সুবিধাবঞ্চিত নারায়ণগঞ্জবাসীকে একটি নিরাপদ ও আধুনিক শহরের স্বপ্ন দেখিয়ে হাতি মার্কায় ভোট চাচ্ছেন তৈমূর ও তার কর্মীরা।

প্রচারণায় আইভীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগও উত্থাপন করছেন তারা। তৈমূর আলম খন্দকারের মেয়ে ব্যারিস্টার মার-ইয়ামের নেতৃত্বে তরুণ-তরুণীদের একটি পৃথক টিমও রয়েছে, যারা ডিজটাল প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। ইভিএমে ভোট দেয়ার বিষয়ে ভোটারদের সতর্ক করছেন তারা।
তৈমূর আলম খন্দকার গতকাল রবিবার প্রচারণা শুরু করেন সকাল ১০টা থেকে। তিনি নারায়ণগঞ্জের ১২নং ওয়ার্ডের মিশনপাড়া থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। তার সঙ্গে ছিলেন কয়েকশ নেতাকর্মী। এ সময় বিভিন্ন দোকানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ভোট চান তৈমূর। ব্যবসায়ীরাও তাকে হাসিমুখে স্বাগত জানান। একইভাবে তিনি কয়েকশ নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে এই ওয়ার্ডের ডন চেম্বার, বরফকল এলাকা, আমলাপাড়া ও খানপুর এলাকায় দুপুর পর্যন্ত প্রচারণা চালান তিনি। ১২ নম্বর এই ওয়ার্ডের ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, প্রচারণায় আইভী কিছুটা এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে নেই তৈমূর আলমও??। মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্ব›দ্বী মাঠে থাকলেও মূল প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে লড়াই করেই সরকারদলীয় প্রার্থীকে জিততে হবে। তৈমূর আলমের প্রচারণায় অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের দাবি, প্রচারণায় তারা এগিয়ে আছেন। তাদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ রয়েছেন বলেও তারা দাবি করেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তৈমূর আলম খন্দকারই মেয়র নির্বাচিত হবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
পরবর্তীতে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়ে বেলা ৩টার সময় তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন মেয়র প্রার্থী তৈমূর। সেখানে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। আমি কোনো দলের ব্যানারে দাঁড়াইনি। আমাকে মানুষ দলমত নির্বিশেষে সমর্থন দিচ্ছে। জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ অনেকেই আমার সঙ্গে গণসংযোগে আছেন। শনিবার রাতে ধামগড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে। পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে হুমকি দিচ্ছে নৌকার পক্ষে নির্বাচন করার জন্য। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ ‘ভয়ে মরে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর’- এই নীতিতে অটল থাকবে। এ সময় তৈমূর আলমের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের নেতা সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরাম, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল, জমাল উদ্দিন কালু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলসহ অনেকে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পদে থেকে সদ্য বহিষ্কৃত এই নেতা বলেন, স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় প্রতীকে করায় মানুষ অভ্যস্ত নয়। এখানে নির্বাচনটা হচ্ছে নাসিকের ব্যর্থতা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এখনো সেই ঠিকাদাররা নির্বাচন করছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তৈমূর বলেন, সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে। তিনি শুরু থেকেই সেই সুবিধা নিয়ে আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। পদত্যাগী হওয়া সত্ত্বে দেহরক্ষী, পিএসসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। অথচ নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
একদিকে সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে তার দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বুলি আওড়াচ্ছেন, অন্যদিকে পুরো নারায়ণগঞ্জে আমার গণজোয়ার ঠেকাতে কর্মী-সমর্থকদের পরোক্ষভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আইভী নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবে বলে সরকারি দলের মুখপাত্ররা ঘোষণা দিচ্ছে, যা নির্বাচন কমিশন ও জনগণকে প্রভাবিত করার সামিল। এ সময় নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকবে হবে। প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে সিটি নির্বাচনকে কুলষিত করা হলে প্রধানমন্ত্রী ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। আমি আশা করি, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী তার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না।
প্রচারণাকালে সরকারদলীয় এমপি শামীম ওসমানের সমর্থনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কারো পায়ে হাঁটি না, নিজ পায়ে হাঁটি। ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমারও নারায়ণগঞ্জে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার প্রতিদ্ব›দ্বী (আইভী) তার নিজ দলের এমপিকে (শামীম ওসমান) গডফাদার বলেছেন। বিষয়টি তাদের দলের নিজস্ব ব্যাপার। আমাকে যদি রাস্তার একটা ভিখারিও সমর্থন দেয়, সেটা আমি মাথা পেতে নেব। সরকারি দলের মধ্যে যে কোন্দল, বিবাদ, মুখোমুখি অবস্থান, এতে আমার কোনো ক্ষতি নেই। সবাই আমার সমর্থনে এগিয়ে আসছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়