সোনারগাঁওয়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা নিয়ে বিভ্রান্তি

পরের সংবাদ

আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন : ডিআইজি পার্থ গোপালের আট বছর কারাদণ্ড

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বরখাস্ত হওয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ৮ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল রবিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম মামলার রায় ঘোষণা করেন।
আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারায় ৫ বছর ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারায় ৩ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে বিচারক দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলার নির্দেশ দেয়ায় ৫ বছর জেল খাটতে হবে পার্থকে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪ (২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় দুদক অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় ধারা দুটি থেকে তাকে খালাস দেন আদালত। এদিকে পার্থ গোপালকে গ্রেপ্তারের সময় ৮০ লাখ টাকা জব্দ করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জব্দ টাকার মধ্যে ৬৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। বাকি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা আসামির উপার্জিত বলে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া এর পাশাপাশি পার্থকে আরো ৫০ হাজার টাকা জমিরানা করা হয়। এ অর্থ অনাদায়ে (পরিশোধ না করা হলে) তাকে

আরো তিন মাস জেল খাটতে হবে।
রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষ দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘পার্থ গোপাল বণিক ডিআইজি প্রিজন্স পদে কর্মরত অবস্থায় অনিয়মের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করেছিলেন, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দুদকে ডাকা হয়েছিল। দুদকে ডাকার পর তিনি তা স্বীকার করেন। এরপর তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। পরে জেলখানায় থাকা অবস্থায় তিনি কিছু ইনকাম ট্যাক্স দেয়ার ঘোষণা দিয়ে এটাকে বৈধ করার চেষ্টা করেন। আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে জব্দকৃত ৮০ লাখ টাকার মধ্যে ৬৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা (উপার্জিত) ফেরত দিতে বলেছেন। এছাড়া দুদক আইনের দুইটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ৮ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। অপরাধ করলে আইন সবার জন্য সমান বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে রায়ে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে পার্থ গোপালের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। যে ৮০ লাখ টাকার কথা বলা হচ্ছে, ৫০ লাখ টাকা তার ও অবশিষ্ট টাকা তার মায়ের। এটা বৈধভাবে উপার্জিত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুইটি ধারায় খালাস দেয়া হয়েছে। বাকি যে দুই ধারায় সাজা দেয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
এর আগে সকাল ৯টার কিছু পরে পার্থ গোপাল বণিককে আদালতে হাজির করে হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে বিচারক মামলার রায় পড়া শুরু করেন। রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামি পার্থ গোপালকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তবে রায়ের পর তিনি কাউকে কিছু বলেননি। তার স্ত্রীসহ স্বজনরাও রায়ের পর কাঁদতে থাকলেও কারো সঙ্গে কথা বলেননি। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান। এরপর আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ২৭ ডিসেম্বর মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের সব যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুনানি শেষ হলে রায় ঘোষণার জন্য গতকালকের দিনটি ধার্য করেন বিচারক।
২০১৮ সালের ২৬ বিপুল অর্থ সম্পদসহ গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন। এরই সূত্র ধরে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই সিলেট কারাগারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে পার্থ গোপাল বণিককে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তার ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়।
এ সময় তার ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২৯ জুলাই তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারাসহ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ (২) ধারায় দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দায়ের করে দুদক।
তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট পার্থ গোপালের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ১৪ জনকে সাক্ষী করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এতে বলা হয়, বরখাস্তকৃত সিলেট কারা উপমহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক সরকারি চাকরিতে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন। এসব টাকা গোপন করে তার নামে কোনো ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে নিজ বাসস্থানে লুকিয়ে রেখে অপরাধ করেছেন। এরপর ৪ নভেম্বর আদালত মামলাটিতে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলাটিতে ১১ জন সাক্ষী আসামি পার্থ গোপালের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়