সোনারগাঁওয়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা নিয়ে বিভ্রান্তি

পরের সংবাদ

আইপিআরএস প্রযুক্তিতে মাছ চাষে সাড়া ফেলেছেন আকবর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আতিক ইসলাম সিকো, শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) থেকে : চাঁপাইনবাবগঞ্জে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে মাছ চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন আকবর হোসেন। বরেন্দ্রভূমির বুলনপুরে বিশেষ এ খামার গড়েছেন তিনি। এই প্রযুক্তির নাম ইন প্ল রেসওয়ে সিস্টেম বা আইপিআরএস। তবে আকবরের দাবি- আইপিআরএস পদ্ধতিতে মাছের খামার দেশে এটাই প্রথম। দক্ষিণ এশিয়ায় এ প্রযুক্তিতে ভারতে ২টি ও পাকিস্তানে ৩টি খামার রয়েছে। আমেরিকান প্রযুক্তিটি আমদানি করে চীন গত কয়েক বছরে মাছ চাষে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে।
এর বিশেষত্ব হলো- অল্প জলাশয়ে মানসম্মত অধিক পরিমাণ মাছ উৎপাদন। আকবর হোসেন নবাব গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক। সম্প্রতি নবাব হাইটেক মৎস্য খামার ঘুরে দেখা যায়- ৬০ বিঘার পুকুরে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের ১৩টি চ্যানেল বা পানির প্রবাহ দিয়ে। পাইপলাইনে সংযুক্ত রেসওয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে চ্যানেলগুলোয় কৃত্রিম স্রোত তৈরি করা হয়েছে। ফলে প্রবহমান পানিতে ২৪ ঘণ্টা অধিক অক্সিজেন তৈরি হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ গুণ বেশি মাছ বসবাস করতে পারছে। জলাশয়ের মাছরা প্রতিটি চ্যানেলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে উন্নত ও পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে পাশাপাশি অবাধে বিচরণ করছে।
একেকটি চ্যানেলে রয়েছে একেক ধরনের মাছ। প্রযুক্তির সাহায্যে খাবার সরবরাহ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা হওয়ায় মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং কোনো রোগবালাইও তেমন হয় না। উদ্যোক্তা আকবর হোসেন জানান, গত বছর ব্যবসার কাজে চীনে গিয়ে আইপিআরএস প্রযুক্তি দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন।
এরপর দেশে ফিরে এ প্রযুক্তিতে মৎস্য খামার গড়ে তোলেন। গত বছরের প্রথমদিকে চীন থেকে আইপিআরএস প্রযুক্তি আমদানি করেন।
চীনা প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীরা সব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম স্থাপন করে দিয়ে যান। খামারে ৫ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেন তিনি।
আকবর আরো জানান, ৬০০ বিঘা জলাশয়ে যে পরিমাণ মাছ উৎপাদন সম্ভব, আইপিআরএস প্রযুক্তিতে ৬০ বিঘার খামারে সেই পরিমাণ মাছ হবে।
২ মাস পর তিনি মাছ চাষ শুরু করেন। তিনি জানান, মুজিববর্ষের অঙ্গীকার হিসেবে আধুনিক প্রযুক্তির এ মাছের খামার গড়েছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি কেটে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষের একটা প্রবণতা চলছে। এতে কৃষিপণ্য বা ফসল উৎপাদনের জমি কমে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে যদি আইপিআরএস প্রযুক্তিতে খামার গড়ে তোলা হয়, তাহলে কম জায়গাতেই বেশি মাছ পাওয়া যাবে।
এতে ফসলি জমি নষ্ট করে হাজার হাজার পুকুর তৈরির দরকার পড়বে না।
জানা যায়, কয়েক বছর ধরেই আকবর হোসেন মাছ চাষ করছেন। বরেন্দ্র ভূমিতে তার আরো ৪২টি পুকুর রয়েছে। সেগুলোতে তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন। মাছ চাষে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় ২০১৭ সালে দেশের শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষির পুরস্কার লাভ করেন তিনি। আকবর হোসেন জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই মৎস্যচাষিরা তার খামার পরিদর্শনে আসেন। এমনকি মৎস্য বিজ্ঞানীরাও আসছেন, দিচ্ছেন পরামর্শ।
খামারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আইপিআরএস প্রযুক্তিতে উৎপাদিত মাছের স্বাদ নদীর মাছের মতোই। সাধারণ একটি পুকুরে যত মাছ উৎপাদন করা যায়, এই পদ্ধতিতে সেই পরিমাণ জায়গায় তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ভোরের কাগজকে জানান, মৎস্য অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতা ও ব্যক্তি উদ্যোগে ইতোমধ্যে এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ শুরু হয়েছে। কেউ এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে সার্বিক সহযোগিতায় দেয়া হবে। এতে অভ্যন্তরীণ মাছের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়