জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস আজ

আগের সংবাদ

উৎসবমুখর নারায়ণগঞ্জ : প্রচারণায় এগিয়ে আইভী

পরের সংবাদ

শর্ট সার্কিটের আগুনে ৭০ দোকান ছাই কর্মচারীর মৃত্যু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাঁশ, কাঠ আর টিন দিয়ে তৈরি ছোট ছোট মাচানঘর। রাজধানীর গুলিস্তান কাপ্তানবাজারের ভেতরে কাঁচাবাজারের এই খোপ খোপ ঘরগুলোর নিচতলায় চাল-ডাল, আলু, পেঁয়াজ, মুরগি ও সবজি বিক্রি করা হতো। আর কাঠের ওপরের দোতলায় ব্যবসায়ী ও স্টাফরা ঘুমাতেন। সারাদিনের কর্মযজ্ঞ শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে গত শুক্রবার রাতে ঘুমিয়ে পড়েন ওখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ভোর রাতের দিকে হঠাৎ আগুন লাগার চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙে তাদের। শীতের রাতে আরামের ঘুম ছেড়ে উঠতে না চেয়েও পারলেন না। কিন্তু ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে যায় পুরো কাঁচাবাজারে। আগুনে ৭০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের ধোঁয়া শ্বাস বন্ধ হয়ে ইয়াসিন (২০) নামে একটি দোকানের কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের চেষ্টায় সকাল সোয়া ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুনে তাদের সব মালামাল পুড়ে যায়। তবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
কাঁচাবাজারের ঠিক মাঝের অংশে মামুনের আলু, পেঁয়াজ ও মুরগির দোকান। নিচতলায় এসব পণ্য বিক্রি করা হতো। আর দোতলায় স্টাফরা ঘুমাতেন। গত শুক্রবার অনেক রাতে দোকান বন্ধ করে দোতলায় ঘুমিয়ে পড়েন মামুন। তিনি বলেন, ভোর রাতের আগুন লাগার চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে। তখন বাইরে বের হয়ে দেখেন উত্তর কর্ণারের মুসলিম স্টোরের শাটারে আগুন জ্বলছে। পরক্ষণে পাশের আবুল হোসেন চাকলাদার স্টোরে আগুন ধরে যায়। সবাই কাঁচা ঘুম থেকে উঠে আগুন দেখে হতভম্ব হয়ে যান। কী করবেন, কিভাবে আগুন নেভাবেন? তা কেউ বুঝে উঠতে পারছিলেন না। যে যার মতো প্রাণ নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। আগুনে তার নগদ ৩০ হাজার টাকাসহ প্রায় পৌনে তিন লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানায়, ভোররাত পৌনে ৫টার দিকে আগুনের খবরে প্রথমে ১০টি ইউনিট যায়। পরে আগুনের ভয়াবহতা দেখে আরো দুটি ইউনিট যোগ হয়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভূঁইয়া স্টোরের দোতলা থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ভূঁইয়া স্টোরের মালিকের ভাগিনা রুবায়েত হোসেন জনি জানান, আট হাজার টাকা বেতনে মাত্র মাসখানেক আগে তার মামার মুদি দোকানে চাকরি নেয় ইয়াসিন। অগ্নিকাণ্ডের সময় দোতলায় চারজন স্টাফ ছিল। সবাই নিরাপদে বের হতে পারলেও ইয়াসিন আটকা পড়ে। ধোঁয়ার কারণে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারিনি। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ইয়াসিনের মরদেহ উদ্ধার করে।
স্টারের ঠিক বিপরীত দিকে বাপ্পী স্টোরে চাকরি করেন নিহত ইয়াসিনের চাচা মিজান। মূলত চাচা মিজানই ইয়াসিনকে ভূঁইয়া স্টোরে এনে চাকরি দেন। আগুন লাগার পর থেকেই ভাতিজাকে না পেয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজেন মিজান। পরে ফায়ার সার্ভিস ইয়াসিনের মরদেহ উদ্ধার করলে কান্নায় ভেঙে পড়েন চাচা মিজান। খবর দেয়া হয় গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে। ছুটে আসেন অন্য স্বজনরাও। পরে ইয়াসিনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান তারা।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক বজলুর রশিদ বলেন, কাঁচাবাজারটি মার্কেটের ভেতরের অংশে। ওখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি তো দূরের কথা, একটি মোটরসাইকেলও ঢুকবে না। আমরা মেইন রোডে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পাইপ দিয়ে পানি ছিটিয়েছি। উত্তর পাশের মসজিদ ও দক্ষিণ পাশের আবাসিক ভবনের দেয়াল ভেঙে সেখান দিয়ে পানি ছিটাতে হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, কাঁচাবাজারে বিদ্যুতের এক তার দিয়ে অনেকগুলো সংযোগ নেয়া হয়েছে। অনেকদিন ধরেই কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা আগুনের ঝুঁকিতে ছিলেন। অবশেষে সেই দুর্ঘটনাই ঘটলো।
তবে একাধিক ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুসলিম স্টোর থেকে আগুনের সূত্রপাত। কেননা, তারা ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ওই দোকানের শাটারে আগুন জ্বলতে দেখেছেন। পাশের দোকানগুলো টিনের হওয়ায় মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাই ভয়ে কেউ আগুন নেভানোর চেষ্টাও করেননি। যে যার মতো নিরাপদ স্থানে চলে যান। মুদি ব্যবসায়ীদের অনেকের দাবি, তাদের ২০-২৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। আর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের কারো ৩ লাখ, কারো সাড়ে ৩ লাখ কিংবা এর কিছুটা কম-বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কাপ্তানবাজার মার্কেট সমিতির সদস্য সচিব হুমায়ুন মিয়া বলেন, আগুনে ৬০-৭০টি দোকান ঘর পুড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। ওখানে গ্যাস ছিল না, রান্নাও হতো না। তারপরও কিভাবে আগুন লাগল তা ভাবনার বিষয়।। তার দাবি, সবার বিদ্যুতের মিটার রয়েছে। বৈধভাবেই সবাই বিদ্যুতের লাইন নিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়