জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস আজ

আগের সংবাদ

উৎসবমুখর নারায়ণগঞ্জ : প্রচারণায় এগিয়ে আইভী

পরের সংবাদ

বেড়েছে অজ্ঞান পার্টিসহ ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য : ঝামেলার ভয়ে অভিযোগ করেন না অনেকেই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজিজুর রহমান জিদনী : রাজধানীতে হঠাৎ করেই বেড়েছে অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য। প্রতিদিনই কেউ না কেউ এদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। তবে র‌্যাব ও পুলিশ বলছে, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। পরিসংখ্যানে ঘাবড়াবার মতো তেমন কিছু নেই। অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রকৃত পরিসংখ্যান সেভাবে কখনোই উঠে আসে না। কারণ, অনেকেই এসব ঘটনায় থানা পুলিশ ও আইনগত ঝামেলার ভয়ে অভিযোগ করে না। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক ঘটনা অজানাই থেকে যায়। অভিযোগ না করায় এ বিষয়ে তেমন মাথা ঘামায় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিল, বনানী ও পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকায় পৃথক ঘটনায় তিনজন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে লাখ টাকা নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এ ঘটনার আগের দিন গত বুধবার রাতে রাজধানীর মতিঝিলে কক্সবাজারগামী একটি বাস থেকে ওমান প্রবাসী এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে অচেতন করে টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে যায়। একইদিন রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের সামনে থেকে রমনা মডেল থানা পুলিশ এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। রমনা থানার এসআই আবুল খায়ের জানান, ওই ব্যক্তি ফার্মগেটে বাসে ওঠার পর অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাকে শাহবাগের বারডেম হাসপাতালের সামনে নামিয়ে রেখে যাওয়া হয়।
গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জে যাওয়ার পথে অজ্ঞান পার্টির

খপ্পরে পড়ে এক ব্যক্তি। ওইদিনই ঢামেক হাসপাতালে লতিফ ব্যাপারী নামে একজনের মৃত্যু হয়। স্বজনদের অভিযোগ, অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে এমন ঘটনা ঘটে। গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর আজিমপুর থেকে দুই ব্যবসায়ীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাদের কাছে থাকা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় এসে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন মিরাজুল নামে এক যুবক। তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ইরাম খান নামে সিক্রেট রেসেপি রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি গুরুতর আহত হন। দুজন ছিনতাইকারী তাকে মারধর ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে টাকা ও ব্যাগ নিয়ে যায়।
ছিনতাইয়ের টাকা ভাগাভাগির ঘটনা নিয়েও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ২৩ ডিসেম্বর আবদুল রব নামে এক ব্যক্তি ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরেরদিন মারা যান তিনি। পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, সে থাবা কামলা দলের সদস্য ছিল। থাবা দিয়ে মোবাইল ও অন্যান্য জিনিস ছিনতাই করায় মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাইকারীদের দলটি ‘থাবা কামলা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। নিহত আবদুলের স্বজনদের দাবি, তিনি নিউমার্কেটে কাপড় কিনতে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে মারা যান। তবে অনুসন্ধানের একপর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার দিন সাভারের বলিয়ারপুরের বাসা থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের উদ্দেশে বের হয় দলনেতা রুবেল ও রব। মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় দলের অন্য সদস্য রনি, ক্যান্ডি ওরফে কন্ডি ও রিংকু। মোবাইল থাবা দিয়ে ছিনিয়ে নেয়ায় রনির বিশেষ পারদর্শিতা আছে। ওই দিন তিন রাস্তার মোড় থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত থাবা দিয়ে চারটি মোবাইল পায় থাবা কামলা দলটি। ওই দিন ছিনতাই করা চারটি মোবাইলের একটি আবদুল রবের পছন্দ হয়। সেটি তিনি নিতে চাইলে, অন্যদের সঙ্গে ঝগড়া লেগে যায় তার। তখন বাকিরা একজোট হয়ে আবদুল রবকে শিক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রনি ও রুবেল চাকু দিয়ে আবদুল রবকে আঘাত করে। কেউ যেন তাদের সন্দেহ না করে, সেজন্য দলের অন্য সদস্যরা চিৎকার করতে থাকেন। এমনকি পুলিশও ডেকে আনেন তারাই।
এদিকে রাজধানীর গাবতলী থেকে হাজারীবাগ এলাকার মধ্যকার স্লুইস গেট, ঢাকা উদ্যান, নবীনগর হাউজিং, লোহারগেট, চন্দ্রিমা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, নবোদয় হাউজিং ও রায়েরবাজার এলাকায় প্রায়ই ছিনতাই ঘটে। জানা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এসব জায়গাকে ছিনতাইয়ের হটস্পট ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখার উপকমিশনার মো. ফারুরক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, শীতকালে ছিনতাইয়ের প্রকোপ পরিলক্ষিত হয়। তবে আমরা দেখেছি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাদকসেবীরাই এসব করছে। পেশাদার ছিনতাইকারী এখন সেভাবে দেখা যায় না। অজ্ঞান পার্টি রোধে মানুষের সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ অচেনা ব্যক্তির দেয়া কিছু খেয়ে অনেকেই তাদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এরপরেও এসব বন্ধে আমাদের ডিএমপিপ্রধানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। থানার পাশাপাশি ডিবি পুলিশও এ নিয়ে কাজ করছে।
র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাব সবসময়ই এসব রোধে তৎপর। কয়েক দিন আগেও মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আমরা বড় একটি ছিনতাইকারী চক্র ধরেছি। অজ্ঞান ও ছিনতাইকারী দমনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ চিহ্নিত স্পটগুলোতে র‌্যাব পেট্রলিং বাড়ানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়