জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস আজ

আগের সংবাদ

উৎসবমুখর নারায়ণগঞ্জ : প্রচারণায় এগিয়ে আইভী

পরের সংবাদ

জনপ্রিয়তা পাবে বাজেট পণ্য

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাদিকুর রহমান সাকিব
এখন ট্রেন্ডের চেয়ে ব্যক্তিগত রুচি, পছন্দ আর স্বাচ্ছন্দ্যের পোশাকও পরছেন ফ্যাশনপ্রেমীরা। নিজস্ব ফ্যাশন দিয়ে অন্য সবার থেকে আলাদা করে চেনানোর জন্য ঝুঁকিও নিচ্ছেন তারা।
ফাস্ট ফ্যাশনের দৌরাত্ম্য কমেছে। পরিবেশবান্ধব টেকসই ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। তাই ট্রেন্ডে জায়গা করে নিচ্ছে রিসাইকেল (পুনর্ব্যবহার) আর আপসাইকেল (নতুন করে ব্যবহার) করা পোশাক। বিশ্বের বহু নামকরা ফ্যাশন হাউস লিখিতভাবে একমত হয়েছে যে তারা টেকসই ফ্যাশনকে জনপ্রিয় করতে বদ্ধপরিকর। অবশ্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ফ্যাশন প্রভাবকেরা। একবাক্যে বলতে গেলে, টেকসই ফ্যাশনই আগামীর ফ্যাশন।
মহামারীর কারণে ২০ ও ২১ সালে দীর্ঘ সময় লকডাউনে থাকতে হয়েছে। ওমিক্রণের কারণে চলতি বছরেও অনেক দেশে ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে বিধিনিষেধ।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের স্কুল অফ ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্সটাইলের ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজির প্রভাষক ডক্টর কেট সালা বলেন, দীর্ঘ লকডাউনে ঘরে থাকায় মানুষ এখন আরামদায়ক পোশাক পরতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যার ফলে পোশাকের ধারায় পরিবর্তন আসতে পারে। শুধু তাই নয়, মানুষ এখন ঘরে থেকেই শপিং করতে পছন্দ করে। তাই তারা অনলাইনেও কেনাকাটা করছে।
লকডাউন চলাকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। দীর্ঘদিন ঘরে থাকার কারণে ক্রেতারা পোশাক কেনা থেকে বিরত থাকে। বিক্রয় না থাকায় লোকসান কমাতে অনেক পোশাক কারখানাই উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
সাধারণত, সারা বিশ্বেই পরবর্তী মৌসুমের পোশাক তৈরি করা হয় চলতি মৌসুমে। করোনার কারণে ফ্যাশন ইন্ডাষ্টিতে লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। লোকসান এড়াতে বর্তমানে গেøাবাল মার্কেটের অন-ডিমান্ড ম্যানুফাকচারিং প্রসেস গুরুত্ব পাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে মৌসুমভিত্তিক উৎপাদন না করে বরং দরকার বুঝে পণ্য উৎপাদন করা। তবে দক্ষ লোকবল ও প্রযুক্তির অভাবে এখনো এটি কার্যকর হয়নি।
করোনার বিস্তর রোধে সব স্তরে মানুষের কাছে সামাজিক দুরত্বের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। তাই দীর্ঘ সময় ওয়ার্ক ফ্রম হোম এ থাকতে হয়। তাই লকডাউন চলাকালে এবং পরর্বতী সময়ে অনলাইন বিজনেস গুরুত্ব পায়।
অনলাইন বা ই কমার্স এর ব্যাপক বিকাশ হয় করোনার সময়ে। করোনার আগে অনেক গ্রাহক অনলাইনে কেনাকাটায় সাচ্ছন্দ্য ছিলেন না। কিন্তু লকডাউনের সময়ে তারা অনলাইনের পণ্য কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে উঠে। আবার অনেক বিক্রেতাই অনলাইনের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছতে পারছেন। সময়ের পরিবর্তনে ফ্যাশন খাতে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে অনেকে সম্পৃক্ত হচ্ছেন অনলাইন জগতে। অনেক গ্রাহক এখন অনলাইনে কেনাকাটা করেন। ২০২০ সালে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০২১ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ শতাংশে।

আমাদের দেশের অনেকেই, বিশেষ করে নারীরা করোনার সময়ে ঘরে বসে না থেকে অনলাইনে ব্যবসা করছেন। নিজের ডিজাইন করা পোশাক দিয়ে তারা পরিচিতি তো পেয়েছেনই, তার সাথে দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

মহামারীতে পোশাকের ধারা পরিবর্তন নতুন কোন চিত্র নয়। অতীতেও এমন হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মহামারীর সময় সব সময় গুরুত্ব পায়। ১৬৬৫ সালের ‘ গ্রেট প্লেগ’-এর সময় চিকিৎসকরা রোগীর সাথে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বিশেষ পোশাক পরতেন। গ্রেট প্লেগের সময়ে মাস্ক, লম্বা কোট লম্বা এবং হাতে গ্লভস পরতেন চিকিৎসকেরা। তারা বিশ্বাস করতেন এধরনের পোশাক রোগী থেকে তাদের দূরুত্ব তৈরি করবে এবং বাতাসে রোগ ছড়ালেও তারা আক্রান্ত হবে না।
সামাজিক দূরত্ব বিষয়টি সাধারণ জনগণও মেনে চলতো। এসময়ে পুরুষেরাও চিকিৎসকদের মতো লং কোট, টুপি, গøাভস ও মাস্ক পরতেন। নারীরাও সে সময়ে নিজেদের সুস্থ রাখার জন্য লম্বা গাউন পরতেন, যেগুলো বেশ জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে থাকতো। এভাবে অন্যদের সাথে দূরত্ব তৈরি হতো। গাউন ছাড়াও হুপ নারীরা স্কার্ট পরতেন। হুপ স্কার্ট বানিয়ে তার ওপর ঘোড়ার লোম, সুঁতা বা লিনেন দিয়ে বানানো ক্রাইনোলাইন কাপড় দিয়ে পরার প্রচলন ছিলো নারীদের মাঝে। ১৯ শতকের দিকে গাউন আর হুপ স্কার্ট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আজো নারীদের মাঝে এ পোশাকগুলো জনপ্রিয়।

পোশাকের ধরণ পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে বলতে গিয়ে প্রফেসর কৈট সালা আরো বলেন, মানুষ দীর্ঘ দিন ঘরে থেকেছে। তাই তারা এখন আরামদায়ক পোশাক পরতেই বেশি ভালোবাসে। হয়তো কভিড পরবর্তী সময়ে দেখা যাবে অনেক কর্মী আঁঁটোসাঁটো পোশাকের পরিবর্তে আরামদায়ক পোশাককেই গুরুত্ব দেবেন।

সম্প্রতি জনপ্রিয় গেøাবাল ব্র্যান্ড লুলুলেমন অস্ট্রেলিয়াসহ ১১টি বাজারে ২০ হাজার ক্রেতার উপর একটি জরিপ। যাতে দেখা যায় ৮১ শতাংশ ক্রেতা বলেন, লকডাউনে বাসায় অফিসের কাজ করতে গিয়ে তারা বুঝতে পেরেছেন, আরামদায়ক পোশাক পরে কাজ করতে তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ফলে তারা কর্মক্ষেত্রে আরও ভাল কাজ করতে পারেন। বর্তমানে ডেনিম স্কার্ট, জগার্স, স্কার্ফ এবং ফুলহাতা পোশাকের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় এসব এখন জনপ্রিয় ফ্যাশন পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মানুষ এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে সচেতন। তাই এখন খুব বাজেট পণ্য কিনতে মানুষ বেশি আগ্রহী। নিজেদের টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনেই বর্তমানে বাজেট পণ্যের চাহিদা বাড়ছে বলে মনে করেন অনেক ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়