জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস আজ

আগের সংবাদ

উৎসবমুখর নারায়ণগঞ্জ : প্রচারণায় এগিয়ে আইভী

পরের সংবাদ

এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ : দ্বিতীয় ধাপেও একই চিত্র

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : করোনা মহামারির অভিঘাত থেকে উত্তরণে দ্বিতীয় ধাপের প্রণোদনা বিতরণেও আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। পিছিয়ে আছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এসএমই খাতের জন্য প্রণোদনা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, বড় উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৬ মাসে বিতরণ করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনার পরিমাণ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। ৬ মাসে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ৩১২টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৪০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। করোনা মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা বিতরণের ক্ষেত্রে বড় উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। অন্যান্য খাতের প্রণোদনা বিতরণে আগ্রহ কম দেখা যায়। দ্বিতীয় ধাপে এসে এবার বড় ঋণ বিতরণেও আশানুরূপ ফল আসেনি।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এসএমইর জন্য ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ বিতরণ করা হয়েছে ২৪ ভাগ। দ্বিতীয় ধাপের করোনা মোকাবিলা করার জন্য প্রণোদনা লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল ১৯ হাজার ৭৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। ৬ মাসে ৩১ হাজার ৪৪২ জন উদ্যোক্তার মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসএমই খাতের প্রণোদনা বিতরণে বরাবরই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনাগ্রহ। মহামারির প্রথম ধাপে করোনা মোকাবিলা করার জন্য ঘোষিত প্রণোদনা পুরো সময়ে বিতরণ অর্ধেকের সীমাবদ্ধ ছিল। ঘোষিত এ প্রণোদনা সরকার দিয়েছে বলে মনে হলেও বিতরণ করবে বাণিজ্যিক ব্যাংক। জানতে চাইলে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল ভোরের কাগজকে বলেন, এসএমই খাতে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করছে না- এ কথা ঢালাওভাবে বলা যাবে না। তিনি বলেন, বেশ কিছু ব্যাংক অনেক ভালো করছে। এর মধ্যে আমাদের এবি ব্যাংক অন্যতম। এ ব্যাংকার বলেন, নতুন বছরে এসএমই খাতকেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। গত বছরেও আমাদের এ খাতে অবস্থান ভালো ছিল, প্রায় ৮৫ শতাংশ বিতরণ করেছি। তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন হলেই দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে। তা না হলে সার্বিক উন্নয়নের টার্গেট ব্যাহত হবে। এছাড়া এসএমই খাতে বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন আরো একটু সহজ করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানান তিনি।
পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে শেষে টাকা আদায়ও করতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংককে। সরকার দেবে শুধু সুদ ভর্তুকি। বিতরণ করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রিপোর্ট করলেওই টাকার ৪ শতাংশ হারে সুদ ভর্তুকি দেবে সরকার। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তারা পণ্য ও সেবা এবং কর্মসংস্থান বেশি করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ কম। এ কারণে প্রণোদনাও তারা নিতে পারে না। এ ছাড়া এসএমই ঋণের কম পরিমাণ অর্থ বিতরণ করতে যে পরিমাণ পরিচালন ব্যয় হয় একই খরচ হয় আকারে বড় ঋণ বিতরণে। এসএমই ঋণ বিতরণ কম হওয়ার এটাও অন্যতম কারণ।
করোনা মহামারির মধ্যে রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের মতো খাদ্য উৎপাদনেও সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। করোনাকালীন লকডাউন বা চলাচল সীমিত করলেও খাদ্য উৎপাদন, সরবারহ ও বিপণনে প্রতিবন্ধতকতার মুখোমুখি হতে হয়নি। খাদ্য উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ধাপেও একই ব্যবস্থা থাকে। যদিও দ্বিতীয় ধাপে রাজধানীর ঢাকার বাইরে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েছে। তবে মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। তারপরও কৃষি বা পল্লী কর্মসংস্থানে কোনো ঝুঁকি তৈরি না হয় এ জন্য কৃষিতে ৩ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে এক হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত পুনঃঅর্থায়নের তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৬ মাসে বিতরণ হয়েছে এক হাজার ২১৮ কোটি টাকা।
রপ্তানিকে নিরাপদ করতে মাত্র ২ শতাংশ সুদে স্বল্পকালীন ঋণ ‘রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল-ইডিএফ’ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। রপ্তানি আদেশের বিপরীতে এ সব ঋণ পেয়ে থাকে রপ্তানিকারকরা। দেশের রপ্তানির সঙ্গে কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা তথা অর্থনীতির লাইফলাইন সম্পর্কিত হওয়ার কারণে করোনাকালে রপ্তানি অব্যাহত রাখতে সরকার ইডিএফ-এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ বিলিয়ন তহবিলের পুরোটাই বিতরণ করা হয়।
রপ্তানির ক্ষেত্রে অপর তহবিল ‘প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট স্কিম’-এর বিতরণ হয়েছে মাত্র ৫০৪ কোটি টাকা- যা মোট তহবিলের মাত্র ১০ ভাগ। করোনা মহামারির দ্বিতীয় ধাপে এসে সবচেয়ে কম বিতরণ হয়েছে এ তহবিল। বিদায়ী ২০২১ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই তহবিলের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা। এ তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন। নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই ঋণ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানালে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংককে সমপরিমাণ অর্থ দেবে। এ তহবিলের এখনো ৪ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা অব্যবহৃতই রয়ে গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়