গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্ত হত্যা বন্ধে ব্যর্থ সরকার

আগের সংবাদ

ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ! জিনোম সিকুয়েন্সিং বাড়ানোর তাগিদ > সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে আরো দুই সপ্তাহ লাগবে : বিশেষজ্ঞদের মত

পরের সংবাদ

প্রবাসী কর্মীদের পেটের পীড়া : উদ্বেগ জানিয়ে আমিরাত ও কাতারের চিঠি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশে যাওয়ার পর কলেরা ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক। কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত দুই দেশে ইতোমধ্যেই ১৮০ জন অসুস্থ হওয়ার কথা জানা গেছে। কয়েকজন যাত্রী বলছেন, যাত্রার আগে বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। বিমানবন্দরের ভেতরের রেস্তোরাঁয় দাম বেশি হওয়ায় খরচ বাঁচাতে বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকার খাবার খেয়ে তারা অসুস্থ হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার কারণে বাসা থেকে আনা খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই নষ্ট খাবার খেয়েও তারা অসুস্থ হচ্ছেন।
প্রবাসী ব্যক্তিদের অসুস্থতার বিষয়টি বেড়ে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার দূতাবাস বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে রওনা দেয়া শ্রমিকরা ডায়রিয়া, পেটব্যথা, বমি ও কলেরাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কয়েকজন শ্রমিক উড়োজাহাজের মধ্যেই অসুস্থ হয়েছেন। গন্তব্যস্থলের বিমানবন্দরে বা কাজে যোগ দেয়ার পরও অসুস্থ হচ্ছেন অনেকে।
গত বুধবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জেনেছেন। তবে এটি খুব বড় আকারের নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১২০ জন ও কাতারে ৬০ জন অসুস্থ হওয়ার কথা জানা গেছে। সরকার বলছে, বিমানবন্দর ও এর আশপাশের এলাকার রেস্তোরাঁগুলোতে পানি ও খাবারের মান যাচাই করার উদ্যোগ শিগগিরই নেয়া হবে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট ১৬টি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশি বিদেশযাত্রীদের মধ্যে কলেরা ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে। বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকার রেস্তোরাঁগুলোতে পানি ও খাবারের মান যাচাই করতে বিভিন্ন সংস্থা চালাবে অভিযান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে ১৮০ জন বাংলাদেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা ডায়রিয়া, পেটব্যথা, বমি ও কলেরায় আক্রান্ত। বাংলাদেশে ডায়রিয়া, কলেরা সাধারণ স্বাস্থ্যগত অসুস্থতা বিবেচনা করা হলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গুরুতর রোগ বিবেচনা করা হয়। য²া ও কলেরাকে ভয়ানক হিসেবেই বিবেচনা করা হয় মধ্যপ্রাচ্যে। এ কারণে দেশ দুটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস সাংবাদিকদের বলেন, মূলত বিমানবন্দর ও আশকোনা এলাকার পানি পান করার কারণেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। তবে এ নিয়ে বেশি উদ্বেগের কিছু নেই।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির বিধিনিষেধসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের জন্য প্রায় ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে আসতে হয় প্রবাসীকর্মীদের। আর মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের আসতে হয় অন্তত ৮ ঘণ্টা আগে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে একটা লম্বা সময় প্রবাসী কর্মীদের কাটাতে হয় বিমানবন্দরেই। এ সময়ে তারা বিমানবন্দর ও আশপাশের দোকান ও ক্যান্টিন থেকে খাবার ও পানি কিনে যেমন খান, আবার অনেকেই খান বাড়ি থেকে সঙ্গে নিয়ে আসা খাবার। অনেকে খরচ বাঁচাতে না খেয়েও থাকেন। দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকা, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেয়ায় অনেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যাদের অনেকেই কলেরাসহ নানা রকমের পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, শত শত যাত্রী ফ্লাইটের ১০-১২ ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে এসে বিভিন্ন স্থানে অপেক্ষা করছেন।
কেউ বিমানবন্দরের পার্কিংয়ে খোলা আকাশের নিচে, কেউ সামনের বাগানে বসে অপেক্ষা করছেন। বিমানবন্দরের বহুতল কার পার্কিং ভবনের ২য় তলায় আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের জন্য করোনা পরীক্ষার ল্যাব করা হয়েছে। সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে খাবারের দোকান, বসা ও টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ের আগের ৬ ঘণ্টা হিসাব করেই সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। কেউ ৬ ঘণ্টার আগে বিমানবন্দরে এলে ল্যাব জোনে গিয়ে বসে বিশ্রাম করা, খাবার কিনে খাওয়া কিংবা সেখানের টয়লেট ব্যবহারের কোনো সুযোগ তারা পায় না। ফলে ওই ৬ ঘণ্টা সময়ের আগে আসা যাত্রীদের আশ্রয় নিতে হয় খোলা আকাশের নিচে বিমানবন্দরের পার্কিং কিংবা রাস্তায়।
অন্যদিকে বিমানবন্দরের মূল টার্মিনাল ভবনে প্রবেশের আগে যাত্রীরা নিজের সঙ্গে আনা খাবার ছাড়াও বিমানবন্দরের সামনের দোকান, পার্কিং ভবন, করোনা ল্যাব জোনে থাকা দোকান থেকে খাবার কিনে খান। তাছাড়া অনেকে এর আশপাশের রেস্তোরাঁ থেকেও খাবার কিনেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মীরা অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত মাংস, বিরিয়ানি, তেহারি ও খিচুড়ি খান। পানি কিনে খাওয়া ও সহজলভ্য না হওয়ায় অনেকেই পর্যাপ্ত পানি পান করেন না।
সুনামগঞ্জ থেকে আসা দুবাইগামী যাত্রী সোলাইমান হোসেন বলেন, রাত ১টায় ঢাকায় আসার গাড়িতে উঠেছি, সকাল ৭টায় এয়ারপোর্টে পৌঁছাই। আমার ফ্লাইট সন্ধ্যা ৬টায়। ৮ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে আসতে বলেছে। কিন্তু রাস্তায় যানজটসহ অন্য সমস্যার কথা চিন্তা করে আগেই রওনা দিতে হয়েছে। অপেক্ষার এই সময়টাতে খাবারের কি ব্যবস্থা? জানতে চাইলে সোলাইমান হোসেন বলেন, সকাল ৭টায় নেমে তো বুঝতে পারছিলাম না কোথায় যাব, কোথায় বসব, কী খাব। আমার ফ্লাইট সন্ধ্যায় হওয়ায় আমাকে টার্মিনালের যেতে দেয়নি পুলিশ। সকালে পানি খেয়েছি। দুপুরে রাস্তার ওপার থেকে বিরিয়ানি কিনে খেলাম।
তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, নি¤œমানের কোনো খাবার বিমানবন্দরের ভেতরে বিক্রি হচ্ছে না। নিয়মিত তদারকি করা হয় বিমানবন্দরের খাবারের দোকানগুলোতে। বিমানবন্দরের বহুতল কার পার্কিংয়ের দোতলায় করোনা পরীক্ষাগারের স্থানে যাত্রীদের সুবিধার জন্য চারটি খাবারের দোকান আছে, সেখানে খাবারও মানসম্মত। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদুল আহসান বলেন, বিমানবন্দরের ভেতরে যেসব রেস্তোরাঁ আছে, সেগুলো আমরা নিয়মিত চেক করছি। স্যানিটারি ইনস্পেক্টরের আলাদা শাখা আছে এগুলো দেখভালের জন্য। পাশাপাশি করোনার পিসিআর পরীক্ষাগারে যে চারটি খাবারের দোকান আছে, সেগুলোও তদারকির মধ্যে আছে। এসব রেস্তোরাঁতে কোনো পচা-বাসি খাবার খাওয়ানো হয় না।
তিনি জানান, বিমানবন্দর এলাকায় খাবারের দাম একটু বেশি থাকায় অনেক সময় দূর-দূরান্ত থেকে যাত্রীরা নিজেরাই খাবার নিয়ে আসে। সেই খাবার আট ঘণ্টা পর বা একদিন পর ঠিক নাও থাকতে পারে। অথচ যাত্রীরা সেগুলো খাচ্ছেন। বিমানবন্দরের আশপাশের রেস্তোরাঁ, সড়কের পাশের দোকান ও রেলস্টেশনে যাত্রীরা বিভিন্ন খাবার খাচ্ছেন। এই খাবারগুলোর গুণগত মানের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই বিমানবন্দরের ভেতরে বাইরের খাবার নিতে দেয়া হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়