বহুবিবাহের আইনি নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল

আগের সংবাদ

অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র : উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে, ২০২২ সাল হবে অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক > জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

পরের সংবাদ

মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত : ওমিক্রন ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি-টিকায় জোর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা এবং শনাক্তের হার গত কিছু দিন ধরেই একটু একটু করে বাড়ছে। তবে এখনই লকডাউনের কথা ভাবছে না সরকার। সংক্রমণ বাড়ার প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণের হার বিবেচনা করে সরকার জরুরি কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তবে ওমিক্রন ঠেকাতে সরকারের প্রস্তুতিতে এখনো গলদ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও সংক্রমণ ঠেকাতে কিছু বিধিনিষেধ কার্যকরের কথা বলেছিলেন। সেই বিধিনিষেধের বিষয়টিই গতকাল মন্ত্রিসভার আলোচনায় উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শিগগিরই যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার তার একটি রূপরেখাও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তার মতে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে করোনা-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সঙ্গে বৈঠক থেকে সেই বিধিনিষেধগুলো জানানো হবে। বিধিনিষেধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- টিকা ছাড়া ১২ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে না, টিকা সনদ ছাড়া গণপরিবহনে চলাচল করা যাবে না, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেতেও লাগবে টিকা সনদ। এছাড়া গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচলের আদেশও আসতে পারে। একই সঙ্গে চলমান নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে মানুষের সংখ্যাও নির্ধারণ করে দেয়া হতে পারে। পাশাপাশি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এসব বিধিনিষেধ ঠিকঠাকভাবে কার্যকর হয় কিনা, তা দেখার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
১২ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে মানা : ১২ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীরা কোভিডের অন্তত এক ডোজ টিকা না নিলে স্কুল-কলেজে যেতে পারবে না। টিকাপ্রাপ্তি সহজ করতে নিবন্ধন ও অন্যান্য নথিপত্র প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতাও তাদের জন্য তুলে নেয়া হচ্ছে। জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি বা যে কোনো একটি পরিচয়পত্র নিয়ে গেলেই শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন ছাড়া কেউ স্কুলে আসতে পারবে না। ভ্যাকসিন দিয়ে স্কুলে যাওয়া নিরাপদ হবে, প্রমোশন ও ক্যাম্পেইনে সেটাই বলা হবে। প্রমোশন, ক্যাম্পেইনের জন্য স্বাস্থ্য, পিআইডি, স্থানীয় সরকার, প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইমাম সাহেবরাও যাতে খুতবায় ভ্যাকসিনের কথা বলেন সেবিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে।
দুই ডোজ টিকা না নিলে ওঠা যাবে না ট্রেন-লঞ্চ-প্লেনে, যাওয়া যাবে না শপিংমলে : দুই ডোজ টিকা না নিলে ওঠা যাবে না ট্রেন-লঞ্চ-প্লেনে। পাশাপাশি রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি শপিংমলেও যাওয়া যাবে না। এছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত রাখতে হবে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
বুস্টার ডোজের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে চিন্তা করতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ৬০ বছর পর্যন্ত থাকবে নাকি কমানো যায়, সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে বলা হয়েছে, যেহেতু আমাদের পর্যাপ্ত টিকা আছে। গণপরিবহনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যদি আরেকটু সংক্রমণ বাড়ে তাহলে হয়তো ৫০ শতাংশ (আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন) করা হবে। ওটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিলে ভাড়া বাড়ানো নিয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা বিআরটিএকে বলে দেব কোনো ভাড়া-টাড়া বাড়ানো যাবে না।
রেস্টুরেন্টে কীভাবে সনদ যাচাই প্রক্রিয়া তদারকি করা হবে? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মোবাইলে (টিকা সনদের) সফট কপি থাকবে কিংবা হার্ড কপি থাকবে। কোনো দেশেই পুরো জনসংখ্যা কোনোভাবেই চেক করা সম্ভব নয়, স্যাম্পল হিসেবে করা হয়। ভিজিল্যান্স টিম থাকবে প্রত্যেক শহরে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শকেরা চেক করবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেক করবে।
কবে থেকে এই নিয়ম কার্যকর করা হবে? এ প্রশ্নে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কারিগরি লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা টাইম দিয়ে এটা করা হবে। ওমিক্রন ঠেকাতে গেলে কঠোর হতেই হবে।
সরকারের প্রস্তুতি কেমন : করোনা ভাইরাসের ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতে এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সরকারকে। ভারতে গত কিছু দিন ধরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, যে কারণে সীমান্ত পথ হয়ে সেখান থেকে সংক্রমণ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে। কয়েক মাস আগে যখন বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটি প্রথমে সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতেই দেখা গিয়েছিল। দিল্লি-মহারাষ্ট্র-পশ্চিমবঙ্গসহ যেসব রাজ্যে সংক্রমণ বেশি সেখানে কারফিউ জারি, নানা রকম বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ভারতের সঙ্গে এখনো বাংলাদেশের নৌ, আকাশ এবং স্থলপথে যাত্রী আসা-যাওয়া চলছে। বন্দর দিয়ে পণ্যবাহী পরিবহনও যাতায়াত করছে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর বলেছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করা মানুষ এবং যানবাহনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন সতর্কতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে থেকে ভারতে যাওয়া এবং আসার ক্ষেত্রে যাত্রীসংখ্যা প্রতিদিন ৩০০ জনে সীমিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভারত থেকে আসা ট্রাকের সহযোগীর সংখ্যাও কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর আগে পণ্যবাহী ট্রাকের চালকের সঙ্গে দুইজন সহকারী আসতে পারত, সেটা এখন থেকে একজন হবে। এছাড়াও স্থলবন্দরগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে দ্রুত কোভিড-১৯ শনাক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়