পাভেল জামান, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) থেকে : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের হাতে নাগেশ্বরীর কিশোরী ফেলানী হত্যার ১১ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শুক্রবার। কিন্তু কাক্সিক্ষত বিচার আজো পায়নি পরিবার। এ উপলক্ষে নিজ বাড়িতে পালন করা হচ্ছে তার ১১ম মৃত্যুবার্ষিকী।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭নং আন্তর্জাতিক ৩নং সাব পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাটাতার ডিঙ্গিয়ে বাবার সঙ্গে দেশে ফিরছিল ফেলানী। এ সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। তার বাড়ি উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামে।
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারকার্য শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে আদালত। ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায় বিচারের আশায় পত্র দেন। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়।
পরে ২০১৫ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আরো একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে। ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ রুপি প্রদানের অনুরোধ করেন। এর জবাবে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়। এরপর ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি আজো।
ফেলানী হত্যা মামলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, কুড়িগ্রাম জেলা জজকোর্ট পাবলিক প্রসিকিউটর এড. আব্রাহাম লিংকন বলেন, ভারতের সুপ্রিমকোর্টে ফেলানী হত্যার রিটটি কার্যতালিকার তিন নম্বরে ছিল। নানা কারণে শুনানির ধার্য দিন পিছিয়ে গেছে। এখন করোনাকালীন সময়ে নিয়মিত শুনানি সম্ভবপর নয়। প্রত্যাশা করছি দ্রুত রিট আবেদনটির শুনানি কার্যতালিকায় নিয়ে আসবে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। শুনানি হলে দুদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হলে তা উভয় রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান জানান, বিষয়টি আন্তর্জাতিক। আমি চাই ফেলানী হত্যার সুষ্ঠু বিচার। এছাড়া সীমান্তে সব হত্যা বন্ধেরও দাবি জানাই আমি।
৬ জানুয়ারি বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহু জনের কাছে গিয়েছি, কিন্তু ১১ বছরেও কাক্সিক্ষত বিচার পেলাম না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।