বহুবিবাহের আইনি নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল

আগের সংবাদ

অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র : উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে, ২০২২ সাল হবে অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক > জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

পরের সংবাদ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন >> উন্নয়নের রাজনীতি করি : আইভী; মানুষ পরিবর্তন চায় : তৈমূর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অনতু রেজা, নারায়ণগঞ্জ থেকে : বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে চলছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। পাড়া-মহল্লায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকাল থেকে রাত-অবধি চলছে প্রার্থীদের খণ্ড খণ্ড মিছিল। হ্যান্ড মাইক নিয়ে সকাল-বিকাল প্রার্থীদের সালাম জানিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতিনিধিরা। বিশেষ করে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী মূল দুই প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে নির্বাচনে এসেছে ভিন্ন মাত্রা। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ভোটাররা দৃশ্যমান উন্নয়নে বিশ্বাসী থাকায়, নির্বাচনে অনেকটাই এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী। গতকাল প্রচারণাকালে আইভী বলেন, তৈমূরের সঙ্গে বিএনপি আছে কি নেই, তা দেখার এত মাথাব্যথা নেই, আমি উন্নয়নের রাজনীতি করি। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট তৈমূর এই বলে প্রচার চালাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তৈমূর আলম উইনেবল ক্যান্ডিডেট।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী সকাল

থেকে সিটি করপোরেশনের বার্মাস্ট্যান্ড, পাঠানটুলি, এসিআই পানিরকলসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ এবং পথসভা করেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও তার প্রচারণায় অংশ নেন। আইভী গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগের এত মাথাব্যথা নেই প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীরা আছে বা নেই সেটি দেখার। তিনি বলেন, আমি উন্নয়নের রাজনীতি করি। সাধারণ ভোটাররা আমার উন্নয়নের রাজনীতির সঙ্গে আছে। তাই ভোটাররাই আমার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, সাংসদ শামীম ওসমানের সঙ্গে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। তবে কোনো দ্ব›দ্ব নেই। তিনি এবং তার লোকজন সবাই নৌকার পক্ষেই কাজ করছেন। আর তৃনমূলের কর্মীরা সব সময়ই আমার সঙ্গে আছেন। বিগত নির্বাচনে ছিলেন এবং এখনো আছেন। তৃমমূলে কোনো বিভেদ নেই। সিটি করপোরেশন থেকে জন্ম সনদ পেতে ভোগান্তির বিষয়ে আইভী বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে থেকে একটি নতুন সিস্টেম চালু করেছে। এই সিস্টেমটি নতুন হওয়ার কারণে অনেকেই বুঝে উঠতে পারছে না বলে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। একসঙ্গে অনেক চাপ পড়ার কারণে সার্ভারে কিছুটা জটিলতা হয়েছে। তবে সেবা একেবারে পাচ্ছে না এটা সঠিক নয়।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সিটি করপোরেশনের সাত নম্বর ওয়ার্ড কদমতলী, ভান্ডারীরপুর, নয়াপাড়, পশ্চিমপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী পুল এলাকায় প্রচারণায় নেমে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, আমি দোয়া চাই এই সম্মান যেন আমি রাখতে পারি। সরকারি দলের বড় বড় নেতারা, এমপিরা আমার বিরুদ্ধে অনেক বড় বড় কথা বলছেন। তারা ঢাকা থেকে এসে এসব কথা বলেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাকে চেনেন। আওয়ামী লীগের যিনি প্রধান তিনিই বলেছেন তৈমূর আলম উইনেবল ক্যান্ডিডেট। তিনি তিনবার বলেছেন তৈমূর জেতার মতো লোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা মানুষ বিশ্বাস করবে, না সরকারি দলের এমপি-মন্ত্রীদের কাহিনী বিশ্বাস করবে।
তিনি বলেন, মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। সিটি করপোরেশন একটা সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। যেখানে ১৭৬টি ঠিকাদারি সংস্থা সিটি করপোরেশনে লিস্টেড ছিল। সেখানে এখন মাত্র ২২/২৩ জন ঠিকাদার রয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের হাতেই সব কন্ট্রোল রয়েছে। এটা নারায়ণগঞ্জে ওপেন সিক্রেট যে দুজন ঠিকাদার এই ঠিকাদারি ব্যবসা কন্ট্রোল করে। আমি আলী আহমদ চুনকা থেকে একটা কাজ শিখেছি, সেটা হলো তিনি তার গাড়িতে কোনো কন্ট্রাক্টর উঠতে দিতেন না। সেটা শিখে আমি বিআরটিসির চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমার রুমে গাড়িতে কোনো কন্ট্রাক্টর ঢুকতে দিতাম না। অনেক বিষয় আছে যেটা মানুষের চোখ এড়ানো যায় না।
তৈমূর বলেন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের পুঞ্জীভূত ব্যর্থতা ও নগরবাসীর ক্ষোভ এবং পরিবর্তনের যে ডিমান্ড এটাই জনগণের প্রত্যাশা। সিটি করপোরেশন অধিক মাত্রায় ট্রেড লাইসেন্স ফি, হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্ম নিবন্ধন ফি বাড়িয়েছে। পানির কল না বসিয়েই দেড় লাখ টাকা করে নিচ্ছে। এতে জনগণের করের বোঝা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি যে সেবাটা পাওয়ার কথা ছিল সেটাও নগরবাসী পায়নি। যানজন, জলাবদ্ধতা ও বায়ুদূষণমুক্ত শহর চায় নগরবাসী। নগরবাসী নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নাগরিক সুবিধাটা হলো এই যে, প্রতিটি এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার থাকতে হবে ও মেধা বিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে কিশোর গ্যাং বৃদ্ধি পেয়েছে পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। কিশোরদের হাতে অল্টারনেটিভ না থাকার কারণেই কিশোর গ্যাং হচ্ছে। যেখানে খেলার মাঠ হওয়ার কথা সেখানে সিটি করপোরেশন অ্যাপার্টমেন্ট করেছে। অ্যাপার্টমেন্ট করাটা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব না। এই অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়ে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিনা টেন্ডারে এই অ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাট ও দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মেয়র শহরকে রিপ্রেজেন্ট করে। আমরা যখন বিদেশে গিয়েছি মেয়র আমাদের রিসিভ করত এবং সেখানে আমাদের আপ্যায়ন করত। অতএব, মেয়রের ব্যর্থতা সরাসরি নগরবাসীর ওপর বর্তায়। এ কারণে নগরবাসী এখন পরিবর্তন চায় এবং করের বোঝা থেকে বাঁচতে চায়।
তিনি বলেন, বিআরটিসির চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আমি প্রতিটি বাস-ট্রাকে আমার নম্বর দিয়ে রেখেছিলাম। আমি কারো ওপর নির্ভর করিনি। সরাসরি জনগণের সমস্যা শুনে সমাধান করতাম। আগামী ১০০ বছরকে সামনে রেখে আমি পরিকল্পনা করতে চাই। পৌর পাঠাগারকে এই আলী আহমদ চুনকা পাঠাগার করা হোক এটা আমি দরখাস্ত সই করেছি। কিন্তু যে পাঠাগারটা করা হয়েছে এখানে দেড়শ লোকও বসতে পারে না। আমি করলে এটা নগরবাসীর ডিমান্ড অনুযায়ী করতাম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়