বহুবিবাহের আইনি নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল

আগের সংবাদ

অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র : উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে, ২০২২ সাল হবে অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক > জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

পরের সংবাদ

নগরে জমজমাট পাহাড়ের মেলা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মেলায় ঢুকেই এক ধরনের বুনো খাবারের সুঘ্রাণে অর্ধভোজন হয়ে গেল। কাছে যেতেই দেখা গেল ‘পাতরুতরু’ অর্থাৎ ‘স্বাগতম’ স্টলে বসে একজন বাঁশের ভেতর থেকে টেনে টেনে ব্যাম্বো চিকেন খাচ্ছেন। ব্যাম্বোর পাশাপাশি তারা বিক্রি করছেন গরুর বট, কাঁকড়া, শামুক, হাঁসের মাংসসহ নানা পদের পাহাড়ি রান্না। পাতরুতরু বিক্রয় প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি থেকে আসা পার্থ চাকমা বলেন, বিক্রি মোটামুটি। খাবারের দোকান চিপার মধ্যে হওয়ায় লোকজনের আনাগোনা কম। তাই বিক্রিও একটু কম।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলার দ্বিতীয় দিনে এমন চিত্র দেখা গেল। শুরুর দিকে মেলায় ভিড় কম থাকলেও সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নানা বয়সি নারী-পুরুষ শিশুর আনাগোনায় জমজমাট হয়ে ওঠে। মেলায় প্রায় ১০০টি স্টলে সরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী, প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী, তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য সামগ্রী, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁতে বোনা পণ্য এবং পাহাড়ি খাবার প্রদর্শন ও রয়েছে বিক্রির ব্যবস্থা।
মেলা ঘুরে দেখা গেল ‘তুমবাচ’ অর্থাৎ সুন্দর, ‘চিংস কিচেন’ অর্থাৎ ডায়মন্ড, ‘মনোবী’ অর্থাৎ পাহাড়ি শিশুর নাম, ‘পিবির’ অর্থাৎ মিষ্টি বাতাস, ‘হেই চাং’ অর্থাৎ খেয়ে দেখি, ‘মিজেল্ল্যা’ সব কিছু মেশানো, ‘চান্দরি’ অর্থাৎ চাঁদের মতো সুন্দরসহ বাহারি সব চমৎকার পাহাড়ি নামের স্টল।
তাদের মধ্যে ‘তুমবাচ’ অথবা সুন্দর এসেছে খাগড়াছড়ি থেকে। তুমবাচের স্টলে রয়েছে কুইচ্চ্যা ভাজা, পাহাড়ি মুরগি, হাঁসের মাংস, শামুক, পাজনসহ পাহাড়ি বাহারি খাবার। এর একটু দূরে দেখা গেল ‘হেই চাং’-এর স্টল। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে পাহাড়ি হলুদ, পেঁপে,

মরিচের গুঁড়া, আনারস, বেল, ব্যাম্বো চিকেন, শিমুল আলু, শুকরের মাংসসহ নানা পদ। এর নেতৃত্বে রয়েছেন জয়তী চাকমা। তিনি জানালেন, ভালোই বিক্রি হচ্ছে, তবে আরো ভালো হতো যদি সব স্টল একই ছাদের নিচে হতো। কিছু স্টল তৃতীয় তলায়, কিছু বেজমেন্টে, কিছু উন্মুক্ত জায়গায়। যে কারণে লোকজন খেই হারিয়ে ফেলছে।
ভবনের নিচ তলায় দোকানিরা বসেছে কাঁচা আর শুকনো বাজারের পসরা সাজিয়ে। কী নেই সেখানে। পাহাড়ি জুমের লাল-কালো-সাদা চাল থেকে শুরু করে পাওয়া যাচ্ছে আখ, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, আলু, কমলা, মাটির আলু, তারা, মাশরুম, শিম, শুঁটকি, নানা পদের মরিচসহ হাজারো সামগ্রী। যেন পাহাড় ছুটে এসেছে নগরে।
তৃতীয় তলায় রয়েছে সাংবানি, তারেঙ, রানজুনি, পাংখোয়া ফ্যাশন এবং এনজিওসহ ৪৫টি হস্তশিল্পের স্টল। যেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হাতে বোনা নানা রকম বাহারি সামগ্রী।
কথা হলো প্রীতিলতা উন্নয়ন সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বকুল মারমার সঙ্গে। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, আমরা হয়তো প্রীতিলতার মতো হতে পারব না। কিন্তু তাকে হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছি বঞ্চিত নারীদের নিয়ে। প্রীতিলতাই আমাদের সাহস। আমার স্টলে প্রদর্শিত অধিকাংশ সামগ্রীই প্রীতিলতা উন্নয়ন সমিতির অবহেলিত নারী কর্মীদেরই হাতে বোনা কাজ। যারা সমাজে পদে পদে বঞ্চিত লাঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, কেবল বাঙালিদের মধ্যে নারী নির্যাতীত হয় তা নয়, আদিবাসী নারীও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এসব প্রকাশের আলোয় আসে না।
রিপা হ্যান্ডিক্র্যাফটের প্রিনা চাকমা বলেন, বিক্রি মোটেও হচ্ছে না। কারণ তৃতীয় তলায় হওয়াতে ক্রেতারা উপরে আসতে চাচ্ছে না। সবই এক ছাদের নিচে হলেই ভালো হতো।
সেই সঙ্গে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার শিল্পীদের অংশগ্রহণে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
কথা হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক মংছেলাইন রাখাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই মেলা প্রতি বছর আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হলেও কোভিডের কারণে গত বছর আয়োজন করা হয়নি। এ বছরও কিছুটা বিলম্ব হয়ে গেলেও আশা করি নিজস্ব ভবনে আমরা একটি সফল মেলার আয়োজন করতে পেরেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের নানা অর্গানিক সামগ্রী আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এটাই আমাদের স্বার্থকতা।
মেলা চলবে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত। মেলায় প্রতিদিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়