বহুবিবাহের আইনি নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল

আগের সংবাদ

অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র : উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে, ২০২২ সাল হবে অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক > জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

পরের সংবাদ

ইউপি ভোটে সহিংসতায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে আ.লীগে : বিদ্রোহীদের লাগাম টানা যাচ্ছে না

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : গত বুধবার শেষ হয়েছে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। এ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতায় সারাদেশে প্রাণ গেছে ১১ জনের। এর আগে চার ধাপের নির্বাচনে নিহত হয় ৮৪ জন। যদিও নির্বাচন কমিশনের হিসাবে এই সংখ্যা ৬৪ জন। গতকালসহ ৫ ধাপের নির্বাচনে প্রাণ গেল ৯৫ জনের। বুধবারের সহিংসতায় বগুড়ার গাবতলীতে ৫, গাইবান্ধার সাঘাটায় ১, চাঁদপুরের কচুয়ায় ১, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ১, জামালপুরের বকসীগঞ্জে ১, দৌলতপুরে ১ এবং বোয়ালখালীতে ১ নিহত হয়। এছাড়া নির্বাচনের পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবারও সুনামগঞ্জসহ বেশকিছু এলাকায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ঘটেছে।
এদিকে, অন্যান্য নির্বাচনের মতো পঞ্চম ধাপেও বিজয়ীদের মধ্যে অনেক এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। কোনোভাবেই তাদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এত বহিস্কার, সতর্কতার পরও এ সংখ্যা বাড়ছেই। কেন এত সহিংসতা, কেন এত বিদ্রোহী – এ নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলটির আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। এরই মধ্যে তৃণমূলে বিদ্রোহীর সংখ্যা ও সংহিসতার হার বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান ও জড়িত নেপথ্যের কারিগরদের তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে দলটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের। তারা এ নিয়ে কাজও শুরু করেছেন।
বিদ্রোহী এবং সহিংসতা নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল

মাহমুদ স্বপন বলেন, দলের পরবর্তী মনোনয়ন পাবেন না এবং দলীয় পদচ্যুত হবেন জেনেও নিজ দায়িত্বে অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে নির্বাচিতও হচ্ছেন। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমার মনে হয়, বিষয়টি নিয়ে একটি নির্মোহ গবেষণা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচিত হচ্ছেন, নিশ্চয় তারা স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় বা স্থানীয় কোনো সমীকরণে নির্বাচিত হচ্ছেন। সব জায়গায় এক রকম চিত্র নয়। সুতরাং কমন কোন মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। একটি নির্মোহ স্টাডি করে এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। একই সঙ্গে সমাজে ছড়িয়ে পড়া অহিষ্ণুতা কমিয়ে এনে পরমতসহিষ্ণু একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সবার উপরে দেশ-এই ভাবনায় সমস্ত জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশ আবার পথ হারাবে।
সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে দীর্ঘদিন ধরেই সহিংসতার অপসংস্কৃতি বিদ্যমান। সবাই মিলে এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় বের করতে হবে। আমার মত একজন ক্ষুদ্র মাঠকর্মীর বিবেচনা মতে, পরমতসহিষ্ণু পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা, ধারণ, লালন, আইনের শাসনের কঠোর প্রয়োগ, নির্বাচনে অর্থের ছড়াছড়ি বন্ধ করার মাধ্যমে সহিংসতার অপসংস্কৃতির রোধ করা সম্ভব।
দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আর সহিংসতা- এই বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, আমরা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছি। তবে সহিংসতা যে শুধু চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কারণেই হচ্ছে, তা নয়। স্থানীয় ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থীদের মধ্যেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সহিংসতা হচ্ছে। কারণ, তাদের নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের বিষয় থাকে। ফলে তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনা বেশিই হচ্ছে এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কারণে বা ইন্ধনে যদি কোনো দূর্ঘটনা ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে স্থানীয় নেতৃত্বের দুর্বলতা। স্থানীয় নেতারা নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। এই বিষয়গুলোও আমরা গভীরভাবে ভাবছি এবং এদের চিহ্নিত করছি। বিদ্রোহীদের নেপথ্যে কারা, তাদেরও তালিকা আমরা করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, বলা যায় ইউপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ একাই মাঠে। ফলে নিজ দলের ভেতর থেকেই অনেক প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। এর কারণ আমার কাছে মনে হয়, দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে কোথাও না কোথাও গলদ আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাইয়ে অনিয়মের সন্দেহও উড়িয়ে দেয়া যায় না। যাদের আমরা বিদ্রোহী বলছি, তারা দলের মনোনয়ন চেয়ে পাননি বলেই বিদ্রোহী হয়েছেন। এই লোকগুলোর মধ্যে কেউ কেউ মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। তাদের জোর করে বিদ্রোহী হওয়ার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে – এমনও হতে পারে। এখানে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, দল কী আসলে যোগ্যদের মূল্যায়ন করেছে? সেটাও ভাবা দরকার।
তিনি বলেন, বিদ্রোহী আর সহিংসতা দুটোই আমার কাছে মনে হচ্ছে একইসূত্রে গাঁথা। আরেকটি বিষয় হতে পারে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের ওপর বিএনপি বা সরকারবিরোধীরা ভর করছে – যেটি দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন। সে কারণেও বিদ্রোহীরা বিজয়ী হচ্ছেন। তবে আমার প্রশ্ন, আসলেই কী বিদ্রোহীরা সবাই বিদ্রোহী? এদের মধ্যে অনেকে আসলে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য, তৃণমূলে সমর্থন আছে। অথচ নানা সমীকরণে মনোনয়ন পাননি। এরকম কথাও কিন্তু আমরা শুনছি। অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়ও পত্র-পত্রিকায় এসেছে। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা দরকার। গণহারে কেন দলের শৃঙ্খলা ভাঙা হচ্ছে। সেটা ভাবা দরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়