বহুবিবাহের আইনি নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল

আগের সংবাদ

অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র : উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে, ২০২২ সাল হবে অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক > জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

পরের সংবাদ

অপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ ও পর্যটক বৃদ্ধি : হুমকিতে সোনাদিয়া দ্বীপ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম বশির উল্লাহ, মহেশখালী (কক্সবাজার) থেকে : প্রাকৃতিক বন, জীববৈচিত্র্য, প্যারাবন বেষ্টিত আঁকাবাঁকা নদী পথ, লাল কাঁকড়ার মিলনমেলা, সম্পদ সম্ভাবনা- এসব নিয়ে দ্বীপ সোনাদিয়া। মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপে দৃষ্টি পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। তাদের অপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যাপক নির্মাণযজ্ঞ ও বিপুলসংখ্যক মানুষের যাতায়াত, আনুষঙ্গিক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদির ফলে দ্বীপটির দূষণ ক্রমেই বাড়বে।
মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়া। মোট জমির পরিমাণ ২৯৬৫.৩৫ একর। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পরিমাণ ০৩.১৫ একর। শুঁটকি মহাল ২টি, চিংড়ি চাষযোগ্য জমি ৯৮ একর। বন বিভাগের জমি ২১০০ একর। বাকি সব প্রাকৃতিক বন ও বালুময় চরাঞ্চল। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ। এখানে রয়েছে পৃথিবী বিখ্যাত বিশেষ বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত প্যারাবন, দূষণ ও কোলাহলমুক্ত সৈকত। অসংখ্য লাল কাঁকড়ার মিলনমেলা, পূর্বপাড়ায় নব্য জেগে ওঠা চর, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম, দ্বীপবাসীর নিজস্ব সংস্কৃতি ও সাদাসিদে জীবনযাপন, পূর্বপাড়ার হযরত মারহা আউলিয়ার মাজার ও তার আদি ইতিহাস, জেলেদের সাগরের মাছ ধরার দৃশ্য, সূর্যাস্তের দৃশ্য, প্যারাবন বেষ্টিত আঁকাবাঁকা নদী পথ। অপার সম্ভাবনাময়ী সম্পদে ভরপুর। কিন্তু সোনাদিয়া দ্বীপ নিয়ে দুচিন্তার বিষয়ও আছে। পরিবেশবাদীরা জানান, ২০১০ সালের দিকে ঘোষণা আসে সোনাদিয়া দ্বীপকে ঘিরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে। এখন শোনা যাচ্ছে, গভীর সমুদ্রবন্দর নয়, সেখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। গত ৩ মাস ধরে সোনাদিয়ায় দৈনিক ৩শ থেকে ৫শ পর্যটক যাওয়া-আসা করছে। পুরো বালিয়াড়ি দখল করে আগুন জ¦ালিয়ে নানা রান্নার নানা আয়োজন করা। ফোটানো হয় নানা ধরনের পটকা। চর এলাকাজুড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। পুরো চরে শতাধিক তাঁবু টানিয়ে রাত্রীযাপন, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে পরিবেশের ক্ষতি করছে পর্যটকরা। কাছিমের ডিম পাড়ার স্থান হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। সাত বর্গকিলোমিটার আয়তনের সোনাদিয়া দ্বীপে প্রায় সাড়ে তিনশ জেলে পরিবার বাস করে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, সরকারের উচিত দ্বীপে নতুন বসতি নিরুৎসাহিত করা। দ্বীপটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবেই রেখে দেয়া প্রয়োজন। কারণ দ্বীপটি অতিরিক্ত মানুষের বসবাসের উপযোগী নয়। তাছাড়া অতিরিক্ত জনসংখ্যা দুর্ভোগের পাশাপাশি পরিবেশগত বিপর্যয়ও ডেকে আনবে। তুলনামূলকভাবে দ্বীপটি এখনো নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর। সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হলে এর পরিবেশ মারাত্মকভাবে নষ্ট হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহকারী পরিচালক নয়ন শীল বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপে জাহাজ চলাচলের মাধ্যমে পরিবেশের যদি ক্ষতি হয় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপে কোনো কিছু করার আগে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। তবে আমাদের একার পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার প্রশাসন, কক্সবাজারের সচেতন নাগরিক, পরিবেশবাদী ও ছাত্র-যুব সমাজের অকুণ্ঠ সমর্থন। সোনাদিয়া দ্বীপকে সরকার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করেছিল। কারণ এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর তা বিপদে আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়