চট্টগ্রামে অসহায়দের কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাশ টাকা বিতরণ

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে

পরের সংবাদ

সাড়ে ৩ বছরে দৃশ্যমান একটি মাত্র স্প্যান!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ বি সিদ্দিক, কুড়িগ্রাম থেকে : মামলা এবং ঠিকাদারের গাফিলতিতে দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছরেও শেষ হয়নি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর সড়কের শুলকুর বাজার সেতুর নির্মাণকাজ। নির্মাণকাজের মেয়াদ দেড় বছরে দৃশ্যমান হয়েছে একটি মাত্র স্প্যান। এলজিইডি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও সামান্য কাজ হওয়ার পর এখন সাব ঠিকাদারের মামলায় দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে সেতুটি না হওয়ায় কাজে আসছে না এলজিইডির ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৮ ফুট চওড়া সংযোগ সড়ক। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুলকুর বাজার সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে এলজিইডি টেন্ডার আহ্বান করে। টেন্ডারে নির্মাণকাজটি পায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদসংলগ্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেবি, যার স্বত্বাধিকারী মো. আলতাফ হোসেন ও কে এম বদরুল আহসান (মামুন)। ৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কাজটি শুরু হয় ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট।
নির্ধারিত মেয়াদ ছিল ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০। নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এরপর পেরিয়ে গেছে ২ বছর। এখনো বন্ধ রয়েছে সেতুর নির্মাণকাজ। দেড় বছরে সেতুর একটি মাত্র স্প্যান নির্মাণ করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, কাজটি বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেবির স্বত্বাধিকারী আলতাফ হোসেন এবং কে এম বদরুল আহসানের (মামুন) নামে হলেও অসম্পন্ন কাজটি করার দায়িত্ব পান শহরের নিম বাগান এলাকার গোলাম রব্বানী। কাজ শেষ না করলেও এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি। তাছাড়া পণ্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতের জন্য সেতুর বিকল্প রাস্তাটি হেরিংবোন হিসেবে করলেও ওই সাব-কন্ট্রাক্টর হেরিংবোন রাস্তাটির প্রায় ৫ হাজার ইট তুলে নিয়ে গেছেন। ফলে গত বন্যায় সেটি ভেঙে যায়। এতে প্রতিদিন হাজারো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেতুটি না হওয়ায় উত্তরবঙ্গের বৃহৎ যাত্রাপুর গরুর হাট, সদর উপজেলার পাঁচগাছী, যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নসহ সীমান্তবর্তী অসংখ্য হাটবাজারে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে।
শুলকুর বাজারের ব্যবসায়ী মোফাচ্ছেল হোসেন বলেন, সব ব্যবসায়ীকে পণ্য আনা-নেয়ার কাজে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্যয় করতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। বিকল্প রাস্তাটি খানাখন্দে ভরে থাকায় অনেক সময় যানবাহন উল্টে যাচ্ছে। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সেতুটির কাজ সমাপ্ত করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ঠিকাদারের অসহযোগিতা ও গাফিলতির কারণে সমাপ্ত হয়নি।
পাঁচগাছী ছত্রপুর গ্রামের মোজাহার বলেন, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রিজের বিকল্প রাস্তাটি ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়। বৃষ্টি হলে রাস্তায় কাদা জমে চলাচলে বিঘœ ঘটে।
বিকল্প রাস্তাটি তলিয়ে গেলে এলাকাবাসীকে অতিরিক্ত নৌকা ভাড়া দিয়ে পার হতে হয়। কাজ বন্ধ করে দিয়ে ঠিকাদার গোলাম রব্বানী আজ পর্যন্ত এখানে আসেননি। যাত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, উত্তরবঙ্গের বৃহৎ যাত্রাপুরহাটসহ আশপাশের অনেক হাটবাজারে পণ্য আনা-নেয়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
কুড়িগ্রাম শহরের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, বর্ষা মৌসুমে মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আমি ঠিকাদারকে বহুবার সেতু নির্মাণের কাজটি শুরু করার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু ঠিকাদার বলেন, এখনো অনেক সময় আছে। এ ব্যাপারে গোলাম রব্বানী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিল প্রদানে বিলম্ব ও কাজ বাতিল করায় আমি হাইকোর্টে রিট করেছি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেবির স্বত্বাধিকারী কে এম বদরুল হাসান (মামুন) বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে চুক্তি অনুযায়ী সময় মতো কাজটি সম্পন্ন করতে পারিনি। আদালতে আমরা কোনো রিট করিনি। হাইকোর্টে রিটের কথা জানতে পেরে থানায় জিডি করেছি। ওই প্রতিষ্ঠানের আরেক স্বত্বাধিকারী আলতাফ হোসেন বলেন, বিধিসম্মতভাবে কাজ বাতিলের বিষয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। তবে আমাদের সম্পন্ন করা কাজের সঠিক বিল চাই। জনদুর্ভোগ লাঘবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব, যার আবেদন ইতোমধ্যে এলজিইডি অফিসে দাখিল করেছি।
কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ করতে পারেনি।
ইতোমধ্যে প্রথমবার কাজ সমাপ্তির সময় শেষ হলেও আবারো সময় বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মন্জু বলেন, বর্তমান ঠিকাদার দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে জনগণের দুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম-২ আসনের এমপি পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে এলজিইডির প্রকৌশলীকে নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এলজিইডি অতিসত্বর কাজটি সম্পন্ন করবে বলে জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়