চট্টগ্রামে অসহায়দের কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাশ টাকা বিতরণ

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে

পরের সংবাদ

শ্রীবাস অঙ্গন ও বিশ্বের প্রথম সংস্কৃত গ্রন্থ ছাপাখানা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অবিভক্ত বাংলার শ্রীহট্ট বর্তমান সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার পঞ্চখণ্ড গ্রাম। যাহা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম পার্ষদ শ্রীবাস ঠাকুরের আবির্ভাব স্থল। এই পঞ্চখণ্ড নামকরণে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। কথিত আছে তখনকার সময়ে এখানে ত্রিপুরার রাজা এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। যজ্ঞে পুরোহিত্য করার জন্য রাজা মিথিলা থেকে পাঁচজন ব্রাহ্মণকে আমন্ত্রণ করেন। যজ্ঞের পরে রাজা ব্রাহ্মণদের প্রতি প্রসন্ন হয়ে পাঁচজন ব্রাহ্মণকে পাঁচটি খণ্ড বা ভূমি দান করেছিলেন। সেই থেকে এই স্থানের নাম হয় পঞ্চখণ্ড। আবার সেই পাঁচজন ব্রাহ্মণের মধ্যে একজন ছিলেন শ্রীজলধর পণ্ডিত। সেই জলধর পণ্ডিতের পুত্ররূপে শ্রীবাস ঠাকুর বা শ্রীবাস পণ্ডিত চতুর্দশ শতাব্দীতে এই স্থানে আবির্ভূত হন। সেই থেকে এই স্থান পণ্ডিতপাড়া নামে ও বিশেষভাবে পরিচিত। শ্রীবাস ঠাকুর পণ্ডিতপাড়ায় তার ১২ বছর বয়সকাল পর্যন্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তার শিক্ষা দীক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে তারা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতা শ্রীজগন্নাথ মিশ্রের সঙ্গে ভারতের শ্রীধাম নবদ্বীপে চলে যান এবং সেখানে গঙ্গার তীরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। নবদ্বীপে চলে গেলেও পণ্ডিতপাড়ায় তাদের বাড়িটি থেকে যায়। থেকে যায় প্রায় পাঁচশ বছর পূর্বে গড়ে ওঠা বিশ্বের প্রথম সংস্কৃত গ্রন্থ ছাপাখানা (অনি পণ্ডিত ছাপাখানা) ও লাইব্রেরিটি। কিন্তু কালের বিবর্তন আর বর্তমানে ভূমিখেকোদের ভোগ দখলের স্বীকার প্রাচীন ঐতিহ্য বহনকারী এই স্থাপনাগুলো। শুধু নামমাত্র স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সনাতন ধর্মের এই তীর্থ স্থানটি।
যা হোক যতটুকু স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে আজকের এই স্থাপনাটি দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনের গল্প কিন্তু আরো বেদনাদায়ক। আজ শ্রীবাস অঙ্গন দর্শন করতে গেলে আপনি আমি দাঁড়িয়ে থাকা স্মৃতিচিহ্নের যতটুকু অংশই দেখতে পাই তা রক্ষণাবেক্ষণ বা উদ্ধারে যাদের অবদান অনস্বীকার্য কিংবা যারা প্রশংসার দাবিদার তারা হলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভাবাদর্শে প্রতিষ্ঠিত সনাতন ধর্মের সংগঠন ইসকন।
সংগঠনটি প্রাচীন এই তীর্থস্থানের জরাজীর্ণ অবস্থা আর ভূমি ভোগ দখলের মহোৎসব অবলোকন করে নিজে উদ্যোগী হয়ে শ্রীবাস অঙ্গনের প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গা বিভিন্ন হামলা, মামলা, মোকদ্দমার সম্মুখীন হয়ে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করে অঙ্গনের পুনঃসংস্কার কাজ বর্তমান অবধি চালিয়ে যাচ্ছে। স্থাপনাটির প্রাচীন অবয়ব ঠিক রেখে ইসকনের তত্ত্বাবধানে এবং সিলেট জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে দুতলাবিশিষ্ট একটি ভবন, লাইব্রেরি ও ছাপাখানা পুনরায় সংস্কার করা হচ্ছে। সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে দর্শনার্থীরা পাঁচশ বছরের পুরনো সেই ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা বা জ্ঞান লাভ করতে পারবে।
বাকি ৬০ শতাংশ জায়গা এখনো ভূমিখেকো দখলদারদের দখলে রয়ে গেছে এবং তারা সেখানে অবৈধভাবে শ্রীবাস ঠাকুরের জায়গা দখল করে বড় বড় স্থাপনা বাসাবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। দুঃখের বিষয় ঐতিহ্যবাহী এই দেবোত্তর সম্পত্তি আজ ভূমিখেকোদের ভোগের পণ্য। তাই আমরা সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন সরকার, প্রশাসনসহ সব সম্প্রদায়ের জনসাধারণের নিকট শ্রীবাস অঙ্গন রক্ষায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা কামনা করছি। যাতে শুধু সিলেট নয়, সমস্ত ভারতবর্ষের এই ঐতিহাসিক স্থাপনা তথা সনাতন ধর্মের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত শ্রীবাস অঙ্গনটি গুটি কয়েক হিংস্র ভূমিখেকোদের হাতে বিলীন হয়ে না যায়। কারণ এই ঐতিহ্যের দাবিদার শুধু সনাতনীরা নয়। তাই সব ধর্মের সব বর্ণের মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য এগিয়ে আসার এবং প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার।

সচ্চিদানন্দ কৃষ্ণ দাস (সজল) : লেখক, সিলেট।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়