চট্টগ্রামে অসহায়দের কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাশ টাকা বিতরণ

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে

পরের সংবাদ

যার কাছ থেকে আওয়ামী লীগের শেখার আছে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

প্রায় নীরবেই চলে গেলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি মরহুম সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগের দুই দুইবারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ।
জীবদ্দশায় রাজনীতির প্রাত-প্রদীপের আলোয় থাকা অত্যন্ত সাদাসিধে নিরহঙ্কারী মানুষটি আওয়ামী লীগকে দিয়েছেন অনেক কিছু। একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে সৈয়দ আশরাফের বাংলাদেশের প্রায় সব দলের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ আশরাফের কোনো চাওয়া পাওয়া ছিল না বললেই চলে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশকে ভালোবাসতেন তিনি গভীরভাবে। কখনো তিনি চাননি দল ক্ষমতায় এসেছে বলে রাষ্ট্রের কিংবা দলের কাছ থেকে অন্যায় সুযোগ সুবিধা নিতে আর তাই তিনি নিজের অসুস্থতাজনিত চিকিৎসার জন্য নিজের বাড়িটা পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে ডেকে নিয়ে সৈয়দ আশরাফকে রাষ্ট্রের মন্ত্রী হিসেবে চিকিৎসার খরচের জন্য এক কোটি টাকার চেক দিতে চাইলেও তিনি তা অতি বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দেন। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি তার স্ত্রীর অসুস্থতাজনিত চিকিৎসা খরচ ব্যয়ের জন্য সেই বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন অথচ সে সময় তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ প্রভাবশালী মন্ত্রী। খুব সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র রাজনীতিবিদ তিনি মন্ত্রী এবং দলের দুই দুইবারের সাধারণ সম্পাদক হয়েও যার সম্পদ কেবলই কমেছে। সৈয়দ আশরাফ মন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী দিয়েই অত্যন্ত সাদাসিধেভাবে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। সৈয়দ আশরাফ যেসব পাঞ্জাবি পরতেন সেগুলোর মূল্য ছিল ২৫০-৩০০ টাকা, যা সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর পর তার ব্যক্তিগত সচিব উল্লেখ করেছেন।
রাজনীতি করে এদেশে অনেকেই অনেক কিছুই করেছেন। কেউ ক্ষমতা ব্যবহার করে শিল্পপতি হয়েছেন, কেউ ক্ষমতা ব্যবহার করে কোটিপতি হয়েছেন কেউবা আবার ক্ষমতায় থেকে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন; কিন্তু সৈয়দ আশরাফের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ক্ষমতার আগে সৈয়দ আশরাফ যেভাবে জীবনযাপন করতেন ক্ষমতায় আসার পরও তাকে ব্যতিক্রম হতে দেখা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে সৈয়দ আশরাফ যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই পরিবারের আদর্শটাই ছিল সততার সহিত জীবনযাপন করা এবং সাধারণ মানুষের ওপর অন্যায়ভাবে ক্ষমতার প্রয়োগ না করা। পিতা মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তদুপরি তিনি নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তথাপিও তাকে কখনো বেহিসাবি এবং ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে বেহিসাবি জীবনযাপন করতে দেখা যায়নি।
এমন একজন নির্লোভ, সৎ এবং মেধাবী রাজনীতিবিদকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে কখনো চর্চা হতে আমরা দেখিনি। এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুদিবসেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো বড় আয়োজন চোখে পড়েনি। অথচ আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ এই সৈয়দ আশরাফের কাছে আওয়ামী লীগের শেখার আছে অনেক কিছুই। ৩ বছর আগে তিনি চলে গেছেন ওপারে। বেঁচে থাকতে সৈয়দ আশরাফকে কেউ তোয়াজ করুক তিনি তা কখনো চাননি। আজীবন সৎ এবং দেশ আর আওয়ামী লীগকে ভালোবেশে কাটিয়ে দিয়েছেন। চাইলে সৈয়দ আশরাফ কি-না করতে পারতেন এদেশে; কিন্তু তার সততা এবং দেশপ্রেম তাকে কঠিন শেকলে বেঁধে রেখেছিল আর তাই তিনি পৃথিবী থেকে অনন্তের পথে পাড়ি দিয়েছিলেন বলতে গেলে রিক্ত হাতে, তবুও সৈয়দ আশরাফরা বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর এবং অক্ষয় হয়ে থাকবেন তাদের জীবনের অমূল্য সম্পদ সততার জন্য।
বর্তমান রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফদের মতো রাজনীতিবিদের বড়বেশি প্রয়োজন ছিল।

রতন কুমার তুরী : লেখক ও শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়