চট্টগ্রামে অসহায়দের কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাশ টাকা বিতরণ

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে

পরের সংবাদ

মুমিনুলের চৌকস নেতৃত্ব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দুই দশকের বেশি সময় ধরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ খেলে আসছে বাংলাদেশ। খালেদ মাসুদ পাইলট থেকে শুরু করে শেষ তামিম ইকবাল- কোনো টাইগার অধিনায়কই কিউই দুর্গে সফলতার গল্প লিখতে পারেননি। তিন সংস্করণে তাদের সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে ব্ল্যাক ক্যাপসদের মাঠে ব্যর্থ মোহাম্মদ আশরাফুল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে টম লাথামদের দুর্গে নবম অধিনায়ক হিসেবে সফলতার গল্প লিখেছেন মুমিনুল হক। সব সংস্করণ মিলিয়ে ৩২ ম্যাচ পর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। তবে এ সাফল্যের অঙ্ক কষতে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে টাইগার অধিনায়ককে।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ২০২২ সালের প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া ম্যাচটিই জিতে নিয়েছে মুমিনুল হকের দল। পুরো পাঁচ দিন ধরে দাপুটে ক্রিকেট খেলেই ৮ উইকেটের জয় পেয়েছে টাইগাররা। ড্রয়ের পথে এগোতে থাকা টেস্ট কাল চতুর্থ দিন শেষে বেশ জমে ওঠে। ইবাদত হোসেনের এক স্পেলে বাংলাদেশের সামনে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। এমন রোমাঞ্চ নিয়ে কি রাতে ঘুমানো যায়। অধিনায়ক হলে তো কথাই নেই। পরের দিনের খেলা নিয়ে অঙ্ক কষতেই তো রাত কাবার। মুমিনুল হককেও এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে শেষ দিনে খেলতে নেমেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারানোর পর অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল বলেন, ‘আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, কী অনুভব করছি। এটা এক কথায় অবিশ্বাস্য। সত্যি কথা বলতে, আমি ম্যাচের আগের দিন রাতে ঘুমাতে পারিনি, শেষ দিনে কী হবে সেটা ভেবে। যখনই ৫ উইকেট পড়ে গেল, মনে হয়েছে ওরা কম রানেই অলআউট হয়ে যেতে পারে।’
টেস্টের প্রথম চারদিন জয়, পরাজয় বা ড্র কোনো ফলই দলের ভাবনায় ছিল না। ব্যাটিং-বোলিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকঠাক করাই ছিল দলের মূল ভাবনা। মুমিনুলের ভাষায়, ‘আমরা ফল নিয়ে কিন্তু চিন্তা করিনি। এখন বললে হয়তো অনেকে বলবে লোকটা পাগল হয়ে গিয়েছে। আমাদের ভেতরে ছিল, প্রক্রিয়া অনুযায়ী যেন খেলতে পারি। যেমন ব্যাটিংয়ের সময় লক্ষ্য ছিল লম্বা সময় ধরে খেলার। বোলিংয়ে একটা জায়গায় বল করা।’ ইবাদতের স্পেলের পরও নিজেদের রোমাঞ্চ লাগামছাড়া হতে দেয়নি বাংলাদেশ দল। মুমিনুলের ব্যাখ্যা, ‘কাল শেষ বেলায় ইবাদত যখন হঠাৎ করেই উইকেট নিল, তখন মনে হলো, এ টেস্ট জিততে যাচ্ছি। আর গতকাল অল-আউট হওয়ার পর নিশ্চিত হয়েছি। তবে বাড়তি উত্তেজনা কাজ করছিল না। টিভিতে দেখবেন, আমরা সবাই শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। বল ধরে ধরে খেলার চেষ্টা করেছি ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগে। ব্যাটিংয়ে শুরুতে চাপে ছিলাম। মুশফিক ভাই ওই দুইটা রান নেয়ার পরই মনে হয়েছে জিতেছি।’ পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনে ৫ উইকেটে ১৪৭ রানে দিন শুরু করা নিউজিল্যান্ড দল ২২ রান যোগ করতেই হারায় বাকি ৫ উইকেট। তাতে বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৪০ রান। সেজন্য বোলারদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সকে কৃতিত্ব দিয়েছেন মুমিনুল, ‘বোলারদের প্রতি বার্তা ছিল, আমরা শেষ চারদিন যে বল করেছি, সেভাবেই যেন করি। উইকেটের জন্য যাব না। বলতে পারেন, উইকেটের জন্য না গেলে পাব কীভাবে। পরিকল্পনা ছিল, উইকেটের জন্য করতে গিয়ে যেন রান না দিই। শেষ চারদিন যে প্রক্রিয়া ছিল, সেটাই অনুসরণ করা, চাপ তৈরি করা। ফল এলে আসবে, না এলে নেই।’ এ জয়ের মাহাত্ম্য আরো বেড়ে যায় যখন জানা যায়, সাড়ে চার বছর ধরে ঘরের মাঠে ১৭ ম্যাচের একটিতেও হারেনি নিউজিল্যান্ড। আর উপমহাদেশের কোনো দলের বিপক্ষে তাদের সর্বশেষ পরাজয়টি ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রায় এক যুগ আগে। শুধু তা-ই নয়, খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না বাংলাদেশ দলও। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা দেখা গেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও। আশা জাগিয়েও চট্টগ্রাম টেস্টে মিলেছে পরাজয়। পরে বৃষ্টিবিঘিœত ঢাকা টেস্টে মূলত আড়াই দিনে হেরেছিল বাংলাদেশ। এই অবস্থা থেকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদেরকে তাদেরই মাঠে গিয়ে রীতিমতো উড়িয়ে দেয়া নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স।
২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১২টি আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুমিনুল হক। এর মধ্যে সাফল্য বলতে তিন ম্যাচে জয় ও এক ম্যাচে ড্র। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই জয় বাদ দিলে মুমিনুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বাকি দুই জয় জিম্বাবুয়ের পক্ষে। আর ড্রটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তাই ঐতিহাসিক জয়টি সবদিক থেকে তার জন্য সেরা সাফল্য, সেরা সাফল্য বাংলাদেশের জন্যও। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম কোনো ম্যাচ জয়।
মুমিনুলের সাদা পোশাকের নেতৃত্ব শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে। শুরুটা ভালো ছিল না এ টাইগার অধিনায়কের। তার অধীনে জিম্বাবুয়ে বাদে পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেললেও সাফল্যের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। তবে মানুষ হারতে হারতে শেখে, হয় অভিজ্ঞ। তার প্রমাণ পাওয়া গেল কিউইদের বিপক্ষে। সবচেয়ে বড় কথা যেখানে সাকিব, তামিম, মাশরাফিরা পারেননি, সেখানে করে দেখিয়েছেন মুমিনুল।
তবে অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুল যতটা না সফল, তার চেয়ে বেশি সফল টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে। সাদা পোশাকে বাংলাদেশের আস্থার প্রতীক বলা যায় তাকে। এখন পর্যন্ত ৪৮ ম্যাচ খেলে ৪১.৭৩ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৪৬৪ রান। ১১টি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক মুমিনুল ফিফটি হাঁকিয়েছেন ১৫টি। টেস্টে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ১৮১; ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সফল এই টেস্ট ব্যাটসম্যান বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ৬টি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়