চট্টগ্রামে অসহায়দের কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাশ টাকা বিতরণ

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে

পরের সংবাদ

দুর্দান্ত জয়ে সব পাল্টে দিল টাইগাররা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়নস নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাঠে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে টাইগাররা। টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকা কিউইদের গতকাল মাটিতে নামিয়ে এনেছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। আসল কথা হলো নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় ফেলেছে মুমিনুল বাহিনী। এ জয়ের মাধ্যমে বিশ্বজয়ের গল্প রচনা করেছে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। নিউজিল্যান্ডে মাটিতে ১১ বছর ধরে কোনো জয় পায়নি এশিয়ার অন্য দলগুলো। নতুন বছরের শুরুতে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে এশিয়ার মান রেখেছে টাইগাররা। গত বছরের জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে হওয়া ফাইনাল ম্যাচে বিরাট কোহলির ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল কিউইরা। যে আসরে তলানিতে থেকে শেষ করেছিল টাইগাররা। প্রথম আসরে জয়ের মুখ না দেখতে পারা দলটি দ্বিতীয় আসরে উপস্থিত হয়ে হারিয়ে দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে। দুর্দান্ত জয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সেসঙ্গে নামের পাশে যোগ করেছে মূল্যবান ১২টি পয়েন্ট।
এতে পয়েন্ট তালিকায় পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে টাইগাররা। তাদের উপরে আছে শুধু অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এখন বাংলাদেশের নিচে। এখনো পয়েন্টের খাতা খুলতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
টেস্টের রাজা নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অনভিজ্ঞ এক দল নিয়ে মুমিনুল হক বছরের শুরুতে বুঝিয়ে দিয়েছেন ভেতরে জয়ের ক্ষুধা থাকলে সেরা হওয়ার প্রচণ্ড জেদ থাকলে বাধা হতে পারবে না কেউ। জয়ের কাজ বাংলাদেশ করে রেখেছিল চতুর্থ দিনই। ৫ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে বুধবার মাঠে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ১৩০ রানে পিছিয়ে থাকায় কার্যত তাদের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৭। সেই রানের সঙ্গে গতকাল বুধবার কিউইরা যোগ করতে পেরেছে মাত্র ২২ রান। তাতে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪০। সাদমান ও শান্তর উইকেট হারালেও বাংলাদেশ কক্ষপথ থেকে ছিটকে

যায়নি। ৮ উইকেটের জয় নিয়ে ইতিহাস গড়েই ২২ গজ ছাড়েন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
আগের দিনের ৪ উইকেটের সঙ্গে ইবাদত গতকাল শিকার করেন আরো ২টি। দিনের দ্বিতীয় ওভারে রস টেইলরকে যেভাবে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলিয়ে বোল্ড করেছেন তা ট্রেডমার্ক হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন। ওই উইকেটে বাংলাদেশের কোনো পেসার ৯ বছর পর টেস্টে ৫ উইকেটের স্বাদ পান। এরপর জেমিনসনের উইকেট নিয়ে সাফল্যভাণ্ডার ভারী করেন। তাসকিনও থেমে থাকেননি। তার শিকার ২ উইকেট। শেষ উইকেটটি নেন মিরাজ। ব্যাটিংয়ে নেমে ৪০ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় অনায়াসে। সাদমান ও শান্ত সাজঘরে ফিরলেও মুমিনুল হক সতীর্থ মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে ইতিহাস গড়ে মাঠ ছাড়েন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইবাদত ৪৬ রানে তুলে নেন ৬ উইকেট। প্রথম ইনিংসে পেয়েছিলেন এক উইকেট। ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ৩২৭ রানের জবাবে বাংলাদেশ করে ৪৫৮ রান। ১৩০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ১৬৯ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয় কিউইরা। টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের কৃতিত্ব দলের সবাইকে ভাগ করে দিয়েছেন অধিনায়ক মুমিনুল। ম্যাচের পর তিনি বলেন, আমাদের কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে দলে যারা যারা ছিল, সবাই খুব সহায়তা করেছেন। সুজন ভাই থেকে শুরু করে সবাই অনেক বেশি সমর্থন জুগিয়েছেন। সবাই আমাদের মোটিভেট করার চেষ্টা করেছেন। দলে মুশফিক ছিলেন সবচেয়ে অভিজ্ঞ। ব্যক্তিগতভাবে উনি আমার সঙ্গে অনেক কথা বলেছেন। আমার কাছে মনে হয়, উনি সবচেয়ে বেশি আবেগী। একজন তরুণ অধিনায়ক হিসেবে আমাকে উনি বেশি সহায়তা করেছেন।
গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের এ জয় নানা কারণেই বিশেষ। এ জয় এমন একটা সময় এলো, যখন দেশের ক্রিকেটের অনেক প্রক্রিয়াই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারদিকে চলছে সমালোচনা। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ঠিকমতো চলছে না, জাতীয় দলের নির্বাচন প্রক্রিয়া ঠিক হচ্ছে না, দেশের মাটিতে ভালো উইকেটে ক্রিকেটাররা খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না দেখে দেশের ক্রিকেটের নতুন প্রতিভার জোগান বন্ধ হয়ে গেছে বলেও অনেকে অভিযোগের তীর ছুড়ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দিকে। এমন পরিস্থিতিতে এ জয় বিসিবিকে নিঃসন্দেহে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের এ জয় মুমিনুল হকের দলকে বড় এক আত্মবিশ্বাসই জোগাবে। তারা যে পারে, টেস্ট ক্রিকেটে যে বাংলাদেশ অনাহূত নয়, এ বিশ্বাসই চারদিকে ছড়িয়ে দেবে। নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ গেছে দেশের ক্রিকেটে তর্কযোগ্যভাবে সেরা তিন ক্রিকেটারকে ছাড়াই- সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ। তামিম চোটের সঙ্গে লড়ছেন, সাকিব ছুটি কাটাতে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে আর মাহমুদউল্লাহ গত জুলাইয়েই টেস্ট ক্রিকেটকে হুট করে বিদায় বলে দিয়েছেন। মুমিনুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের টেস্ট দলটা তাই হঠাৎই এক বিরূপ বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়েছিল।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক পেসার ইবাদত হোসেন বলেন, প্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই আল্লাহকে। দ্বিতীয়ত, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আমাদের দল ২১ বছর ধরে কোনো ম্যাচ জেতেনি। এবার একটা লক্ষ্য ঠিক করে এসেছিলাম। নিজেদের হাত তুলেছি আর বলেছি তারা টেস্ট চ্যাম্পিয়ন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তাদের হারানোর উদাহরণ রেখে যেতে হবে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে শক্তিশালী একাদশ নিয়েও জিততে পারেনি নিউজিল্যান্ড। এ নিয়ে হতাশ দলীয় অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ব্যাটিং একাদশে কেন উইলিয়ামসন না থাকলেও ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ওয়াগনার, টিম সাউদিদের নিয়ে গড়া কিউইদের বোলিং লাইনআপ ছিল পূর্ণ শক্তির। তবে প্রথম ইনিংসে ডেভন কনওয়ের সেঞ্চুরির পরও বড় সংগ্রহ পায়নি নিউজিল্যান্ড। আর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশি পেসারদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। ৮ উইকেটের হারের পর ল্যাথাম বলেন, বাংলাদেশ পাঁচদিনই আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়