চট্টগ্রামে অসহায়দের কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাশ টাকা বিতরণ

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে

পরের সংবাদ

তিন বছরে দ্বিগুণের বেশি মোবাইল লেনদেন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং। প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। জরুরি প্রয়োজনে যে কোনো সময় একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে সহজেই টাকা পাঠানোর সুবিধা এই খাতকে জনপ্রিয় হতে সাহায্য করছে। এতে ব্যাংকিং সেবায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, বর্তমানে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনা করছে। আর মাত্র ৩৫ মাসের ব্যবধানে এই মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। কেন্দীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অক্টোবর মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৬৭ হাজার ৫৮৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৮০ কোটি টাকা, যা একক মাস ও দৈনিক লেনদেনে এ যাবৎকালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। ওই সময় প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে মাত্র ৩৫ মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয় ৬৫ হাজার ১৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকার। ওই মাসে দৈনিক লেনদেন হয় ২ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় সর্বোচ্চ লেনদেন হয় গত মে মাসে। ওই মাসে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। আর দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের অক্টোবর মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায়েছে ১০ কোটি ৮১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ গ্রাহক পাঁচ কোটি ৯২ লাখ ১২ হাজার ১৯১ জন। আর নারী গ্রাহক ৪ কোটি ৮৬ লাখ ২৮ হাজার ১৯৪ জন। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৫ লাখ ১৬ হাজার ৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৯ জন। আর নারী গ্রাহক ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯১০ জন। চলতি বছরের অক্টোবর শেষে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে শহরে এজেন্ট ৬ লাখ ৪০ হাজার ১২৬ জন। আর গ্রামের এজেন্ট ৫ লাখ ১৫ হাজার ৬৫ জন। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭১ জন। এর মধ্যে শহরে এজেন্ট ৪ লাখ ৮১ হাজার ২২ জন। আর গ্রামের এজেন্ট ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৪৯ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই মানুষের জীবন অনেক বেশি ডিজিটাল হচ্ছে। সবাই এখন ডিজিটাল সার্ভিসগুলো গ্রহণ করছে। এছাড়া এমএফএসের বিস্তৃতির ক্ষেত্রে করোনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যে কারণে মানুষ এখন নগদ টাকা কম বহন করে অনেক বেশি ডিজিটাল পেমেন্ট করছে। অন্যদিকে সরকার ও কোম্পানিগুলো যেসব সুযোগ-সুবিধাগুলো দিচ্ছে সেগুলোও এখন এমএফএস বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দিচ্ছে। যার কারণে অনেক মানুষ অনিচ্ছাসত্ত্বেও এসব পেমেন্ট সিস্টেমে ঢুকতে হচ্ছে।
শুধু অর্থ পাঠানোই নয়, অনেক নতুন নতুন সেবাও মিলছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান ও বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স) বিভিন্ন সেবা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় টাকা জমা পড়ে (ক্যাশ ইন) ২১ হাজার ৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর ১৭ হাজার ৬৮১ কোটি ৭০ লাখ টাকা উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়। এ মাসে কেনাকাটার বিল পরিশোধ হয় ২ হাজার ৯৫৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় টাকা জমা পড়ে (ক্যাশ ইন) ১২ হাজার ২৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর ১২ হাজার ২১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়। এ মাসে কেনাকাটার বিল পরিশোধ হয় মাত্র ৪৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
চলতি বছরের অক্টোবরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে ব্যক্তির হিসাব থেকে আরেক ব্যক্তির হিসাবে ১৯ হাজার ৭১০ কোটি ৪০ টাকা পাঠানো হয়। এ ছাড়া অক্টোবর মাসে কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হয় ২ হাজার ৩৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ হয় এক হাজার ৩৬২ কোটি ৮০ লাখ টাকার। আর মোবাইলে টকটাইম কেনা হয় ৬৬৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে ব্যক্তির হিসাব থেকে আরেক ব্যক্তির হিসাবে ৫ হাজার ৭৩ কোটি ৭০ টাকা পাঠানো হয়। একই সময় কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হয় ৬১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ হয় ২৯২ কোটি ৭০ লাখ টাকার। আর মোবাইলে টকটাইম কেনা হয় ৩৭৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাস তথা অক্টোবর পর্যন্ত দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক বেড়েছে ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৪৯ জন। গত জানুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ছিল মোট ১০ কোটি ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৮৩১ জন। আর অক্টোবর শেষে এসে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৮১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০ জন। অর্থাৎ দেশে সার্বিকভাবে মোবাইলে লেনদেন ও গ্রাহক দিনদিন বাড়ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়